'এমি জেমী ইয়াহীনে হামনিক অবস্থাটা কোন ভিলে'- অর্থাৎ এখানে আসেন, দেখেন আমাদের অবস্থাটা কেমন। কথাগুলো বললেন কোরা সম্প্রদায়ের কলো কড়া।
এ ভাষার ব্যবহার বাংলাদেশের কোথাও আছে কিনা তারা জানে না। তবে তারা সংখ্যায় খুবই কম। কোরা সম্প্রদায় লোকজনের সংখ্যা দিন দিন কমতে শুরু করেছে। এ সম্প্রদায়ের ভাষাটিও আজ হারাতে বসেছে। কারণ এ ভাষাতে শুধু নিজেদের মধ্যেই কথা বলতে হয়। অন্য কোথাও বলার সুযোগ নেই।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বেশিরভাগ কোরা সম্প্রদায়ের লোক ভারতে চলে যায়। শুধুমাত্র তারাই এ অঞ্চলে থেকে যায়।
আদিবাসী কোরা সম্প্রদায় দিনাজপুরের দুটি স্থানে দেখা যায়। এদের ১৭ পরিবার জেলার বিরলের হালজাই ঝিনাইবুড়ি। আর দুটি পরিবার সদর দিনাজপুরের উলিপুর এলাকায় বসবাস। ৭০/৭৫জনের এ কোরা সমপ্রদায়ের প্রধানকে মন্ডল বলা হয়। বর্তমানে তাদের মন্ডল জগেন কোরা।
তাদের মধ্যে যৌতুক প্রথা নাই। আগে সকল বিয়ে নিজেদের গোষ্ঠিতে হয়েছে। জনসংখ্যা কম হওয়ায় বর্তমানে অন্যান্য জাতিতে ৪টি ছেলের বিয়ে হলেও কোন মেয়ের বিয়ে এখনো অন্য জাতিতে হয়নি।
ভূমি দস্যুদের অত্যাচার, মিথ্যা মামলা, পরিবার পরিকল্পনা অজ্ঞতা আর পুষ্টিহীনতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত বিরলের হালাজায় আদিবাসি পল্লীর কোরা সম্প্রদায়ের এ পরিবারগুলো। সরকারি সুযোগ-সুবিধা তেমন না পেলেও জীবনযুদ্ধে তারা যেন হার মানতে নারাজ।
একটু অবসর পেলেই তারা মাদল টোমাকের বাজনায় গেয়ে ওঠেন- “খোঁচ লাগ্গাল শেড়িয়া, মাহা সুন্দার গেলিয়া”। তাদের ভাষায় ঝুমুর গান। সেই সাথে চলে হেলেদুলে নাচ।
কলো কড়া, পূর্নীমা কড়া, কাজলী কড়া ও রুবিনা কড়া জানান, পেটের ব্যাথা, প্যারালাইসিসসহ বিভিন্ন অসুখে তারা এখনও লতা-পাতা ও গাছ-গাছালির ওষুধই খান। পরিবার পরিকল্পনা কাকে বলে এ ধারণা তাদের নেই। অল্প বয়সে বিয়ে করে অনেকেই বিভিন্ন রোগে ভূগছে। মা এবং শিশুরা ভূগছে পুষ্টি হীনতায়। নেই বয়স্কভাতা বলে কিছু।
তাদের কেউ গাছ, কেউ মাছ, কেউ বিড়াল, কেউ ভেড়া আবার কেউবা একটি ইদুরকে প্রভু মেনে প্রার্থনা করেন। তবে সব থেকে বড় দেবতা তাদের কারাম ও ধারাম (কর্ম এবং ধর্ম)। তারা কর্মাপূজা করে। তবে বিশেষ কোন কারণে বর্তমানে শীব যাত্রী পূজা করেন।
এ প্রতিবেদককে পেয়ে ঘিরে ধরেন অনেকেই। জানান নানা দুঃখের কথা। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে থেকেও তারা যেন এ ভূখণ্ডের নাগরিক নন। নেই কোন নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। কেউ কেউ লেখাপড়া করলেও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্তই। তাদের দাবি সরকারের দেওয়া সকল সুযোগ সুবিধা। নিজ সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে স্থানীয়ভাবে একটি বিদ্যালয়ও চান তারা।
বিডি-প্রতিদিন/০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫/ এস আহমেদ