শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফেলে দেওয়া ফুল থেকে অর্গানিক পণ্য

ঝিকরগাছার গদখালী গ্রামে নারী উদ্যোক্তাদের ভাগ্যবদল

সাইফুল ইসলাম, যশোর

ফেলে দেওয়া ফুল থেকে অর্গানিক পণ্য

ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়েছেন রাবেয়া খাতুন। তিনি বলেন, আপাতত গোলাপ, গাঁদা ও রজনিগন্ধা ফুল থেকে তারা ২৫-৩০ রকমের পণ্য তৈরি করছেন। গোলাপের শুকনো পাপড়ির গুঁড়া থেকে তৈরি করছেন সাবান, ফেসপ্যাকসহ বিভিন্ন প্রসাধনী, আগরবাতি। গোলাপ, গাঁদার পাপড়ি জ্বাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রাকৃতিক রং, যা দিয়ে কাপড়ে নকশা করা হচ্ছে...

 

ফুলের রাজ্য হিসেবে খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীতে অবিক্রীত ফেলে দেওয়া ফুল দিয়ে নারীরা তৈরি করছেন অর্গানিক প্রসাধনীসহ বিভিন্ন পণ্য। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে অনলাইনেও। পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত গ্রামের নারী উদ্যোক্তারা। সংসারের দৈনন্দিন কাজ সেরে বাড়িতে বসেই এসব পণ্য তৈরি করে বাড়তি আয় করতে পারছেন তারা। যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, কাঁচা ফুল প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় এর বড় একটি অংশ ব্যবহার অনুপযোগী ও নষ্ট হয়ে যায়। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত চাহিদার দিক দিয়ে ফুলের যখন ভরা মৌসুম, তখন চাষিরা একসঙ্গে অনেক বেশি ফুল উৎপাদন করেন। ফলে দাম কমে যায়। এ সময় অনেক ফুল চাষি তাদের কষ্টে-ঘামে উৎপাদিত ফুল গরু দিয়ে খাইয়ে দেন অথবা ভাগাড়ে ফেলে দেন। করোনার মতো মহামারি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে প্রচুর ফুল নষ্ট হয়। সব মিলিয়ে গড়ে বছরে নষ্ট হয় ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার ফুল। আবদুর রহিম বলেন, এই ক্ষতি কমাতেই ফুল থেকে বিকল্প পণ্য তৈরির জন্য সরকারি সহায়তা চেয়েছিল সমিতি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্পের মাধ্যমে গদখালীর তিন নারীকে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে অন্ধ্র প্রদেশের ড. ওয়াইএসআর হর্টিকালচার বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায়। প্রশিক্ষণ শেষে ওই তিন নারী গদখালীতে ফিরে স্থানীয় আরও ২৭ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা গদখালীর পানিসারা গ্রামের গৃহবধূ নাসরিন নাহার আশা বলেন, সব মিলিয়ে গদখালী এলাকার ৩০ জন নারী এখন এ কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এসব পণ্য উৎপাদন করে নিজেরা যেমন ব্যবহার করছেন, তেমনি সেগুলো বিক্রি করে সংসারে সচ্ছলতাও আনছেন। রাবেয়া খাতুন নামে প্রশিক্ষণ নেওয়া আরেক নারী বলেন, রজনিগন্ধা ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি হচ্ছে সুগন্ধি তেল ও গোলাপজল। এসব কিছুই অর্গানিক। গোলাপের শুকনো পাপড়ি দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ওয়ালম্যাট, চুড়ি, কানের দুল, চাবির রিং, ফটোফ্রেম ও কলম তৈরি করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ নেওয়া হাড়িয়া গ্রামের গৃহবধূ সাজেদা বেগম বলেন, ফুল থেকে উৎপাদিত এসব পণ্য ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তারা বিক্রি করছেন। তবে সনাতন পদ্ধতিতে কাজ করায় দিন শেষে তাদের উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। কারখানা তৈরি করে এসব কাজ করতে পারলে আরও বড় পরিসরে এসব অর্গানিক পণ্য বাজারজাত করা সম্ভব।

সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, পরিত্যক্ত ফুলকে বিকল্প ব্যবহারের মাধ্যমে ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার নানান পণ্য তৈরি করা সম্ভব। সারা পৃথিবীতেই এখন অর্গানিক পণ্যের চাহিদা। কারখানা স্থাপনের জন্য সরকার সহযোগিতা করলে এসব পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোরের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, ফুল থেকে বিকল্প পণ্য তৈরির ব্যাপারে গদখালী এলাকার নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে, প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যশোরে উৎপাদিত সবজি বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতে রপ্তানিকারকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ফুলের বিকল্প পণ্য গুণগত মান বজায় রেখে আরও বেশি পরিমাণে উৎপাদন করা সম্ভব হলে আমরা সবজি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে ফুলের বিকল্প পণ্য উৎপাদকদের একটি সংযোগ সৃষ্টি করে দেব, যাতে তারা তাদের এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে পারেন।’

সর্বশেষ খবর