মঙ্গলবার সকালে উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় 'মোরা', তছনছ করে দিয়ে গেছে ঘর-বাড়ি। আর সন্ধ্যায় সাকিবরা যখন ভারতের বিপক্ষে ব্যাট করতে নামল তখন আরেক বোলিং ঘূর্ণিঝড় দেখেছে ক্রিকেট সমর্থকরা।
বাংলাদেশের ব্যাটিং স্তম্ভকে রীতিমতো লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে ভারতে পেস আক্রমণ। উমেশ যাদব, ভুবনেশ্বর কুমার ও মোহাম্মদ শামির বোলিং তোপে টাইগারদের ব্যাট হাতে আসা যাওয়ার মিছিল দেখতে হয়েছে দর্শকদের।
শুরুটা একটা সংশয়পূর্ণ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে। উমেশ যাদবের বলে সৌম্য উইকেট কিপার দীনেশ কার্তিকের গ্লাভসে বন্দি হলেন। এরপর উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার মিছিলে একে একে শামিল হয়েছেন টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডারের সবাই। সাব্বির বোল্ড হলেন ওই উমেশ যাদবের বলেই।
ইমরুল কায়েস মিড অনে যাদবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন সাজঘরে। ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন উইকেটে ধুঁকছে তখন ক্রিজে সাকিব আল হাসান।
কিন্তু সাকিব এসে কোথায় একটু দলের বিপদের মুহূর্তে হাল ধরবেন; তা না তিনিও মারকুটে হতে গিয়ে দায়িত্বহীনভাবে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেন। সাকিবের পর কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদকেও ফেরালেন ভুবনেশ্বর কুমার। তিনিও ডাক মারলেন, আউট সাইট এজে কার্তিকে গ্লাভসবন্দি। একপাশে মুশফিকুর রহিম দর্শক হয়ে আসা যাওয়ার মিছিলটা প্রত্যক্ষ করলেন।
দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে নিজেকে মেলে ধরতে পারলেন না মোসাদ্দেকও। তিনিও ডাক মেরেছেন। বাংলাদেশে তিন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান সাব্বির, রিয়াদ ও মোসাদ্দেক এদিন ডাক মেরেছেন। সাকিব ও ইমরুলের স্কোর ৭, আর সৌম্য ২ রান। প্রথম ৬ জনের একজনও দুই অঙ্কের ঘর পেরোতে পারেন নি। ২২ রানেই ৬ উইকেটের পতন ঘটেছে বাংলাদেশ শিবিরে।
তবে মুশফিক দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করলেও ১৩ রানের মাথায় তিনিও পরাস্ত হলেন। এবার ঘাতক মোহাম্মদ শামি। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে জাদেজার হাতে তালুবন্দি মুশফিক।
ততক্ষণে বাংলাদেশে ৭ উইকেটের পতন ঘটেছে। নিশ্চিত হয়ে গেছে টাইগারদে খাঁচায় বন্দি হওয়ার বিষয়টিও। স্কোর ১২.৪ ওভারে ৪৭ রানে ৭ উইকেট। আর এমন উইকেটেই ৭ উইকেটে ৩২৪ রান সংগ্রহ করেছে ভারত। সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি চিত্র দেখতে হয়েছে ক্রীড়ামোদিদের।
শেষ পর্যন্ত মাত্র ৮৪ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ভারতের বোলিং তোপের কাছে একমাত্র মিরাজ ও সানজামুল ছাড়া কেউই দাঁড়াতে পারেন নি। মিরাজ করেছেন ২৪ রান, আর সানজামুল ১৮ রান।
এছাড়া বাংলাদেশের হয়ে মুশফিক ছাড়া আর কেউই দুই অঙ্কের ঘর পেরোতে পারেন নি। ভারতের পক্ষে ভুবনেশ্বর কুমার ও উমেশ যাদব ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন। অার শামি, হার্দিক পান্ডিয়া, অশ্বিন ও বুমরাহ ১টি করে উইকেট পেয়েছেন।
এর আগে দিনের শুরুতে নিজেদের শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারতের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নামে বাংলাদেশ।
ব্যাটিংয়ে নেমে পরপর দুই উইকেট হারিয়ে বড় ধাক্কা খায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। একের পর এক ভারত শিবিরে শুরুতে উপর্যুপরি আঘাত হানেন টাইগার বোলাররা। শুরুতেই ভারতের দুই উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজ ও রুবেল হোসেন। দলীয় ৩ রানে ভারতের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মাকে ফেরান রুবেল। তারপর সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই অজিঙ্কা রাহানেকে ফেরান মুস্তাফিজ।
তারপর শুরুর ধাক্কা সামলে বড় জুটি উপহার দেন শিখর ধাওয়ান ও দীনেশ কার্তিক। কিন্তু সানজামুলের জোড়া আঘাতে জুটি ভাঙে ভারতের। সানজামুলের বলে মিডউইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে তালুবন্দি হন শিখর ধাওয়ান। কিছুক্ষণ পরে কেদার যাদবকেও নিজের শিকারে পরিণত করেন সানজামুল ইসলাম। সানজামুলের জোড়া আঘাতে ভারতের দুই উইকেটের পতন ঘটলেও রানের চাকা তরতর করে এগিয়ে চলে কোহলিদের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ডাবলিনে প্রথম অভিষেক হয় রাজশাহীর ২৭ বছর বয়সী এ ক্রিকেটারের।
তবে দীনেশ কার্তিক অনবদ্য ৯৪ রানের ইনিংস খেলে অবসরে যান। ক্রিজে নামেন আরেক মারকুটে ব্যাটসম্যান হার্দিক পাণ্ডিয়া। মাত্র ৫৪ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছয়ের মারে তুলে নেন অনবদ্য ৮০ রান। তাকে বেশ ভাল সঙ্গ দেন রবীন্দ জাদেজা। তবে শেষ দিকে ভারত শিবিরে আবার আঘাত হানেন টাইগার পেসার রুবেল হোসেন রুবেল তুলে নেন জাদেজা ও অশ্বিনের উইকেট।
বিডি প্রতিদিন/ ৩০ মে, ২০১৭/ ই জাহান