জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস করতে ১৯৮০ সালে 'এক সন্তান নীতি' চালু করে চীন সরকার। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা সেই নীতি লঘু করলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগছে তারা। ফলে জীবনযাত্রায় 'ওয়ান চাইল্ড পলিসি' সঠিক সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছেন চীনারা।
কঙ লু নামের এক চীনা চাকুরিজীবী নারী এই প্রসঙ্গে জানান, "আমার স্বামীকে দ্বিতীয় সন্তান পরিকল্পনার কথা জানালে, সে একবারেই খারিজ করে দেয়। সে জানায়, দ্বিতীয় সন্তানের পরিকল্পনা বর্তমান পরিস্থিতিতে উপযুক্ত নয়।' কঙ লুর মতো অনেকেই মনে করছেন, দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা তাদের একেবারেই নেই।
শুধু কঙ লু নয়, চীনের অনেক দম্পতি মনে করছেন, দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার জন্য সমাজে উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। তিন বছরের নিচে শিশুদের জন্য নেই কোনো উপযুক্ত কিন্ডারগার্টেন। সন্তানদের দেখাশুনা করার জন্য পাওয়া যায় না ভালো আয়া। ফলে স্বামী-স্ত্রী দু'জনেরই চাকরিজীবী হলে সন্তানের দেখভাল ভালো হয় না। এইসব কারণ ছাড়াও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তিন দশক ধরে 'এক সন্তান নীতি' চালু হওয়ার কারণে শহরের চাকুরিজীবী মানুষ দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার উত্সাহ হারাচ্ছেন।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষে ১৯৮০ সালে 'এক সন্তান নীতি' চালু করে চীন। তখন এই নীতির বিরুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠলেও এক বছরের মধ্যে দারুণ সুফল পায় চীন। ১৯৪৯ তে জন্মের হার যেখানে এক হাজারে ২২৭ ছিল, ১৯৮১ নেমে আসে ৫৩ জনে।
কিন্তু চীন সরকাররের ব্যক্তি স্বাধীনতায় 'নাক গলানো নীতি'র সাইড এফেক্ট পড়তে শুরু করেছে। এই মুহূর্তে পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে বেশী শ্রম নষ্টের হার চীনে। ২০১৪ চীনের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৩০ লক্ষ লোকের অভাব দেখা যাচ্ছে। জন্ম নিয়ন্ত্রণের হার অত্যাধিক কমে যাওয়ায় বাড়ছে বয়সের ব্যবধান। ২০৩০ মধ্যে চীনের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পাবে বয়সের ব্যবধান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের অর্থনীতির উন্নতির অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই 'এক সন্তান নীতি'। ভবিষ্যতে চীনে সামাজিক, অর্থনৈতিক বৈষম্য দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই মুহূর্তে বেইজিং, সাংহাইয়ে 'এক সন্তান নীতি' লঘু করেছে চীন সরকার। গ্রামের দিকে কোনও পরিবারে প্রথম সন্তান মেয়ে হলে, দ্বিতীয় সন্তানের আবেদন করতে পারবে এমন ছাড়ও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে সেভাবে কোনও সুফল মিলছে না। বরং তারা আগের এক সন্তান নীতিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য মনে করছেন।
বিডি-প্রতিদিন/০৬ এপ্রিল, ২০১৫/মাহবুব