রাঙামাটির সাজেকে নামছে পর্যটকদের ঢল। প্রায় প্রতিদিন আসছে দুই থেকে চার হাজারেরও অধিক মানুষ। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে লাখো মানুষের অরণ্যে পরিণত হয় পাহাড়। শুধু রাঙামাটির সাজেক নয়, এমন পর্যটক উৎসবে মেতেছে অপর দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান।
করোনার দীর্ঘ স্থবিরতা কাটিয়ে সবুজ অরণ্যের রাজ্য পার্বত্যাঞ্চলে পুরোদমে শুরু হয়েছে পর্যটন মৌসুম। বইছে পর্যটক উৎসবের আমেজ। পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত পাহাড়ের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। অগণিত পর্যটক আগমনে তিল পরিমাণ জায়গা খালি নেই কোথাও।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন ভিড় থাকে বেশি। তাই অগ্রিম বুকিং থাকে শতভাগ। আবাসিক হোটেল, মোটেল, সরকারি রেস্ট হাউসগুলোতে কোথাও রুম খালি নেই। সড়কে সড়কে পিকনিক পার্টি ও ভ্রমণ পিপাসুদের গাড়ির বহরের ভিড় যেন লেগে আছে পুরো সাজেক পাহাড় জুড়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনায় দীর্ঘদিন পর্যটক শূন্য ছিল রাঙামাটির সাজেক ভ্যালী। আর এ ফাঁকে সাজেকের প্রকৃতি ফিরেছে আপন রূপে। আকাশের মেঘ যেন উড়ে উড়ে এসে বসেছে পাহাড়ের কোলে। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ খুললেই দেখা যায় মেঘের চাঁদরে ঢাকা সাজেক।
তবে শুধু সকাল নয়, বিকেলে দেখা মেলে গোধূলী রঙে মেঘের লুকোচুরি। যা পর্যটকদের কাছে সাজেকের অন্যতম আকর্ষণ। আর সর্বোচ্চ চূড়া থেকে দূর পাহাড়ি গ্রামগুলোকে মনে হয় শিল্পীর পটে আঁকা ছবি। পাহাড়ের গা ছুঁয়ে ভেসে বেড়ায় টুকরো টুকরো মেঘ।
সন্ধ্যা হলে শুরু হয় কুয়াশার হাতছানি। আর স্নিগ্ধ বাতাসে ভেসে আসে পাহাড়ি ফুলের গন্ধ। ঠিক তখনই দূর পাহাড়ি গ্রামে জমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের গানের আসর। এসবের আকর্ষণে মাতোয়ারা পর্যটকরা। তাই তো প্রতিদিন সাজেকে নামছে পর্যটকদের ঢল।
সাজেকের রূপের বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না বলেছেন ঘুরতে আসা পর্যটক ইশিতা আলম। তিনি বলেন, করোনার কারণে পুরো বছরটাই কেটেছে খুবই খারাপভাবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে পরিবেশ পরিস্থিতি কিছুটা ভাল হয়েছে। তাই পরিবারের সাথে ঘুরতে আসা। সাজেকে এসে এক মুহূর্তে ভুলে গেছি করোনার ভয়াবহতা। প্রকৃতির কাছে যে কোনো ভয় তুচ্ছ।
একইভাবে নিজের মনের ভাব জানালো পর্যটক রোমান ও তানিয়া। তারা বলেন, সাজেকে পরিবেশ খুবই সুন্দর। নিরাপত্তাও রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সবচেয়ে ভাল লাগার বিষয় হচ্ছে পর্যটকের মেলা। হাজারো নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী এখানে ব্যস্ত প্রকৃতির স্মৃতি ক্যামেরাবন্ধী করতে।
রাঙামাটির সাজেক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুবর্ণ দেব বর্মণ জানান, পর্যটকদের সুবিধার জন্য সাজেকে অনেক রেস্টুরেন্ট আর বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। রেস্টুরেন্টগুলোতে মিলছে পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বিভিন্ন খাবার। যার প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ থাকে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে মিলছে এ অঞ্চলের মানুষের দেশিও পোশাক ও পণ্য সামগ্রী। ফলে চাঙ্গা হয়ে উঠছে স্থানীয় ক্ষুদ্র পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসাগুলো।
সাজেক বিলাসের ব্যবস্থাপক জ্ঞান জ্যোতি চাকমা বলেন, সম্প্রতি সাজেকে পর্যটকের আনা-গোনা বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিন এক থেকে ২ হাজার পর্যটক আসছে এখানে। সাজেকের পর্যটন ব্যবসা আবারও চাঙা হয়ে উঠেছে। অগ্রিম বুকিংও থাকছে প্রতিদিন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, সাজেকে নিরাপত্তার অভাব নেই। অগণিত মানুষের ঢল নামছে সাজেকে। পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া সাজেকে পর্যটকদের পর্যাপ্ত থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই