চট্টগ্রামে চিহ্নিত অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১১টি পাহাড়ে প্রতি বছরই প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু সারা বছর এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ থাকে না প্রশাসনের। কেবল বর্ষা এলেই শুরু হয় তোড়জোড়। চলে উচ্ছেদ, মাইকিং, প্রশাসনিক বৈঠকসহ নানা উদ্যোগ। পক্ষান্তরে পাহাড়ধস প্রতিরোধে তদন্ত কমিটি হয়, কমিটি সুপারিশ প্রণয়ন করে, এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়, কিন্তু কোনো কিছুই আলোর মুখ দেখে না। ২০০৭ সালে পাহাড়ধসের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বাধীন কমিটি ২৮টি কারণ নির্ধারণ করে ৩৬টি সুপারিশ প্রণয়ন করে। এসব সুপারিশও ফাইলবন্দী। সর্বশেষ গতকাল সকাল থেকে অতিবর্ষণে চট্টগ্রাম জেলায় ২৫ জনের মৃত্যু হয়। এরপর জেলা প্রশাসনের নির্দেশে দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে মতিঝরনা ও এ কে খান এবং হাবিবুল হাসানের নেতৃত্বে বায়েজিদ বোস্তামীর রৌফাবাদ এলাকার মিয়ার পাহাড়ে অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে দুই এলাকা থেকে ২০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, ‘মতিঝরনা এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরতদের সরে যেতে মাইকিং করেছি। না সরায় গতকাল সকালে অভিযান চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা শতাধিক পরিবারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ অন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুল হাসান বলেন, ‘আমরা অভিযান চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরত প্রায় ৮০টি পরিবারকে সরিয়ে দিয়েছি। তারা তাদের বাসায় তালা লাগিয়ে সমতল এলাকায় বসবাসরত তাদের স্বজনদের বাসায় চলে গেছেন।’ অভিযোগ আছে, পাহাড়ের মালিকরাই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে অবৈধ উচ্ছেদে কোনো উদ্যোগ নেন না। চট্টগ্রামে সরকারি ছয় সংস্থার মালিকানাধীন সাতটি পাহাড় আছে। এসব পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। অবৈধভাবে দখলে রেখে সংঘবদ্ধ কয়েকটি চক্র এসব পাহাড় থেকে ভাড়ার নামে প্রতি মাসে আয়ও করছে। কিন্তু এসব পাহাড়ের মালিকরাই অবৈধ স্থাপনা নিয়ে উদাসীন। তত্ত্বাবধানকারী সরকারি ছয় সংস্থাই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ আছে। সরকারি সংস্থাগুলোর নীরবতার পরিপ্রেক্ষিতে ছয় সংস্থাকে নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে পাহাড়গুলো থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সরকারি সংস্থাগুলো হলো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সিডিএ, রেলওয়ে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব আবদুল জলিল বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে দুই মাস ধরে উচ্ছেদ অভিযান, মাইকিংসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। অভিযানের সময় তারা চলে গেলেও পরে আবার চলে আসেন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উচ্ছেদ কার্যক্রম নিয়মিতই হয়ে আসছে। তবে পাহাড়গুলোর যারা মূল মালিক, তাদের পক্ষেও অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন।’ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছর ১৭ জুন চট্টগ্রামের অতিঝুঁকিপূর্ণ ১১টি পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী ৬৬৬টি পরিবারকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে স্থায়ী উচ্ছেদ অভিযানও চলে। উচ্ছেদকৃতদের নির্দিষ্ট দুটি স্থানে অস্থায়ী পুনর্বাসন করা হলেও তারা ফের পাহাড়েই ফিরে আসে। তবে প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৬৬৬টি পরিবারকে চিহ্নিত করলেও বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। সব কটি পাহাড়ে অতিঝুঁকি নিয়ে প্রায় এক লাখ মানুষ বসবাস করছে বলে জানা যায়। কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীরা কেবল কম দামে ভাড়ায় থাকতে এসব পাহাড় ছাড়ে না বলে জানা যায়। পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে প্রায় ২০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ২০০৭ সালের ১১ জুন স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ধসে ১২৭, ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট ১১, ২০০৯ সালে ১৭, ২০১০ সালে ৩, ২০১১ সালের ১ জুলাই বাটালি হিলে প্রতিরক্ষা দেয়াল ধসে ১৭, ২০১২ সালে পৃথক চার স্থানে পাহাড়ধসে ২৪, ২০১৩ সালে ১ এবং ২০১৪ সালে পাহাড় ও দেয়াল ধসে মারা যান ৫ জন। অভিযোগ আছে, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবৈধভাবে বসত গড়ে বসবাস করার নেপথ্য শক্তি রাজনীতি। রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিয়ে, স্থানীয়ভাবে নিজেদের দাপট দেখিয়ে পাহাড়ে অবৈধভাবে যারা বসবাস করছেন তাদের উচ্ছেদ করা যায় না। উচ্ছেদে গেলেই ‘ওপরমহল’ থেকে শুরু হয় তদবির। ফলে প্রশাসনের ইচ্ছা থাকলেও অনেক অভিযান নিষ্ফল হয়।
শিরোনাম
- জেমিনি থেকে প্রম্পটিং, বিনামূল্যে ৫ কোর্সে এআই শেখার সুযোগ
- অ্যালগরিদম বদলে গেছে, তাই পথও বদলাচ্ছেন ইউটিউবাররা
- ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ৪৬৮
- সুরমা নদীর ভাঙন ঠেকাতে সুনামগঞ্জে গ্রামবাসীর মানববন্ধন
- ‘দেশ পুনর্গঠনে তারেক রহমানের ৩১ দফার বিকল্প নেই’
- দুবলার চরে শুরু শুটকি মৌসুম, সাগরে নামছেন ১০ হাজার জেলে
- বগুড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত–আহতদের পরিবারে ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ
- সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযান, গ্রেফতার ১৭২৬
- ইউক্রেনকে তহবিল দিতে ইইউ’র রুশ সম্পদ ব্যবহারের পদক্ষেপ ব্যর্থ
- বাংলাদেশ থেকে প্রশিক্ষিত তিন হাজার কর্মী নেবে জাপান
- দক্ষিণ কোরিয়ায় মুখোমুখি হচ্ছেন ট্রাম্প ও শি জিন পিং
- ইসরায়েলি পার্লামেন্টে পশ্চিম তীর দখলের বিল পাসের তীব্র নিন্দা বাংলাদেশের
- এক মাস আগেও ডন আমাকে হুমকি দিয়েছে : নীলা চৌধুরী
- নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই : প্রেসসচিব
- ব্রয়লার ১৭০, পাঙাশ ১৮০, গরু ৭৪০, ডিমের হালি ৫০....
- রাজধানীর বাজারে কিছুটা স্বস্তি, কমেছে সবজির দাম
- ভারতের বাইকের সঙ্গে সংঘর্ষের পর বাসে আগুন, নিহত বেড়ে ২৫
- জামায়াত শুরু থেকেই জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে : রুমিন ফারহানা
- ভেনেজুয়েলা–যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা বাড়ছে: মাদুরো বললেন, “এই ভূমিকে কেউ ছুঁবে না”
- স্টার সিনেপ্লেক্সে এ সপ্তাহে দুই সিনেমা: ‘চেইনসো ম্যান’ ও ‘কন্যা’