শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

থলের বিড়াল বেরিয়ে এলো

ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন

থলের বিড়াল বেরিয়ে এলো

‘ডিজিটাল’ শব্দটি আমাদের জন্য একটি রাজনৈতিক স্লোগান! প্রযুক্তির জগতে পৃথিবীতে আজ পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার পেরিয়ে আগামীর ষষ্ঠ পর্যায়ের ‘কোয়ান্টাম কম্পিউটার’-এর দিকে ধাবমান। শিল্পবিপ্লবের চতুর্থ প্রজন্ম স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে রোবোটিকস ও ন্যানো টেকনোলজির কথা। পোশাকশিল্প থেকে শুরু করে সব শিল্পকারখানার উদ্যোক্তাদের চাহিদা এখন কারিগরি শিক্ষায় আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা। টেকসই উন্নয়নের ধারাবাহিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হবে বিশ্বায়নের যুগে। বিশ্বব্রহ্মান্ডে বাংলাদেশ কোনো কক্ষবিচ্যুত গ্রহ বা উপগ্রহ নয়। তাই করোনার ভয়াল আগ্রাসী থাবার বাইরে ছিল না দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটি। স্মরণ করা যেতে পারে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপর মহামারী স্প্যানিশ ফ্লু শুরু হয়েছিল ১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। শেষ হয়েছিল ১৯২০ সালের এপ্রিলে। মাত্র দুই বছর দুই মাসে পরপারে পাড়ি জমিয়েছিলেন ৫ কোটি মানবসন্তান। জীবন আর জীবিকার চাকা স্থবির ছিল বিশ্বের দেড় শ কোটি আদমসন্তানের। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর ইতি টেনে ছিল ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫। সারা বিশ্বে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকলেও অক্ষত ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ভঙ্গুর পৃথিবীতে কর্তৃত্বের হাত বাড়িয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিনিরা জানেন, শিক্ষা হচ্ছে একমাত্র টিকে থাকার হাতিয়ার তাই যুদ্ধ কিংবা স্প্যানিশ ফ্লুর সময়ে মুক্ত আকাশের নিচে ক্লাস নিয়েছিল। এবার আবারও ভয়াবহ মহামারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বিশ্ববাসী। মৃত্যু কেড়ে নিয়েছে এ যাবৎ ৪৫ লাখের বেশি মানুষকে। খোদ আমেরিকাতেই মৃত্যুবরণ করেছে সাড়ে ৬ লাখের বেশি মার্কিন নাগরিক। এর মধ্যে নিউইয়র্কেই মারা গেছেন ৫৫ হাজারের বেশি। আপৎকালে জীবন-জীবিকার চাকা খানিকটা স্থবির হলেও শিক্ষার ধাবমান গতি ব্যাহত করতে পারেনি। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার চারটি, সাউথ আমেরিকার নয়টি ও দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ বাংলাদেশ, যেখানে শিক্ষার চাকা থেমে আছে ১৮ মার্চ, ২০২০ থেকে আজ অবধি। বাংলাদেশ ছাড়া বাকি ১৩টি দেশের কেউই নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার যাত্রা করেনি। যে দেশটির কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ৬৫ ভাগ। জনসংখ্যাতাত্তি¡ক লভ্যাংশ প্রদান করার সময় ২০০৭ থেকে ২০৪২ সাল পর্যন্ত। ঠিক এমন একটি সময়ে শিক্ষাকে গুরুত্বহীন করার পরিণাম কতটা ভয়াবহ তা সময়ই বলে দেবে! ১৯৭১ সালের অটো প্রমোশন ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের পরীক্ষার খেসারত গোটা দুই যুগ বইতে হয়েছে। অটো প্রমোশনের অভিশাপ থেকে জন্ম নিয়েছিল নকল। ২০২০ সালে ১৪ লাখ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীকে বিনা পরীক্ষায় ১০০% অটো পাস ও এর মধ্যে ১ লাখ ৬২ হাজার শিক্ষার্থীকে ‘জিপিএ এ প্লাস’ দিয়ে বিশ্বের মেধাবী শিক্ষার্থীদের তালিকা গিনেস বুক অব রেকর্ডে স্থান করানোর যৌক্তিকতা কী? অটো প্রমোশন ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের তিক্ত অভিজ্ঞতা পাশ কাটিয়ে একই চক্রের আবর্তে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষা বোর্ডগুলো দিচ্ছে অটো প্রমোশন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, পরীক্ষার বিকল্প হতে পারে শুধু পরীক্ষা। উচ্চশিক্ষায় যেতে হলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। তাহলে একই দেশে শিক্ষাবিদদের দুই ধরনের মত কেন? বাস্তবে শিক্ষার অর্থ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থী শিখন পদ্ধতির মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে আহরিত জ্ঞানের স্বীকৃতি পাবে। বস্তুত শিক্ষা হলো সামাজিক উত্তরাধিকারের সঙ্গে বৃদ্ধি ও মানব উন্নয়নের সমন্বয়। চিন্তার ধরন ও আচরণ, যা মানবসম্পদ উন্নয়নের উত্তরাধিকার। করোনা বিশ্বের অর্থনীতির চাকা স্থবির করলেও সার্বিকভাবে শিক্ষার অদম্য, অপ্রতিরোধ্য অব্যাহত যাত্রা পেয়েছে এক নতুন মাত্রা, ফলে শিক্ষাব্যবস্থায় করোনা অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। যুগের সঙ্গে শিক্ষার পরিবর্তন বিশেষ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলেও তার গতি-প্রকৃতিতে তেমন তারতম্য ঘটেনি। নতুনত্বের আবেদন থাকলেও পাশাপাশি পরিবর্তনের মাত্রা ছিল সামঞ্জস্যপূর্ণ। অনলাইন শিক্ষার প্রভাব প্রাচ্যের উন্নত দেশ থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে আমাদের দেশেও ছিল ব্যাপক ও বিস্তৃত। তাই আধুনিকায়নের সুযোগে ডিজিটাল বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের সুব্যবহার করা ছিল এ মুহুর্তের সময়ের দাবি। কিন্তু আমরা তা দেখতে পাইনি। পুরনো অদক্ষ চিরাচরিত প্রথায় শুধু পরীক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকৃত শিখনের বিষয়ে অবহেলা করা হচ্ছে। ২০২০ সালে সারা বিশ্ব যখন করোনা-আক্রান্ত, দেশব্যাপী এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৩ ফেব্রুয়ারি। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিও সম্পন্ন, ১ এপ্রিল পরীক্ষা গ্রহণের পালা। কিন্তু বিধিবাম! ৮ মার্চ, ২০২০, বাংলাদেশে প্রাণঘাতী করোনার প্রথম সূচনা। ১৮ মার্চ বিনা প্রস্তুতিতে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির ঘোষণা দেওয়া হয়। স্বল্প ছুটি ঘোষণা দেওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ যেমন বই, খাতা, কলম, ট্যাব, ল্যাপটপ সঙ্গে না নিয়েই যার যার গ্রামের বাড়ি চলে যায়। দেশের প্রান্তিক জনগণ মহাউল্লাসে ঈদের ছুটির মতো আনন্দ উপভোগের জন্য দলে দলে লঞ্চ, স্টিমার, বাস বা ট্রেনে পৌঁছে যায় নিজ নিজ গন্তব্যে। পরবর্তীকালে ছুটি বাড়ানো হয় এবং অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য