শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
রোহিঙ্গা সংকট

ফের বসছে নিরাপত্তা পরিষদ

কফি আনানকে আমন্ত্রণ, ইইউর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে, তথ্য গোপনে সেই রেনেটাকে জাতিসংঘে তলব, সুচি বললেন বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতার প্রক্রিয়া, নতুন রোহিঙ্গা ৫ লাখ ৩৬ হাজার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার যাচ্ছেন ২৩ অক্টোবর

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ফের বসছে নিরাপত্তা পরিষদ

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আজ শুক্রবার আবারও বৈঠকে বসছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। অনানুষ্ঠানিক ও রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্য, আঞ্চলিক দেশ ও সংগঠনগুলোকে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের বক্তব্য শোনা হবে। এতে কফি আনানেরও উপস্থিত থাকার কথা। বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক চ্যানেল নিউজ এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নৃশংসতার বিষয়ে তদন্ত করে একটি রিপোর্ট দেয় আগস্টের শেষে। তাতে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। বলা হয়, তাদের ওপর সেনাবাহিনী কঠোর নির্যাতন করেছে। ওই রিপোর্ট সময়কে কেন্দ্র করে ২৫ আগস্ট সৃষ্টি করা হয় রাখাইনে সহিংসতা। শুক্রবারের ওই বৈঠকে কফি আনান বা তার কমিশনের মুখ থেকে নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা মুসলিমদের দুর্ভোগের বিষয়ে বিস্তারিত শুনতে চায়। এর আগেও দুই দফা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে নিরাপত্তা পরিষদ। তবে সর্বশেষ জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সময়ে শুধু রোহিঙ্গা ইস্যুতে উন্মুক্ত বিতর্ক হয়েছে নিরাপত্তা পরিষদে। ওই বিতর্কের পর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবরোধ দেওয়া হতে পারে বলে আন্দাজ করা হলেও শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। শুধু উদ্বেগ জানানো হয়েছে। দাবি তোলা হয়েছে অবরোধের। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কিছুই হয়নি। ফলে শুক্রবারের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের ফল কী তা অনুমান করা কঠিন। এদিকে গতকাল মিয়ানমারের নেত্রী অং সাং সুচি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফেরতের প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। আর জাতিসংঘ আইওএম জানিয়েছে, নতুন রোহিঙ্গা এখন ৫ লাখ ৩৬ হাজার। মিয়ানমার যাচ্ছেন ফেল্টম্যান : রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করতে চার দিনের সফরে আজ মিয়ানমার যাওয়ার কথা জাতিসংঘের রাজনৈতিক বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা জেফ্রে ফেল্টম্যানের। জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্তিতিতে করণীয় নির্ধারণে মিয়ানমারের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন জেফ্রে। মিয়ানমারে জাতি নিধন চলছে বলে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। পুড়ে শেষ হয়ে যাওয়া রাখাইনে সাহায্য গোষ্ঠীর পূর্ণাঙ্গ প্রবেশাধিকার দিতে বলেন। পাশাপাশি পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের নিরাপদে দেশে ফেরত নেওয়ার পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।

ইইউ নিষেধাজ্ঞা সোমবার : রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সামঞ্জস্যহীন ক্ষমতা প্রয়োগের প্রতিবাদে মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইতিমধ্যেই এই চুক্তিটি ইইউর রাষ্ট্রদূতরা অনুমোদন করেছেন এবং সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে তা স্বাক্ষরিত হবে। এতে বলা হয়েছে, এত মানুষের পালিয়ে যাওয়া ‘সংখ্যালঘুদের উত্খাতের বিষয়টিকেই ইঙ্গিত দেয়’। উভয় পক্ষকে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে চুক্তিটিতে বলা হয়েছে, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর সামঞ্জস্যহীন শক্তিপ্রয়োগের ঘটনায় ইইউ এবং এর সদস্য দেশ মিয়ানমারের সেনাপ্রধান ও শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সবধরনের আমন্ত্রণ বাতিল করছে এবং সবধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পুনর্বিবেচনা করা হবে।’ মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানিতে আগে থেকেই ইইউর নিষেধাজ্ঞা ছিল। প্রস্তাবিত চুক্তিতে বলা হয়েছে, যদি সংকটের উন্নতি না ঘটে তাহলে আরও পদক্ষেপের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। অবশেষে সরছেন বিতর্কিত রেনেটা ডেসলক : বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির দায়িত্বে থাকাকালীন ওয়ান ইলেভেন সময়কালে বিতর্কিত ভূমিকা নেওয়া রেনেটা ডেসলক মিয়ানমারে গিয়েও বিতর্কিত হয়েছেন। তিনি মিয়ানমার সেনা কর্মকর্তাদের মন রক্ষায় রোহিঙ্গা নিয়ে জাতিসংঘের নীতি বাস্তবায়নে অনাগ্রহী ছিলেন। কোনো কথা বলতেন না রোহিঙ্গা নিয়ে। বিবিসির সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে উঠে আসে তার বিতর্কিত ভূমিকার আদ্যপান্ত। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, যেখানে নির্যাতন-নিপীড়ন হয়েছে সেসব রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা, মানবাধিকার কর্মীদের সেখানে যেতে বাধা দিতেন রেনেটা ডেসলক। এমনকি জাতিসংঘের মিয়ানমার কার্যালয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো কথা বলতেও বারণ কমরছিলেন রেনেটা। বিবিসির গতকাল এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, চলতি অক্টোবরের পর আর মিয়ানমারে থাকছেন না রেনেটা, এ জন্য তাকে জাতিসংঘ সদর দফতরে  ডেকে পাঠানো হয়েছে। তবে জাতিসংঘ বলেছে, কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত রেনেটাকে অন্যত্র স্থানান্তরের সঙ্গে তার কর্মকাণ্ডের  কোনো সম্পর্ক নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার যাচ্ছেন ২৩ অক্টোবর : তিন দিনের সফরে আগামী ২৩ অক্টোবর মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী জানান, সফরে গিয়ে রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করতে অনুমতি চাইব। অনুমতি পাওয়া গেলে রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করব।  রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা শেষে আগামী ২৫ অক্টোবর ঢাকায় ফিরবেন বলেও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর