ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে ঘোষিত কর্মসূচির পরিবর্তন করেছে জামায়াতে ইসলামী। ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার কারণে সকালের বিক্ষোভ কর্মসূচি বিকালে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। গতকাল কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, পাঁচ দফা দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ১৮, ১৯ ও ২৬ সেপ্টেম্বর তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। পরে জানা যায়, ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি আমলে নিয়ে বিসিএস পরীক্ষার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার স্বার্থে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অত্যন্ত সচেতন ও দায়িত্বশীল অবস্থান নিয়েছে। তবে বিকালে কর্মসূচি পালন করলে পরীক্ষার কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। সে কারণে ইতোমধ্যে সারা দেশের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে কোনোভাবেই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা যাবে না, কর্মসূচি শুধু বিকালে অনুষ্ঠিত হবে।
পাঁচ দফা দাবি হলো- জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
যুগপৎ কর্মসূচিতে খেলাফত আন্দোলন, জাগপা ও নেজামে ইসলাম : জুলাই সনদের আলোকে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে গতকাল তিনটি রাজনৈতিক দল নিজেদের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দলগুলো হলো- খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি। গতকাল নিজ নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত পৃথক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পৃথকভাবে অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর সব বিভাগীয় শহরে গণসংযোগ এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব সাংগঠনিক জেলায় বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন।
খেলাফত আন্দোলনের সাত দফা : রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে মারকাজুল খেলাফত মাদরাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক, নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদি, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সানাউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সুলতান মহিউদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। সাত দফায় রয়েছে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন, নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামানো, নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২০২৪ এর গণ অভ্যুত্থানের হত্যাযজ্ঞের বিচার, শাপলা শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও আহতদের সুচিকিৎসা প্রদান, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নাচ-গানের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ।
নেজামে ইসলামের পাঁচ দফা : জুলাই সনদের আইনিভিত্তি প্রদান; আওয়ামী দোসর ও আধিপত্যবাদী ভারতীয় এজেন্ট জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণ; জুলাই-শাপলাসহ সব গণহত্যায় দায়ী এবং দুর্নীতিবাজদের বিচার; গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি এবং দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ। গতকাল পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মুসা বিন ইজহার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব বিষয় তুলে ধরেন। শাপলা চত্বরের গণহত্যা, ২৪-এর জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থান এবং পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শাহাদতবরণকরীদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, যাঁদের বীরত্বপূর্ণ সাহসিকতা, সীমাহীন আত্মত্যাগ ও তাজা রক্তের বিনিময়ে আজ দেশ ও জাতি আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের গহিন অন্ধকার থেকে মুক্তি পেয়েছে। একই সঙ্গে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই-সংগ্রামে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
জাগপার সাত দফা : রাজধানীর পল্টনে জাগপা ঢাকা মহানগর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন জাগপা সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের চাওয়া ছিল বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন। কিন্তু আমরা দৃশ্যমান বিচার দেখতে পাচ্ছি না, প্রকৃত সংস্কার বাধাগ্রস্ত হতে দেখছি এবং যেনতেনভাবে এক জাতীয় নির্বাচন বাস্তবায়নের প্রস্তুতি ও রোডম্যাপ দেখতে পাচ্ছি। তাদের দাবিনামায় রয়েছে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং জুলাই সনদের আলোকে জাতীয় নির্বাচন; শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ; সব গণহত্যা ও আওয়ামী আমলে সংঘটিত জুলুম, নির্যাতন, দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমানকরণ; আওয়ামী আমলে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত গোপন অসম সব চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ এবং বাতিল; জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা; উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন; লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ এবং ভারতের প্রভাবমুক্ত জাতীয় নির্বাচন আয়োজন।