জাতীয়ভাবে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। করোনাকালে কীভাবে শিক্ষার্থীরা প্রাত্যহিক পড়াশোনা চালিয়ে যাবে সে সম্পর্কে কোনো গাইডলাইন পায়নি। এমনকি ছুটির সঙ্গে সারা দেশকে লকডাউন করা হবে এ বিষয়টি শিক্ষার্থীদের অবগত করার প্রয়োজনটি অনুভব করেননি শিক্ষা সম্পর্কিত বিশিষ্টজনেরা। বছরের প্রারম্ভেই কোমলমতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর থেকে শুরু করে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সব মাদরাসা কিংবা কারিগরি থেকে শুরু করে প্রাথমিক, মাধ্যমিকসহ শিক্ষার্থীদের প্রায় সাড়ে ১১০০ কোটি টাকার বিনামূল্যের বই বিতরণ করা হয়নি ২০২১ সালে। ২০২১ ও ২০২২ সালের বিনামূল্যের বই বিতরণের বাজেট দিয়ে নিশ্চিতভাবে ট্যাব বিতরণ করা সম্ভব। এ ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে ই-ল্যাব, ই-বুক, জুম ক্লাস, ভার্চুয়াল দূরশিক্ষণের কাজ করা যায়। উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ব্র্যাক ও পিপিআরসির সদ্যসমাপ্ত জরিপে দেখা গেছে, অন্তত ৬০ লাখ শিক্ষার্থী এই সময়ে নিয়মিত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এ অবস্থায় স্কুলগামী ছেলেশিশুর ৮ আর মেয়েশিশুর ৩ শতাংশকে উপার্জনের পথে যেতে হয়েছে। অন্য এক গবেষণায় বলা হয়, অনলাইনে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা থাকলেও এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত বিশাল অংশের শিক্ষার্থী। তা ছাড়া অনলাইনে লেখাপড়া ও স্কুলের লেখাপড়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক বলে শিক্ষার্থীরা মন্তব্য করেছেন। ব্র্যাক ও পিপিআরসির জরিপে বলা হয়েছে, শিক্ষার নানা সংকটের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপও অনেক গুণে বেড়েছে। সেই সঙ্গে ৬৫ হাজারের বেশি কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। অসহায় শিক্ষকরা কেউ কেউ ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন, দেওয়া হয়নি কোনো প্রণোদনা। টেলিভিশনের পর্দায় দেখছিলাম, রিকশা চালাচ্ছে এক কিশোর। প্রতিবেদক জানতে চাইলে উত্তরে বলল, ‘অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। বাবার ইচ্ছা ছিল মাধ্যমিক পাস করে কোথাও ছোটখাটো চাকরি করে সংসারে সাহায্য করব আর বোনকে বিয়ে দেব, সেই সঙ্গে নৈশ কলেজে পড়ালেখা করে জীবন গড়ে তুলব।’ বোনের অবস্থা জানতে চাইলে বলল, ‘নবম শ্রেণির ছাত্রী, স্কুল বন্ধ, বাবা তাকে বিয়ে দেবে। টাকার প্রয়োজন তাই রিকশা চালাচ্ছি।’ এই হলো করোনাকালীন নিম্ন আয়ের পরিবারের অবস্থা। তা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য কিংবা ইউরোপ থেকে ছুটিতে দেশে আসা প্রবাসীর অনেকেই ভ্যাকসিন জটিলতায় বিদেশ যেতে না পেরে আজ সহায়সম্বলহীন। করোনাকালে বিশ্বব্যাপী অব্যাহত অর্থনৈতিক ধস সত্ত্বেও দেশের সমৃদ্ধির কোষাগারে এ বছরে রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৬.০৮ বিলিয়ন ডলার, যার সিংহভাগই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের। যাদের ঘামে কথিত উন্নয়নের চাকা ঘুরেছিল তাদের ফেরত পাঠাতে কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

