দিনাজপুরে একটি এলাকায় ৪০০ পরিবারে প্রায় ৩ হাজার মানুষ বসবাস করলেও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত তারা। এলাকাটি দিনাজপুর সদর উপজেলার পুনর্ভবা নদীর তীরে গড়ে ওঠা। এলাকাটি খামার ঝাড়বাড়ী নতুনপাড়া নামে পরিচিত। যা পুনর্ভবা নদীর চরে গড়ে তোলা হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা মো. নুর আলী (৭২) বলেন, আমরা দিনাজপুর সদরের আউলিয়াপুর ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের খামার ঝাড়বাড়ী গ্রামের ভোটার। নির্বাচন এলে আমাদের এ অবহেলিত মহল্লায় নেতা-কর্মীদের আগমন ঘটে। প্রার্থীরা আমাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য পুনর্ভবা নদী পারাপারে বেইলি ব্রিজ, কমিউনিটি ক্লিনিক, প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও রাস্তাঘাট নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। তবে নির্বাচন হয়ে গেলে আর কোনো এমপি, মন্ত্রী বা ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বরের দেখা মেলে না। পরে কেউ খোঁজখবর পর্যন্ত নেন না। এ মহল্লায় শিশুদের পড়াশোনার কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় শিক্ষার কোনো অগ্রগতি নেই। মহল্লার ১০ থেকে ১২ বছর বয়সি অনেক শিশুই পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে না। রাতে কোনো গর্ভবতী নারী, বৃদ্ধ ও শিশু গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থাও নেই। কোনো কমিউনিটি ক্লিনিকও নেই। প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এখন থেকে দিনাজপুর শহরে যেতে হলে মহল্লার বাসিন্দাদের চার কিমি পথ ঘুরে কাঞ্চন সেতু পার হয়ে যেতে হয়। এসব নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় বহিরাগত দুষ্কৃতকারী চক্র প্রায় সময় মাদকের আস্তানা গড়ে তোলার চেষ্টা করে। মহল্লাবাসী দরিদ্র হওয়ায় ওইসব দুষ্কৃতকারীর প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। মহল্লাবাসী জাফর আলী, খয়রাত হোসেন, অপূর্ব রায়, জয়নাল আবদীনসহ সবার একই অভিযোগ, তারা সব ধরনের নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত।
দিনাজপুর সদর ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মো. দাইয়ান হোসেন জানান, সদরের অন্তর্গত পুনর্ভবা নদীর চড়ে ৪০০ পরিবারের বসবাস রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫০টি মুসলিম এবং ৫০টি হিন্দু পরিবার রয়েছে। সরকারিভাবে ১৮৮ পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিনে ঘর নির্মাণ ও স্থায়ী বসবাসে মালিকানার কাগজ দেওয়া হয়েছে। ৬০টি পরিবারকে লিজের মাধ্যমে ৩ শতক করে খাস জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ওই মহল্লার বাসিন্দা মো. জবেদ আলী জানান, তিনিসহ লিজ বঞ্চিত ১৫২টি পরিবার সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে দুই বছর হলো আবেদন করেছেন। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত বরাদ্দের কাগজপত্র পাননি।
ওই মহল্লার বাসিন্দা মো. আরিফুর রহমান জানান, ১০ বছর আগে সদর উপজেলা প্রশাসন স্থান পরিদর্শন করে ৩৩ শতক জমি প্রাইমারি স্কুলের জন্য নির্ধারণ করে। কিন্তু এ পর্যন্ত স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়নি।
সুমনা আক্তার বলেন, এ গ্রামের নারীরা বিধবা, মাতৃত্ব, গর্ভবতী, বয়স্ক ভাতা থেকে বঞ্চিত। এখানে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা নেই।
দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীজ শাহীন সুলতানা বলেন, আমি কয়েক মাস আগে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছি। বিষয়টি অবগত হলাম। সরেজমিন পরিদর্শন করে ওই মহল্লাবাসীকে সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।