জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ২০২১ সালে গ্রেপ্তার হন খুলনা বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) দপ্তরের স্টেনোগ্রাফার ফরিদ আহমেদ মোল্লা। এ ছাড়া পরিচালকের স্বাক্ষর জাল করে ২৪ কর্মচারীকে উচ্চতর পদে পদায়নের ভুয়া আদেশ প্রদানে ঘটনায় ২০২২ সালে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। গণ অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পদ পরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর তাকে খুলনা স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে শূন্যপদে বদলি করা হয়। কিন্তু মাত্র ১১ মাসের মধ্যে তিনি ফের খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরে ফেরত আসতে তোড়জোড় শুরু করেছেন। একইভাবে করোনা পরীক্ষার ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা আত্মসাৎ মামলায় খুলনা সাবেক সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদের বিরুদ্ধে দুদক আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর ২০২৩ সালে তাকে ওএসডি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু প্রভাব বিস্তার করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আদেশে গত এপ্রিলে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপপরিচালক পদে যোগ দিয়েছেন। ৬ আগস্ট একই হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মিজানুর রহমানকে রাজশাহীর নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়। তিনিও ডেপুটি সিভিল সার্জন পদে খুলনায় ফিরেছেন। এভাবে গত ছয় মাসে এক ডজনের বেশি বদলিকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারী ফিরেছেন খুলনার পুরাতন কর্মস্থলে। এ বিষয়ে সচেতন নাগরিকদের সংগঠন খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘স্বাস্থ্য দপ্তরে বিতর্কিতরা খুলনায় ফেরায় কর্মক্ষেত্রে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। তাদের সিন্ডিকেটের কারণে সরকারি হাসপাতালে প্যাথলজি বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা মেলে না, ব্যাঙের ছাতার মতো ক্লিনিক, প্যাথলজি গড়ে উঠেছে কিন্তু কোথাও স্বাস্থ্য দপ্তরের মনিটরিং নেই।’
জানা যায়, স্টেনোগ্রাফার ফরিদ আহমেদ মোল্লা টাকার বিনিময়ে সাবেক পরিচালক ডা. জসিম উদ্দিন হাওলাদারের স্বাক্ষর জাল করে ২৪ জন কর্মচারীকে বর্তমান পদ থেকে উচ্চতর পদে পদায়নের ভুয়া আদেশ জারি করেন। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্তে তাকে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী ‘অসদাচরণ ও দুর্নীতি’র দায়ে অভিযুক্ত করে। ২০২১ সালে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে দুদকের মামলায় ফরিদ আহমেদ মোল্লা ও তার স্ত্রী পলি আহমেদকে কারাগারে পাঠানো হয়। ১৪ জানুয়ারি বরখাস্ত করা হলেও বিধি পরিপন্থি খোরপোষ ভাতার পরিবর্তে পূর্ণ বেতনভাতা গ্রহণ করেন।
তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য দপ্তরে চাকরি দেওয়া ও কর্মস্থলে কোনো কর্মচারীর চাকরি মেয়াদ তিন বছর বা বেশি হলে বদলির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।
বিতর্কিত পুরোনো কর্মস্থলে ফেরা প্রসঙ্গে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের উপপরিচালক ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য দপ্তরের শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’