হেলেদুলে চলছে যানবাহন, যেন ঢেউয়ের তালে দুলছে সবকিছু। এমন দুর্ভোগ নিয়েই যানবাহন ও পথচারী চলাচল করতে দেখা গেছে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের মুন্সীবাজার থেকে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ সড়কটিতে। পুরো সড়কে খানাখন্দ। কোথাও কোথাও পিচঢালাই নেই। বৃষ্টির পানি-কাদায় একাকার। দিনদিন এসব খানাখন্দ বড় হচ্ছে। প্রতিদিন উল্টে পড়ছে যানবাহন। আহত হচ্ছে যাত্রীরা। কাদাপানি ছিটকে কাপড়চোপড় নষ্ট হচ্ছে। ফরিদপুর সদরের মুন্সীবাজার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার সড়কের চিত্র এমনই। স্থানীয়রা সড়কটি সংস্কারে বারবার দাবি জানালেও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর সঙ্গে কয়েক দিনের টানা বর্ষণে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে মহাসড়কের এ অংশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফরিদপুর সদরের বাখুন্ডা, নগরকান্দা উপজেলার মহিলা রোড, তালমা ও পুখুরিয়ার সড়কের অবস্থা বেশি নাজুক। রাস্তা গর্তে ভরা। এসব গর্তে পড়ে বিকল হয় যানবাহন। এর পরও বিকল্প না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই চলছে বাস, ট্রাক, লরি, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত যানবাহন, থ্রি-হুইলার। ঢাকা থেকে প্রাইভেট কারে ফরিদপুরে আসছিলেন মাহবুবুল হক। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আগে জানলে এমন সড়ক দিয়ে আসতাম না। ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুরে আসতে লেগেছে প্রায় দেড় ঘণ্টা।’ নগরকান্দা থেকে রোগী নিয়ে হাসপাতালে আসার পথে কথা হয় আরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার আপাকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি। রাস্তার যে অবস্থা তাকে হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারব কি না জানি না।’
বাসচালক আকবর হোসেন বলেন, ‘রাস্তার জঘন্য অবস্থা। গাড়ি চালানোর কোনো কায়দা নেই। গর্তে পড়ে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। মিস্ত্রি আসবে, তারপর গাড়ি ঠিক করা হবে। এতে ৩০ হাজার টাকা লেগে যাবে।’ স্থানীয় সজীব ঘোষ জানান, ‘এ এলাকায় প্রতিদিন ইজিবাইকসহ ছোট যান উল্টে যায়। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির অবস্থা বেহাল হলেও দেখার কেউ নেই। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে একেবারে যাচ্ছেতাই হয়েছে সড়কটির অবস্থা।’
সড়কটির বেহালদশার পরও কর্তৃপক্ষ উদাসীন থাকায় স্থানীয় বেশ কিছু যুবককে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ধানের চারা লাগাতে দেখা গেছে। অনেকেই সড়কটির গর্তে মাছও ছাড়েন। সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার সড়কটির সংস্কারের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সংস্কারকাজ শুরু করা হয়নি। বাখুন্ডায় ইট-বালু দিয়ে গর্ত ভরাট করতে দেখা যায় সড়ক বিভাগকে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার বলেন, ‘দুটি প্যাকেজের আওতায় সড়ক মেরামতের জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।’ তবে জরুরি ভিত্তিতে সড়কের খানাখন্দ ভরাটের কাজ করছেন তাঁরা। ৩২ কিলোমিটারের এ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।