করোনার এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে ফিরতে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার জন্য শিক্ষকরা এলাকাভিত্তিক বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনার পরামর্শ দিতে পারেন। সেই সঙ্গে ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি বাড়িয়ে দেওয়া, নিয়মিত টিফিন সরবরাহের পাশাপাশি খেলাধুলা ও শিক্ষণীয় বিনোদনের ব্যবস্থা করা। উপজেলাভিত্তিক কারিগরি ও ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ করে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ও প্রবাস-ফেরতদের কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। উপকেন্দ্র বাড়িয়ে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরীক্ষা নেওয়া। ছুটির দিনে অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা। বিকল্প দিনে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

তৃতীয় বিশ্বে রাতারাতি যারা উন্নয়নের যাত্রা করেছিল হঠাৎ পাওয়া কোনো সম্পদ দিয়ে, তারা যখন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব না দিয়ে দৃশ্যত ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন করেছিল, মানবসম্পদ উন্নয়নকে যুক্তিসংগতভাবে এগিয়ে নিতে পারেনি বলেই টেকসই উন্নয়ন হয়নি। যদি নাইজেরিয়ার কথা বলি নিশ্চয়ই ভুল হবে না। প্রাচ্যের উন্নত দেশগুলোর উন্নতির সোপানে আরোহণের মইটি ছিল শিক্ষা। তা আজ কারোরই অজানা নেই।

ব্রিটিশ আমল থেকে এ অঞ্চলের মুসলিম অধ্যুষিত জনগোষ্ঠী ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে আধুনিক ইংরেজি শিক্ষা থেকে পিছিয়েছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে নয় মাসের মুক্তিসংগ্রামের কারণে পিছিয়ে পড়া শিক্ষাব্যবস্থাকে শুধু পরীক্ষার সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য একটি প্রজন্মকে খেসারত দিতে হয়েছিল। ইতিহাসের সে শিক্ষা থেকে শিক্ষা নিইনি আমরা। কোনো একসময় ভ্যাকসিন নিয়ে ইলিশ কূটনীতির কথা শুনেছিলাম। পৃথিবীর সব দেশেই ভ্যাকসিন দেওয়ার শুরুতেই দেওয়া হয়েছিল সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের। ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতার সাপেক্ষে বয়স কমিয়ে জীবিকার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সবাইকে ভ্যাকসিন নিতেই হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না হার্ড ইমিউনিটির সক্ষমতা অর্জন করে দেশ। সে ক্ষেত্রে শিক্ষক, অভিভাবক কিংবা ১৮-ঊর্ধ্ব সব নাগরিককেই ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী কাউকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। যেমনিভাবে বিনা ভ্যাকসিনে ‘ব্রেড উইনার’ (উপার্জনকারী) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে ওই পরিবারের শিক্ষার্থীও নিশ্চয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মনে হচ্ছে, চোরের ভয়ে দরজা বন্ধ রেখে গ্রিলবিহীন জানালা খোলা রাখা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮ বছরের নিচে করোনা সংক্রমণে মৃত্যুহার .০০০২%। তাহলে জনমনে প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক, যেখানে অফিস-আদালত, কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, সভা-সমাবেশ এমনকি মানববন্ধনও প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে কেন! যাদের জীবন থেকে দুটি বছর হারিয়ে গেল তাদের তো সরকার চাকরির নিয়োগের বয়সসীমা বাড়িয়ে দেয়নি। আমরা এও দেখেছি ঢাকার বৃহৎ সাত কলেজ গত বছরের পরীক্ষা নিচ্ছিল, তখন হঠাৎ করে সরকার বন্ধ করে দেয়। এর প্রতিবাদে শাহবাগের মোড়ে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাতে এক পরীক্ষার্থী চক্ষু হারিয়ে ছিলেন। তখন করোনা সংক্রমণের হার ছিল ৫%-এর নিচে। তখন অবশ্য সারা দেশে পর্যটন স্পট ও বিনোদন কেন্দ্র খোলা ছিল। শুধু বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যদিও সরকার বরাবরই বলে যাচ্ছে, সংক্রমণের হার ৫%-এর নিচে না নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না। তাহলে কি বুঝতে হবে প্রবীণ রাজনীতিবিদ ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই অনেক অপশক্তি আটঘাট বেঁধে নামবে, অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে, সরকার হটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এজন্যই হয়তো মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী দফায় দফায় ঘোষণা দিলেও আজ অবধি শিক্ষার দীপ জ্বলেনি। তাহলে কি শেষকালে থলের বিড়াল বেরিয়ে এলো!

লেখক : সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও চেয়ারম্যান, এডুকেশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ (ইআরআই)।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর