► গরম কিংবা শীতের পোশাক নয়, এ সময়ের পোশাক হওয়া চাই এই দুইয়ের মাঝামাঝি। আর সাজটাও তারই সঙ্গে মানিয়ে। পাশাপাশি ভালো লাগা আর আধুনিকতাও থাকতে হবে। তবেই মিলবে স্বাচ্ছন্দ্যময় লুক...
► মেকআপের প্রথম শর্ত হলো বেস হতে হবে একেবারেই হালকা। ফাউন্ডেশন করার সময় ফাঁক দিয়ে করা মেকআপই যেন বেশি ন্যাচারাল দেখাবে।
ফ্যাশন সব সময় বদলায় কিন্তু কিছু স্টাইল থেকে যায় চিরন্তন। আমাদের সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যবাহী সাজ তেমনি এক ধারা; যা যুগের পর যুগ ধরে আমাদের আভিজাত্য ও নান্দনিকতার প্রতিচ্ছবি হয়ে আছে। তবে এখনকার মেকআপে এসেছে আধুনিকতার এক নতুন ছোঁয়া, যা চিরায়ত সাজকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এই ফিউশন শুধু পুরোনোকে ধরে রাখছে না, বরং নতুন প্রজন্মের রুচির সঙ্গে তাকে মানানসই করে তুলছে।
একসময় ঐতিহ্যবাহী সাজ বলতে বোঝাত কেবলই ভারী মেকআপ; যা ত্বকের স্বাভাবিকতাকে ঢেকে দিত। এখন সেই ধারণা বদলেছে। মেকআপের মূল লক্ষ্য হলো ত্বকের নিজস্ব উজ্জ্বলতাকে ফুটিয়ে তোলা। তাই ফাউন্ডেশন বা বেজ মেকআপ যতটা সম্ভব হালকা রাখা হয়। ভারী কভারেজের বদলে বেছে নেওয়া হয় বিবি বা সিসি ক্রিম কিংবা লাইট-টু-মিডিয়াম কভারেজ ফাউন্ডেশন। এতে ত্বকের ভিতরের ঔজ্জ্বল্য বজায় থাকে। ত্বকের দাগ বা চোখের নিচের কালো দাগ ঢাকার জন্য কনসিলার ব্যবহার করা হয়, যা মেকআপকে অতিরিক্ত ভারী হতে দেয় না। ফিনিশিংয়ের জন্য হালকা সেটিং পাউডার ব্যবহার করা হয়; যা ত্বককে মসৃণ ও প্রাকৃতিক দেখায়।
চোখের সাজে একসময় শুধু কালো আইলাইনার ও মাসকারার ব্যবহার প্রচলিত ছিল। এখন তাতে এসেছে ভিন্নতা। ট্র্যাডিশনাল সাজের সঙ্গে উইংড আইলাইনার বা স্মোকি আইজের ব্যবহার খুব জনপ্রিয় হয়েছে। পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে আইশ্যাডো ব্যবহার করা হয়, যা চোখে ভিন্নমাত্রা যোগ করে। চোখের নিচের অংশে হালকা শিমার বা ব্রোঞ্জ শেডের আইশ্যাডো ব্যবহার করে চোখের সাজকে আরও আকর্ষণীয় করা যায়। ঘন চোখের পাপড়ির জন্য এক কোট মাসকারা যথেষ্ট। তবে চাইলে ফলস ল্যাশও ব্যবহার করা যায়; যা চোখকে আরও বড় ও সুন্দর দেখায়।
ঐতিহ্যবাহী সাজে সাধারণত গাঢ় লাল, মেরুন বা গোলাপি রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করা হতো। এই ক্ল্যাসিক রংগুলো আজও জনপ্রিয়। তবে এখন এই লিপস্টিকগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ম্যাট, সাটিন বা গ্লসি ফিনিশ। এর বাইরেও এখনকার মেকআপে ব্রাউন, নিউড বা পিচ শেডের লিপস্টিকও ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি সাজে এনেছে এক ধরনের সূক্ষ্ম আধুনিকতা। যদি চোখের সাজ হালকা হয়, তবে ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক ব্যবহার করা যেতে পারে, যা আপনার সাজে আভিজাত্য যোগ করবে।
