ডাহুকের বাস পানিতে। মাঝারি আকৃতির এই পাখিটি খুব ভীরু বলেই কি এত সুন্দর? পুকুর, খাল, জলাভূমি, বিল, নদীর গোপন লুকানো জায়গা বসবাসের জন্য এদের খুব প্রিয়। কিন্তু দ্রুত নগর বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে নদী, খাল-বিল আর সুন্দর এই পাখি ডাহুক।
ডাহুক বাংলাদেশের একটি বিপন্ন পাখি। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এই পাখির নামে নিরবধি বয়ে চলেছে ডাহুক নদী। নিসর্গের কবি জীবনানন্দ লিখেছেন, "মালঞ্চে পুষ্পিতা অবনতামুখী/ নিদাঘের রৌদ্রতাপে একা সে ডাহুকী/ বিজন তরুণ শাখে ডাকে ধীরে ধীরে/ বনচ্ছায়া-অন্তরালে তরল তিমিরে।" সেকালের চণ্ডিদাস থেকে একালের বাংলার কবি আল-মাহমুদের কবিতাতেও এই বর্ণিল পাখির কাব্যময় উপস্থিতি রয়েছে।
ডাহুক আসলে চিরবিরহী একটি পাখি। সঙ্গীহীন হলে এরা পাগল হয়ে যায়। ডাহুক হারিয়ে গেলে ডাহুকী দিনরাত পাগলের মতো ডাকাডাকি করতে থাকে। রাতে ডাহুকের ‘কোয়াক’ ‘কোয়াক’ ডাক শুনে সহজেই একে চিনতে পারা যায়। এই ডাক পুরুষ পাখির, যা বর্ষাকালে বেশি শোনা যায়। একটানা অনেকক্ষণ ডেকে শ্বাস নেয়।
ডাহুকের লেজছোট, লেজের নিচের অংশ লালচে আভাসমৃদ্ধ। পিঠের রং ধূসর থেকে খয়েরী-কালো, মাথা ও বুক সাদা। পা লম্বা। ঠোঁট হলুদ, ঠোঁটের উপরে লাল রঙের একটি ছোট দাগ আছে। দেহ কালচে। মুখমণ্ডল, গলা, বুক ও পেট সম্পূর্ণ সাদা। মাটিতে ঝোপের তলায় এরা বাসা বাধে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর এদের প্রজননকাল। ৬/৭ টি ডিম পাড়ে। ডিমের রং ফিকে হলুদ বা গোলাপী মেশানো সাদা। ডাহুক-ডাহুকী উভয়েই ডিমে তা দেয়। বাচ্চাদের রং সব সময় হয় কালো। জলজ পোকা-মাকড়, উদ্ভিদের কচি ডগা, শ্যাওলা এদের প্রিয় খাবার।
ডাহুক বাংলাদেশ, ভারত ছাডাও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিযার বিভিন্ন দেশে দেখা যায। কোনো কোনো জায়গায় এদেরকে ডাইক, পান পায়রা, ধলাবুক ডাহুক নামে ডাকা হয়। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৮৩ লক্ষ ৪০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এদের আবাস। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে ডাহুক পাখিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ৩১ মার্চ, ২০১৫/ রশিদা