শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে ওআইসি মহাসচিব

নির্যাতনের কথা বহির্বিশ্বে প্রচার করা হবে

আয়ুবুল ইসলাম, কক্সবাজার

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প ও বস্তি পরিদর্শন করেছেন বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশের জোট ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমাদ আল-ওথাইমিন। তিনি গতকাল দুুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গাড়িযোগে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে উপস্থিত হয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি আন-রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের ডি-ব্লকে একটি রোহিঙ্গা ঝুপড়িতে অবস্থানকারী নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী মিয়ানমারের মংডু এলাকার নারীরবিল গ্রামের নজির আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (২৫), একই থানার ছালিপাড়া গ্রামের শাহীনের স্ত্রী শফিনুর (২৬) এবং একই এলাকার আবদুর রহিমের স্ত্রী মিসফালার (২২)     সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলে তাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত নির্যাতন, নিপীড়ন ও অত্যাচারের কাহিনী শোনেন। পরে ওআইসি মহাসচিব ডি-ব্লকের আইওএমের একটি স্কুলে আগে থেকে অপেক্ষমাণ নির্যাতিত ৩০ জন নারী-পুরুষের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। মিয়ানমারের মংডু থানার হাতগইজ্জাপাড়া গ্রামের নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা গৃহবধূ জামালিকা (২২) মহাসচিবকে বলেন, মিয়ানমারের সেনাসদস্যরা তার স্বামী খাইরুল আমিনকে (৩০) দোকান থেকে নিয়ে রাতের আঁধারে গুলি করে হত্যা করে। পরে তাকেও পাশের জঙ্গলে নিয়ে গণধর্ষণ করে মিয়ানমারের সেনাসদস্যরা। নির্যাতনে পা হারানো মংডু থানার গুয়াছি গ্রামের মো. জাকারিয়া (৩০) বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা তার বসতবাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। তাকে ধরে নিয়ে গুলি করলে ডান পা চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলে। তাদের এসব নির্যাতনের বর্ণনা মনোযোগ দিয়ে শোনেন ওআইসি মহাসচিব।

দেড় ঘণ্টাব্যাপী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বস্তি এলাকা ঘুরে কুতুপালং ক্যাম্পের অভ্যন্তরে খেলার মাঠে ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমাদ আল-ওথাইমিন সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশ নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নাগরিকত্বসহ তাদের সহায়-সম্পত্তি ফেরত দিয়ে স্বদেশে ফেরত নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি চাপ প্রয়োগ করা হবে। রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে শোনা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নানা নির্যাতনের বর্ণনার কথা বহির্বিশ্বে জানানো হবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের এদেশীয় আইনকানুন মেনে চলার অনুরোধ জানান। পরিশেষে মিয়ানমারে চরম নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পবিত্র কাবা শরিফে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য দোয়া করা হবে বলে জানান ওআইসি মহাসচিব। এ সময় তিনি রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের সহ-সভাপতি সিরাজ মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক খাইরুল আমিনসহ একাধিক রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওআইসি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বাকি বিল্লাহ, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান, কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) চাইলাউ মারমা, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুরুদ্দিন মুহাম্মদ শিবলী নোমান, উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়েরসহ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও বিভিন্ন এনজিওর প্রতিনিধি। ওআইসি মহাসচিব বুধবার চার দিনের সফরে ঢাকা আসেন। নভেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তার প্রথম ঢাকা সফর। ঢাকায় তিনি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

সর্বশেষ খবর