আগের দিনের মেকআপে হাইলাইটার বা কন্টুরিংয়ের চল ছিল না। কিন্তু এখন মেকআপকে আরও প্রাণবন্ত করতে হাইলাইটার ও ব্লাশ ব্যবহার করা হয়। গালে, নাকের ওপর এবং কপালে হালকাভাবে ব্লাশ ব্যবহার করা হয়; যা ত্বককে সতেজ দেখায়। একই সঙ্গে হাইলাইটার ব্যবহার করা হয় গালের উঁচু অংশ, নাকের ডগা এবং ভ্রুর ঠিক নিচে; যা মুখে এক দারুণ ঔজ্জ্বল্য যোগ করে। এটি পুরো সাজে আনে আধুনিকতার ছোঁয়া।
ট্র্যাডিশনাল মেকআপের আধুনিক ছোঁয়ায় চুল বাঁধার ক্ষেত্রেও এসেছে ভিন্নতা। একসময় ভারী খোঁপা বা বিনুনি প্রচলিত ছিল। এখন সেই খোঁপার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফুলের ব্যবহার, যা সাজে এনেছে এক স্নিগ্ধতা। এ ছাড়া খোলা চুল বা হালকা কার্ল করে তাতে ফুলের অনুষঙ্গ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ঐতিহ্যবাহী গয়নার সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যায়। গলায় ভারী গয়না পরলে কানের দুল হালকা রাখা যেতে পারে, যা সাজে আনে ভারসাম্য।
উৎসব কিংবা পারিবারিক অনুষ্ঠানে সাজের পূর্ণতা আসে যখন মেকআপে ঐতিহ্য ও আধুনিকতা একসঙ্গে মেলে। পাশাপাশি পোশাকের সঙ্গে মানানসই নিখুঁত পরিকল্পনা করাও প্রয়োজন।
► বেস মেকআপ : ত্বক প্রস্তুতের মাধ্যমে মেকআপ শুরু করুন। ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজ করার পর লাইটওয়েট ফাউন্ডেশন বা বিবি ক্রিম বেছে নিন; যা স্কিনটোন সমান করবে, ভারী লাগবে না। হালকা কনসিলার দিয়ে ডার্ক সার্কেল ঢেকে দিন।
► চোখের সাজ : চোখের মেকআপে চাই সূক্ষ্ম সৌন্দর্য। সফট ব্রাউন বা ব্রোঞ্জ শেডের আইশ্যাডো ব্যবহার করুন। হালকা শিমার লাগালে উৎসবের আভা ফুটে উঠবে। পাতলা আইলাইনার দিয়ে চোখের আকার ডিফাইন করুন এবং মাসকারা ব্যবহার করে ল্যাশকে প্রাকৃতিকভাবে লম্বা দেখান।
► লিপস্টিক : উৎসবের জন্য লিপস্টিক বাছাই করুন যা পোশাকের সঙ্গে মানানসই। গাঢ় লাল, বারগান্ডি কিংবা ন্যুড শেড- সবই মানাবে, তবে পোশাকের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখুন।
► হাইলাইটার ও ব্লাশ : গালবোনে পিচ বা রোজ টোনের ব্লাশ লাগান। হাইলাইটার ব্যবহার করুন কপালের মাঝখান, নাকের ব্রিজ এবং গালবোনে। এতে মুখশ্রীতে আসবে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা।
► চুলের স্টাইল ও অ্যাক্সেসরিজ : ট্র্যাডিশনাল পোশাকের সঙ্গে মানানসই স্নিগ্ধ চুলের স্টাইল বেছে নিন। খোলা চুলের সঙ্গে হালকা কার্ল দিতে পারেন। চাইলে লো পনিটেল বা বানও করা যেতে পারে। গয়নার ক্ষেত্রে, মেকআপ ও পোশাকের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অতিরিক্ত ভারী কিছু না নেওয়াই ভালো। ছোট আংটি বা স্নিগ্ধ কানের দুল যথেষ্ট।
ঐতিহ্যবাহী সাজকে আধুনিক রূপ দেওয়ার এই কৌশলগুলো প্রমাণ করে, পুরোনো আর নতুনকে মিলিয়ে সৃষ্টি করা যায় এক অনন্য সৌন্দর্য।