জলের সঙ্গে প্রেম জিতনের। জল আর জিতন একাকার। জলের সঙ্গে প্রেমের নেশাটা তার শৈশবের। এই পঁয়ষট্টি বছর বয়সেও নেশাটা থেকে গেছে। সাঁতার না কেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানির ওপর ভেসে বেড়ান তিনি। এমনকি ভাসতে ভাসতে ঘুমিয়েও পড়েন। প্রথম দেখাতে যে কারও মনে হবে একটি লাশ ভেসে যাচ্ছে। স্থানীয়রা তাকে ডাকেন ‘জলমানব’ বলে। জলমানব খ্যাত ব্যক্তিটি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার রায়টুটি ইউনিয়নের মিল্কিপাড়া গ্রামের কৃষক জিতন মিয়া।
হাওরের কোল ঘেঁষে বেড়ে উঠেছেন জিতন। শৈশবে বাবার কাছে সাঁতার শিখতে গিয়ে অনেকবার নাকানিচুবানি খেয়েছেন। তখন বেশিরভাগ সময় পানিতেই থাকতেন। এভাবেই সাঁতার শেখা হয়ে ওঠে তার। একপর্যায়ে রপ্ত করেন সাঁতার না কেটে পানিতে ভেসে থাকার কৌশল। পানির স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যেত এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। ভাসতে ভাসতে কখনো ঘুমিয়ে পড়তেন। এ অবস্থায় কেউ কেউ মনে করতেন এটি ভাসমান লাশ। কেউ ঢিল ছুড়ে মারত। কেউ কাঠি দিয়ে গুঁতো দিত। ভাসমান শরীরের ওপর কখনো বা উড়ে এসে বসত পাখি। তখন হাত-পা নেড়ে বেঁচে থাকার জানান দিতেন। এভাবেই স্থানীয়দের কাছে জিতন মিয়া হয়ে ওঠেন ‘জলমানব’।
সাত বছর বয়সেই সাঁতার না কেটে পানিতে ভেসে থাকার কৌশলটা রপ্ত করেন তিনি। জিতন জানান, পানির সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতেই একপর্যায়ে পানির সঙ্গে একটা সম্পর্ক হয়ে ওঠে। প্রথম প্রথম বিষয়টি কেউ জানত না। দীর্ঘ সময় পানিতে ভেসে থাকায় ধীরে ধীরে জানাজানি হয়। বিয়ের দুই দিন পর এক দিন রাতের বেলায় গরমের কারণে স্ত্রীকে বলে পাশের বিলে চলে যান তিনি। সেখানে পানিতে কিছুক্ষণ ভেসে থেকে ঘুমিয়ে শরীর শীতল করে বাড়ি ফিরেন। সেই থেকে তার স্ত্রীও বিষয়টি জেনে যান।
জিতন মিয়ার এমন কর্মকাণ্ডের খবর নিজ এলাকা ছাড়িয়ে আশপাশেও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই তাকে দেখতে ছুটে আসেন। কেউ আবদার করলে ফিরিয়ে দেন না, নেমে পড়েন পানিতে। অন্য কোনো স্থানে বেড়াতে গেলেও নিজের কসরতের স্বাক্ষর রেখে আসেন। জিতন এখন এলাকার ভাইরাল ব্যক্তি। পানিতে ভেসে থাকা তার ছবি অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এতে নিজেও আনন্দ অনুভব করেন জিতন।
স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে জিতনের সংসার। বৃদ্ধ বয়সেও পানিতে ভেসে থাকতে নেই তার কোনো ক্লান্তি। গরমের সময় টানা ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা পানিতে ভেসে থাকতে পারেন তিনি। দীর্ঘ সময় পানিতে থাকায় ঘরে এসে স্ত্রী-সন্তানদের গালমন্দও শুনতে হয় তাকে। কেউ কেউ তাকে পাগল বলেও ডাকে। কিন্তু এসবকে পাত্তা দেন না তিনি। এভাবে মানুষকে আনন্দ দিতে পারায় হৃদয়ে শান্তি অনুভব করেন জিতন।