একসময় ব্যাংকিং মানেই ছিল শাখায় গিয়ে লাইনে দাঁড়ানো, ফর্ম পূরণ করা আর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা। কিন্তু ডিজিটাল যুগে বদলে গেছে সেই ধারা। এখন আর ব্যাংক মানে শুধু শাখার চার দেয়াল নয়, ব্যাংক চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। এ বিপ্লবের নেতৃত্বে রয়েছে সিটি ব্যাংকের সিটিটাচ ইন্টারনেট ব্যাংকিং অ্যাপ। বাংলাদেশে ৯ লাখের বেশি গ্রাহকের আস্থার নাম সিটিটাচ। প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ লেনদেন সম্পন্ন হয় এ অ্যাপের মাধ্যমে, যার পরিমাণ ৪০০ কোটির বেশি টাকা। লেনদেনের এ পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে ডিজিটাল ব্যাংকিং এখন শুধু শহুরে বিলাসিতা নয়, বরং লাখো মানুষের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয়তা।
টাকা পাঠানো এখন হাতের মুঠোয় : খুলনার নাবিলা রাজশাহীতে পড়ুয়া ছোট ভাইকে টাকা পাঠাতে চাইলে বা হঠাৎ ড্রাইভারের পরিবারের জন্য গ্রামে টাকা পাঠানোর দরকার হলে কয়েক সেকেন্ডেই সমাধান হয়ে যায় সিটিটাচে। সহজ ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে টাকা পৌঁছে যায় সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।
আবার মাত্র কয়েকটি ট্যাপে বিকাশে বা দেশের আরও ৯টি মোবাইল ওয়ালেটে ট্রান্সফার করা যায় টাকা।
বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন), ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) আর রিয়েল টাইম গ্রোস সেটেলমেন্টের (আরটিজিএস) মতো আধুনিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক থাকায় দেশের যে কোনো ব্যাংকে টাকা পাঠানো এখন নির্বিঘ্ন ও নির্ভরযোগ্য।
প্রতিদিনের বিল পরিশোধের ঝামেলা শেষ : বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ইন্টারনেট কিংবা কেবল টিভির বিল যা-ই হোক, সময়মতো পরিশোধ করতে আর লাইনে দাঁড়াতে হয় না। সিটিটাচে রয়েছে ৪০টির বেশি বিল পেমেন্ট অপশন। টিউশন ফি, ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়াম, ক্লাব ফি কিংবা ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিমের ফি- সবই এখন পরিশোধ করা যায় কয়েক মুহূর্তে।
প্রথম থেকে অগ্রগামী সিটি ব্যাংক : ২০১৩ সালে সিটি ব্যাংকই নিয়ে আসে বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ সিটিটাচ। তার পর থেকে একের পর এক উদ্ভাবন করেছে তারা।
ট্যাপ অ্যান্ড পে : দেশের প্রথম মোবাইল কনট্যাক্টলেস পেমেন্ট সেবা। এনএফসি সমর্থিত ফোন হয়ে ওঠে পেমেন্ট কার্ড, কোনো সোয়াইপ বা পিন ছাড়াই এক ট্যাপেই পেমেন্ট।
ভার্চুয়াল কার্ড : অনলাইন কেনাকাটার জন্য মুহূর্তেই তৈরি করা যায়, থাকে আলাদা নম্বর, সিভিভি আর মেয়াদ। ব্যবহার হয় আসল কার্ডের মতো, তবে আরও নিরাপদে।
বাংলা কিউআর : শহর থেকে গ্রাম, বড় মল থেকে রাস্তার পাশের দোকান-সবখানেই কিউআর কোড স্ক্যান করলে পেমেন্ট সম্পন্ন। আজ দেশের সবচেয়ে বড় বাংলা কিউআর মার্চেন্ট নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে সিটি ব্যাংক।
কাগজপত্রের ব্যাংকিং এখন ইতিহাস : ঢাকার ব্যস্ত চাকরিজীবী সাকিব অফিস শেষে হঠাৎ মনে করলেন ট্যাক্স জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়ে আসছে। আগে যেটি ছিল দীর্ঘ লাইন, ফর্ম পূরণ আর ঝামেলা; সেটিই এখন সমাধান কয়েক মিনিটে।
সিটিটাচে লগইন করে তিনি ডাউনলোড করলেন ট্যাক্স সার্টিফিকেট ও অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট।
অনলাইনেই ট্যাক্স জমা দিলেন, এমনকি ট্যাক্স রিটার্নের প্রমাণপত্রও জমা দিলেন অ্যাপ থেকেই।
এমন অভিজ্ঞতা সাকিবের একার নয়। প্রতি মাসে লাখো গ্রাহক এখন অনলাইনে পাচ্ছেন ঝামেলাহীন এ ব্যাংকিংসুবিধা।
সব আর্থিক সমাধান এক অ্যাপে : সিটিটাচ শুধু টাকা লেনদেন বা বিল পরিশোধের অ্যাপ নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক।
বড় কেনাকাটার পর খরচ ভাগ করে নেওয়া যায় সহজ ইএমআই কনভার্সনে। বন্ধুদের সঙ্গে ভ্রমণের জন্য খোলা যায় ডিপিএস বা ফিক্সড ডিপোজিট। জরুরি প্রয়োজনে নেওয়া যায় কুইক লোন। অনলাইনে জমা দেওয়া যায় এফডি/ডিপিএস বা সঞ্চয়পত্র ভাঙার আবেদন। সবকিছুই হচ্ছে নিরাপদে বায়োমেট্রিক লগইন, ওটিপি যাচাই এবং রিয়েল-টাইম এসএমএস ও ইমেইল অ্যালার্টের মাধ্যমে।
সিটি ব্যাংকের আগামীর ভিশন : শুধু বর্তমানেই নয়, ভবিষ্যতের জন্যও সিটি ব্যাংকের লক্ষ্য স্পষ্ট। তারা গড়ে তুলছে এমন এক ব্যাংকিংব্যবস্থা যা হবে-
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত, তথ্যভিত্তিক এবং হাইপার-পারসোনালাইজড। যেখানে প্রত্যেক গ্রাহকের একক প্রয়োজন বুঝে তাৎক্ষণিক সমাধান দেবে সিটিটাচ। এক কথায়, ভবিষ্যতের ব্যাংকিং হবে পুরোপুরি ডিজিটাল। গ্রাহককে একবারও শাখায় যেতে হবে না।
জীবনধারার অবিচ্ছেদ্য অংশ সিটিটাচ : নিত্যদিনের কেনাকাটা থেকে শুরু করে মাসিক সঞ্চয়, আজকের জীবনে সিটিটাচ মিশে গেছে অবিচ্ছেদ্যভাবে। সময় যেখানে সবচেয়ে মূল্যবান, সেখানে প্রতিটি সহজ ট্যাপের মধ্য দিয়ে সিটিটাচ ফিরিয়ে দিচ্ছে সেই মূল্যবান সময়। গ্রাহক নাবিলা, সাকিব কিংবা হাজারো সাধারণ মানুষ সবার হাতের মুঠোয় আজ আধুনিক ব্যাংকিং। শহর থেকে গ্রাম, অফিস থেকে ঘর-সবখানেই সিটিটাচ বদলে দিচ্ছে মানুষের জীবনধারা।