দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আবার জনসংখ্যা বাড়লেও বিস্ময়করভাবে কমছে শ্রমশক্তি। যুব শ্রমশক্তি কমছে আশঙ্কাজনক হারে। এ ক্ষেত্রে নারীদের কাজে আগ্রহ কমছে পুরুষের চেয়ে তিন গুণের বেশি। সক্ষমতা থাকলেও কাজে আগ্রহ না থাকায় সংজ্ঞার মারপ্যাঁচে বিপুল সংখ্যক মানুষকে শ্রমশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না। তারা কাজও করছে না, আবার বেকার হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে না। তার পরও ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৬০ হাজারের মতো। বেড়েছে বেকারত্বের হারও। বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় শেষ প্রান্তিকে এসে বেকারত্বের হার বেড়েছে দশমিক ১৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ ও ২০২৩ সালের শ্রমশক্তি জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে এমন চিত্রই সামনে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে মোট শ্রমশক্তি (১৫ ও তদূর্ধ্ব বয়সী কর্মে নিয়োজিত ও বেকার) ছিল ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। এক বছরের ব্যবধানে দেশের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ লাখ বৃদ্ধি পেলেও ২০২৪ সালে শ্রমশক্তি কমে দাঁড়ায় ৭ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার। অর্থাৎ কাজ করার মতো মানুষ কমে যায় ১৭ লাখের বেশি। অন্যদিকে, ২০২৩ সালে শ্রমশক্তির বাইরে ছিল ৪ কোটি ৭১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। ২০২৪ সালে এসে শ্রমশক্তির বাইরে চলে যায় ৫ কোটি ৫০ হাজার মানুষ। অর্থাৎ নতুন করে শ্রমশক্তির বাইরে চলে গেছে প্রায় ২৯ লাখ মানুষ। সংজ্ঞা অনুযায়ী, ছাত্র, অসুস্থ, বয়স্ক, অক্ষম ও কাজ করতে অনিচ্ছুক ব্যক্তিদের শ্রমশক্তির বাইরের জনসংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাদের বেকারও মনে করা হয় না। আর শ্রমশক্তির বাইরে যাওয়া মানুষদের বড় অংশই নারী। ২০২৩ সালে ১ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার পুরুষ ও ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৪০ হাজার নারী শ্রমশক্তির বাইরে ছিল। ২০২৪ সালে এসে শ্রমশক্তির বাইরে থাকা পুরুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ কোটি ২০ লাখ ৪০ হাজার ও নারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার। বছরের ব্যবধানে ৫ লাখ ১০ হাজার পুরুষ ও ২৩ লাখ ৭০ হাজার নারী শ্রমশক্তির বাইরে চলে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টা এমন নয় যে, পুরুষদের চেয়ে নারীরা দ্রুত বুড়ো হয়ে যাওয়ায় শ্রমশক্তির বাইরে চলে যাচ্ছেন। মূলত, কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন নারীরা। আর বড় সংখ্যক নারী শ্রমশক্তির বাইরে চলে যাওয়ায় জরিপে শ্রমশক্তি কমে গেছে। এ ছাড়া ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দেশের উন্নয়নের মূল হাতিয়ার যুব শ্রমশক্তি (১৫-২৯ বছর বয়সি) কমে গেছে প্রায় ৪১ লাখ ৪০ হাজার। এদিকে একই সংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকলে শ্রমশক্তি কমলে বেকারের সংখ্যাও কমে। তবে এ ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে শ্রমশক্তিও কমেছে, অন্যদিকে বেকারও বেড়েছে। ২০২৩ সালে মোট বেকারের সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৬০ হাজার, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ লাখ ২০ হাজারে। বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয় ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের শ্রমশক্তির সঙ্গে এক বছরে বৃদ্ধি পাওয়া সাড়ে ১২ লাখ নতুন মুখ যোগ করলে ২০২৪ সালে শ্রমশক্তি দাঁড়ানোর কথা ৭ কোটি ৪৭ লাখের মতো। সেখানে কর্মে নিয়োজিত ৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার। সে ক্ষেত্রে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা দাঁড়াত প্রায় ৫৬ লাখ। এদিকে ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) এসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশে।
২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে কৃষি, শিল্প ও সেবা সব খাতেই কমেছে কর্মসংস্থান। ২০২৩ সালে দেশে কর্মে নিয়োজিত মোট জনগোষ্ঠী ছিল ৭ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার, যা ২০২৪ সালে কমে হয়েছে ৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার। ২০২৩ সালে কৃষি খাতে কর্মসংস্থান ছিল ৩ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার মানুষের, যা গত বছরে কমে হয়েছে ৩ কোটি ৮ লাখ ৭০ হাজার। ২০২৩ সালে শিল্প খাতে কর্মসংস্থান ছিল ১ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার, যা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ ১০ হাজারে। সেবা খাতে ২০২৩ সালে কর্মসংস্থান ছিল ২ কোটি ৭২ লাখ, ২০২৪ সালে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৬২ লাখ ৩০ হাজার।