আগের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি উপহার দেওয়া সিকান্দার রাজার ব্যাট হাসল এদিনও। তার ও রায়ান বার্লের ফিফটিতে লড়াই করার মতো সংগ্রহ গড়ল জিম্বাবুয়ে। পরে বল হাতেও আলো ছড়ালেন রাজা। তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দারুণ এক জয় তুলে নিল স্বাগতিকরা।
হারারে স্পোর্টস ক্লাবে শনিবার (২৪ জুন) ৩৫ রানে জিতেছে জিম্বাবুয়ে। ২৬৮ রান তাড়ায় ২৩৩ থমকে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের বিপক্ষে সবশেষ তিন ওয়ানডেতে দ্বিতীয় জয়ে ২০২৩ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে অব্যাহত থাকল জিম্বাবুয়ের জয়যাত্রা। টানা দুই জয়ের পর হারের তেতো স্বাদ পেল ক্যারিবিয়ানরা।
জিম্বাবুয়ের জয়ের নায়ক রাজা ২ ছক্কা ও ৬ চারে খেলেন ৬৮ রানের ইনিংস। পরে বোলিংয়ে ৩৬ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়ে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। গত মঙ্গলবার ডাচদের সঙ্গে সফল রান তাড়ায় জিম্বাবুয়ের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরিতে ১০২ রান করে ম্যাচ সেরা হন তিনি। রাজার সঙ্গে এবার গুরুত্বপূর্ণ ৮৭ রানের জুটি গড়ার পথে ১ ছক্কা ও ৫ চারে ঠিক ৫০ রান করেন বার্ল।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সাবধানী শুরু করেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার জয়লর্ড গাম্বি ও ক্রেইগ আরভিন। তাদের উদ্বোধনী জুটিতে পাওয়ার প্লেতে আসে ৩৭ রান। সবশেষ ১০ ওয়ানডেতে প্রথমবার পাওয়ার প্লেতে উইকেট নিতে ব্যর্থ হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পঞ্চদশ ওভারে ৫৫ রানে জিম্বাবুয়ের শুরুর জুটি ভাঙতে পারত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু ২৫ রানে থাকা আরভিনের সহজ ক্যাচ ছাড়েন মিড-অন ফিল্ডার রভম্যান পাওয়েল। পরের ওভারে গাম্বিকে (২৬) ফিরিয়ে ৬৩ রানের জুটি ভাঙেন কিমো পল।
ওয়েসলি মাধেভেরেকে টিকতে দেননি আকিল হোসেন। কিছুক্ষণ পর রোস্টন চেইসকে রিভার্স সুইপ করে শর্ট থার্ডম্যানে ধরা পড়েন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক আরভিন (৭ চারে ৪৭)। রাজাকে এবার ১ রানেই ফেরাতে পারত ক্যারিবিয়ানরা। কিন্তু আলজারি জোসেফের বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ নিতে পারেননি জেসন হোল্ডার। জীবন পাওয়া রাজাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি অভিজ্ঞ শন উইলিয়ামস (২৩)। রায়ান বার্লকে নিয়ে দলকে টানেন রাজা। তাদের জুটিতে ১৯৯ রানে পৌঁছে যায় স্বাগতিকরা।
১ ছক্কা ও ৫ চারে ৫০ রান করে বিদায় নেন বার্ল। কিন্তু তার এলবিডব্লিউ নিয়ে আছে বিতর্ক। আকিলের ডেলিভারিটি পড়ে লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে। এই টুর্নামেন্টে আইসিসি রিভিউ না রাখায় হতাশ হয়েই ফিরতে হয় বার্লকে। ৪৮ বলে ফিফটি করা রাজাকে ফেরান কাইল মেয়ার্স। ঝড় তোলার মঞ্চ তৈরি থাকলেও জিম্বাবুয়ের পরের ব্যাটসম্যানরা করতে পারেননি তেমন কিছু। ৪১ রানে শেষ পাঁচ উইকেট হারায় তারা।
রান তাড়ায় ব্র্যান্ডন কিং ও মেয়ার্সের শুরুর জুটিতে ৪৩ রান পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাওয়ার প্লেতেই কিং ও জনসন চার্লসকে বিদায় করে দেয় জিম্বাবুয়ে। এরপর শেই হোপ ও মেয়ার্সের ব্যাটে ইনিংসে সবচেয়ে বড় ৬৪ রানের জুটি পায় ক্যারিবিয়ানরা। ১ ছক্কা ও ৮ চারে ৫৬ রান করা মেয়ার্সকে ফিরিয়ে তাদের প্রতিরোধ ভাঙেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। আগের ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক হোপ ও নিকোলাস পুরান এদিন খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। ৩ চারে ৩০ রান করা হোপকে বোল্ড করে দেন রাজা। রিচার্ড এনগারাভার শিকার পুরান (৩৪)।
এরপর আসা-যাওয়ার মাঝে ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরের ব্যাটসম্যানরা। অনেকটা সময় লড়াই চালিয়ে ৩ চারে ৪৪ রান করেন চেইস। বাকিদের ব্যর্থতায় আড়াইশ রানও করতে পারেনি তারা। ‘এ’ গ্রুপে টানা ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে শীর্ষে জিম্বাবুয়ে। নেদারল্যান্ডস ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পয়েন্ট সমান ৪ হলেও রানরেটে এগিয়ে থেকে দুইয়ে ডাচরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ৪৯.৫ ওভারে ২৬৮ (গাম্বি ২৬, আরভিন ৪৭, মাধেভেরে ২, উইলিয়ামস ২৩, রাজা ৬৮, বার্ল ৫০, মাদান্ডে ৫, মাসাকাদজা ৬, এনগারাভা ৪, মুজারাবানি ১১*, চাতারা ৮; হোল্ডার ৯.৫-২-৪৬-০, জোসেফ ১০-২-৪২-২, মেয়ার্স ৮-০-৪২-১, পল ১০-০-৬১-৩, আকিল ৮-০-৪৫-২, চেইস ৪-০-২৭-১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৪.৪ ওভারে ২৩৩ (কিং ২০, মেয়ার্স ৫৬, চার্লস ১, হোপ ৩০, পুরান ৩৪, চেইস ৪৪, পাওয়েল ১, হোল্ডার ১৯, পল ১, আকিল ৩*, জোসেফ ৩; মাসাকাদজা ৭-০-৩৯-১, চাতারা ৯.৪-০-৫২-৩, মুজারাবানি ৭-১-৩৩-২, এনগারাভা ৬-২-২৫-২, মাধেভেরে ২-০-১৪-০, উইলিয়ামস ২-০-১৪-০, রাজা ৮-০-৩৬-২, বার্ল ৩-০-১৫-০)
ফল: জিম্বাবুয়ে ৩৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সিকান্দার রাজা
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ
