জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপি চায় নির্বাচনের পর নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভোটে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন। অন্যদিকে যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগেই সনদের আইনি ভিত্তি চায় তাদের মধ্যে রয়েছে সমন্বয়ের অভাব। সমন্বয়হীন এ দলগুলোকে একটি নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে একজোট করার জন্য কাজ করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিতে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে গণপরিষদ নির্বাচনের আদলে আয়োজনের প্রস্তাব করেছে দলটি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করলেও সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখনো মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একপক্ষে বিএনপি, যারা নির্বাচনের পরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সংসদে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চায়। অন্যপক্ষে এনসিপি, গণঅধিকার, জামায়তসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগেই সনদ বাস্তবায়ন চায়। তবে আগে বাস্তবায়ন চাওয়াদের মধ্যে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আলাদা আলাদা অবস্থান রয়েছে। এ পক্ষের কেউ গণপরিষদ, কেউ সংবিধান সংস্কার সভা আবার কেউ চায় গণভোট। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। প্রয়োজনে সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে কর্মসূচি দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি জুলাই সনদকে শুধু একটি রাজনৈতিক সমঝোতা হিসেবে রাখতে চায়, যা পুরোনো কাঠামো, সংবিধান ও আইন পরিবর্তন করবে না। অন্যদিকে, এনসিপি সনদের স্থায়িত্ব ও সাংবিধানিক ভিত্তির জন্য আগামী নির্বাচনকে গণপরিষদ নির্বাচন হিসেবে দেখতে চায়। আমরা আশা করছি, বিএনপি তার রাজনৈতিক অবস্থান থেকে সরে এসে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমাধানের পথ খুঁজবে। তিনি বলেন, সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। আশা করছি, আলোচনার টেবিলেই সমাধান মিলবে। যদি না মেলে তবে সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়টি বিবেচনা করব। অনেক দল এরই মধ্যে আলাদা আলাদা দাবিসহ জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নির্মাণের জন্য কর্মসূচি দিয়েছে। এনসিপি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি রচনায় গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে আপাতত সারা দেশে উঠান বৈঠক কর্মসূচি চালাচ্ছে। দলের যুগ্ম সদস্য সচিব এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া বলেন, একটা দল বাদে অন্য দলগুলো নির্বাচনের আগে সনদ বাস্তবায়ন চাইলেও আলাদা আলাদা পদ্ধতি থাকায় বিএনপির বিপরীতে দাবিটা জোড়ালো হচ্ছে না। যারা নির্বাচনের আগে সনদ বাস্তবায়ন চায় তাদের সবাইকে প্রথমে সনদ বাস্তবায়নের একটা সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি নিয়ে একমত হতে হবে। তিনি বলেন, সব দল যখন একটা পদ্ধতিতে একমত হবে তখন বিএনপির ওপর প্রেশার ক্রিয়েট করা সম্ভব হবে। তখন পক্ষ হবে দুটা। নির্দিষ্ট দুটা পক্ষ হলে সনদ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।