পটুয়াখালী জেলার মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বঙ্গোপসাগর বক্ষে অবস্থান যার নাম সোনার চর। সরকারি ও বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হলে সোনার চরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র। বনবিভাগের মতে সোনার চরে ভবিষ্যতে গড়ে উঠবে ইকো ট্যুরিজম। এখানে রয়েছে বিস্তীর্ণ বনভূমির পাশাপশি সাত কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। সোনার চরের সৈকতে একই স্থানে দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। অবলোকন করা যায় নীলিমায় ভরা প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য। শেষ বিকেল থেকে শুরু হয় লাল কাকড়ার ছুটোছুটি।
এছাড়াও দ্বীপটিতে রয়েছে বহু প্রজাতির বন্যপ্রাণী। সেই সঙ্গে বিশ হাজার ছাব্বির হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমি। তবে কাঙ্ক্ষিত প্রচার-প্রচারণার অভাব ও যাতায়াত সমস্যার কারণে এখনও পর্যটক প্রিয় হয়নি বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সোনার চর।
কবে কখন এ চরটি জেগে ওঠে সঠিক তথ্য কারো জানা না থাকলেও আনুমানিক শতবছরের পুরানো দ্বীপ বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে জেগে ওঠা যার নামকরণ করে সোনার চরের দিকে ২০০৪ সালে নজর দেন সরকার। পরে পটুয়াখালী উপকূলীয় বনবিভাগ বনায়ন শুরু করে এ চরে। এ পর্যন্ত এখানের গহীন বনে নেয়া হয় তিনশ' হরিণসহ, বানর, বন্য মহিষ, শুকর ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী। রয়েছে নানা প্রজাতির পাখ-পাখালি।
পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সংরক্ষিত এ বনভূমি অভয়ারণ্য ঘোষণা করে সরকার বন্যপ্রাণী বিচরণে। এ চরে প্রতিদিন শত শত ভ্রমণ পিপাসু ছুটে আসেন বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।
চর মোন্তাজ ফরেস্ট রেঞ্জার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সোনার চর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জনবলের অভাব রয়েছে। এখানে বিট অফিসারসহ নিয়োজিত আছেন মাত্র ৬ জন বনরক্ষক। লোকবলের অভাব থাকায় যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারা দিনরাত পরিশ্রম করে রক্ষা করছেন দেশের এই সম্ভাবনাময় সম্পদ।
সোনার চর ঘুরতে আসা কয়েক পর্যটক জানান, শেষ বিকেলে সূর্যের ম্লান আলো যখন লালচে হয়ে সৈকতের বুকে ঢলে পড়ে তখন অবিশ্বাস্য এক মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। সৈকতের বুকে আছড়ে পড়া আলোয় সাগরের পানির রং যেন সোনালী বর্ণের হয়ে যায়। আর বিকেলে সৈকতের ঝুর ঝুরে বালু কণা যেন লালচে হয়ে সোনার থালায় রূপ নেয়। দূর থেকে মনে হয় সাগরের বুকে একটি সোনার টুকরো এ যেন উপভোগ করার মতো দৃশ্য। মনে হয় সোনার চর নামকরণ সার্থক।
পটুয়াখালী উপ-বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দে জানান, জেলার বিচ্ছিন্ন চর ঘেরা প্রস্তাবিত রাঙ্গাবালি উপজেলার চরকাজলের বন বিভাগের অধীন রয়েছে নীলিমায় ভরা সাগর কন্যা সোনার চর। যা পটুয়াখালীর মূল ভূখণ্ড থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোনো বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত এবং জেলার অপর পর্যটন কেন্দ্র সাগর কন্যাখ্যাত কুয়াকাটা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ দিকে। নদী বা সমুদ্রই হচ্ছে যাতায়াতের একমাত্র পথ।
সোনার চরে রয়েছে ২০ হাজার ২৬ হেক্টর বিস্তির্ণ বনভূমি। এলজিইডি দপ্তরের তত্ত্বাবধানে উন্নয়ন করা হচ্ছে ৫শ' ৫০ মিটার সি.সি রাস্তা, পাবলিগ টয়লেট। সংস্কার করা হয়েছে রেস্টহাউস। এখানে রয়েছে সুন্দরী, কেওড়া, গড়াল, গর্জন, গেওয়া, খইয়া বাবলা, ছইলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। একশ চল্লিশ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান, রয়েছে বনের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ছোট বড় বহু খাল (ক্যানেল)। সেই সঙ্গে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত রয়েছে সোনার চরে। যে কোন জায়গায় দাঁড়িয়েই উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দুর্লভ দৃশ্য।
সোনার চরের নিকটবর্তী জনবসতি এলাকা আণ্ডার চর এলাকার বাসিন্দা মো. হাসেম হাওলাদার (৮০) জানান, ছোড কাল অইতে দেইখ্যা আইছি সাগরের মদ্যোহানে ওই চরডা জাগজে। মোর বাপে কইছে হেও ওই জায়গায় জোঙ্গল দ্যাখতে গ্যাছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ০২ এপ্রিল, ২০১৫/ রশিদা