১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১২:২৯

'প্রত্যয় একটাই মানবিক পুলিশ হতে চাই'- সত্য হোক এ শপথ

হাসিনা আকতার নিগার

'প্রত্যয় একটাই মানবিক পুলিশ হতে চাই'- সত্য হোক এ শপথ

'প্রত্যয় একটাই  মানবিক পুলিশ হতে চাই' -  এ দীপ্ত শপথে ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। অসাধারণ এ শ্লোগানটি মনুষ্যত্ব,  দৃঢ়তা আর সাহসিকতার শপথের বাণী বলেই অনুভূত হয়। আর এমন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর নিয়ে সিএমপি সারাদেশে জনমুখী পুলিশ বাহিনী হিসেবেই সেবার প্রতীক হচ্ছে ক্রমশ। 

অপরাধ আর অপরাধীদের দমনের পাশাপাশি সিএমপি চট্টগ্রাম শহরের ১৬টি থানাতে জনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে সদা সচেষ্ট। সাধারণত মানুষ পুলিশের কাছে যেতে চায় না হয়রানি হবার কারণে। তার কারণ হলো থানাতে টাকা ছাড়া কাজ হয় না। আবার এ কথা একেবারে মিথ্যে নয়। ঘুষ দুর্নীতি এ দেশের সমাজে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। এ অবস্থায় পুলিশ বাহিনী শুদ্ধ- এটা বলা যৌক্তিক নয়। তবে সিএমপির মাননীয় কমিশনার মাহবুবর রহমান নিজের মেধা মনন চিন্তা ও প্রজ্ঞতা দিয়ে মানবিক পুলিশিং কার্যকর করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যা তার শ্লোগান থেকে উপলদ্ধি করা যায়। বলা হয়ে থাকে  হাল শক্ত হাতে ধরলেই তীরে পৌঁছাবেই তরী। সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান শহরের ১৬টি থানার পুলিশ বাহিনীর হাল সঠিকভাবে পরিচালনা করতে কোন ছাড় দিতে রাজি নয়। যা প্রতীয়মান হয় শহরের মানুষের পুলিশের প্রতি আস্থা দেখে। 

অন্যদিকে এখানকার পুলিশের আচরণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় নানা কর্মকাণ্ডে। জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে- পুলিশের এ মানবিকতা বোধ সমাজের জন্য কতটা প্রয়োজন তা বুঝার সক্ষমতা থাকা দরকার সাধারণ মানুষ ও পুলিশ বাহিনীর। পুলিশ সমাজের আলাদা কোন জীব নয়। এটা অন্য সব পেশার মত একটা পেশা। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধ দমন করতে গিয়ে এ বাহিনীকে কঠোর হতে হয়। আর এ কঠোরতার ছাপ সমাজের অন্য মানুষের কাছে নেতিবাচকভাবে প্রকাশ পায়। তাই এদের ভেতরের মানবিকতা বোধগুলো থাকে অদৃশ্যমান থাকে। আর সিএমপি পুলিশের মানবিক বোধকে আইনি গণ্ডির ভেতর থেকে মানবিক পুলিশিং দিয়ে দৃশ্যত করার চেষ্টা করছে। 

অনেক সময় গড়িয়ে গেলেও  বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোতে এখনো ব্রিটিশ আমলের কায়দা রয়ে গেছে। পুলিশ কেবল রাষ্ট্রযন্ত্রের আজ্ঞাবহ নয়। বর্তমান পুলিশকে কাজ করতে হয় জনগণের সাথে সম্পৃক্ত  হয়ে। আর সে কারণে সিএমপি কমিউনিটি পুলিশিং, স্কুল পুলিশিংকে সক্রিয় করতে কাজ করে যাচ্ছে।
 
সিএমপির কার্যক্রমের অনবদ্য সংযোজন হলো 'হ্যালো ওসি'। থানার ওসির কাছে যাওয়া সাধারন মানুষের কর্ম নয় - এমন ধারনাকে পাল্টে দিয়েছে সিএমপি। হ্যালো ওসির মাধ্যমে চট্রগ্রামের ওসিরা এখন নিজেরাই চলে যায় এলাকায়। জনগণের কাছ থেকেই জানে তাদের এলাকার অপরাধ কার্যক্র,    সন্ত্রাস, মাদক বা ব্যক্তিগত আইনী হয়রানির কথা। আর ব্যবস্থা নেন  এসব অন্যায়ের প্রতিকারের। 

থানার ওসিদের যে শুধু চট্রগ্রামবাসী কাছে পায় তা কিন্তু নয়। এসি, এডিসি, ডিসিরাও জনগণের সমস্যার সমাধান দিতে সক্রিয়। নানা কর্মসূচি নিয়ে তারা রাস্তা পাড়া মহল্লায় হাজির হন।

ডিজিটাল বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান সামাজিক মাধ্যমে জনগনকে আইনি সেবা দিতে খুলেছেন 'হ্যালো সিএমপি পুলিশ কমিশনার' পেইজ। যা ইতোমধ্য চট্রগ্রামের মানুষের কাছে সুপরিচিত হয়েছে ব্যাপকভাবে। তিনি এর মাধ্যমে রাত দিন যে কোন সময় সাড়া দেন।

বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর সীমাবদ্ধতা রয়েছে অনেক। অন্যদিকে দুর্নীতির অবাধ সুযোগ আছে এ পেশায়। অপরাধ ও অপরাধী, রাজনৈতিক ব্যক্তি ব্যবসায়ীরা এ বাহিনীকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করে থাকে। ফলশ্রুতিতে বিত্ত বিলাসী জীবনের মোহ বির্তকিত করছে পুলিশকে। আর রাতারাতি এমন পরিস্থিতিকে বদলে দেয়া সম্ভব নয়।

তবে চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সময়ের সাথে বিশ্বাস করে তাদের মানবিক পুলিশিং কার্যক্রমে বদলে যাবে জনগণ- পুলিশের সম্পর্ক। অপরাধী পুলিশকে ভয় পাবে আর সাধারণ মানুষ তাদের বন্ধু হবে - এটাই তাদের আগামী দিনের পাথেয়।    

লেখক: কলামিস্ট
                                                                                                                                            
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর