পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত দেশনায়কদের একজন তিনি। তবে সেই আলোচনার যতটা না প্রশংসা, তার চেয়ে বেশি নিন্দা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধার পিছনে তারই ছিল প্রধানতম ভূমিকা, পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম মানুষ ছিলেন তিনি। অ্যাডলফ হিটলার সম্পর্কে এমনটা মনে করেন অনেকেই। কিন্তু তার জীবন সম্পর্কে মানুষের কৌতূহলও রয়েছে অনেক।
অবশ্য শুধু জীবন নয়, কৌতূহল রয়েছে হিটলারের মৃত্যু নিয়েও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষ পর্যায়ে তখনই আত্মঘাতী হন হিটলার। সেই মৃত্যু নিয়েও নানা ধোঁয়াশা রয়েছে। এমনকী যে বাঙ্কারে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন, সেই বাঙ্কারটিও বোমা বর্ষণে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এবার বার্লিনের একটি মিউজিয়মের সৌজন্যে পুনরায় সেই বাঙ্কারকে সামনে আনা হয়েছে।
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রাশিয়া, ব্রিটেন এবং আমেরিকার মিলিত বাহিনী যখন বার্লিনে জার্মান বাহিনীকে একেবারে কোণঠাসা করে ফেলে, তখনই উপায়ান্তর না দেখে একটি এয়ার রেড শেল্টারে আশ্রয় নেন হিটলার। সেখানেই ছিল তার শেষ জীবনের কর্মস্থল, যা ফুয়েরারবাঙ্কার নামে ইতিহাসে প্রসিদ্ধ।
বার্লিনের পতন সুনিশ্চিত বুঝতে পেরে রাশিয়ান বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার লজ্জা এড়াতে হিটলার মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন। পরে ফুয়েরারবাঙ্কার পার্শ্ববর্তী এয়ার রেড শেল্টারসহ বোমার আঘাতে ধুলিসাৎ করে দেয়া হয়।
কিন্তু সম্প্রতি বার্লিনের একটি মিউজিয়াম ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে ফুয়েরারবাঙ্কারকে নতুন করে তৈরি করে খুলে দিয়েছে সাধারণ দর্শকদের জন্য। দাবি করা হচ্ছে, যতটা সম্ভব আসলের মতো করেই ফুয়েরারবাঙ্কারের পুনর্নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। তবে এতে যথেষ্ট সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
অনেকেই মনে করছেন, এটা আসলে হিটলারি মতবাদের প্রচার। কেউ কেউ বলছেন, হিটলারের মতো ঘৃণ্য একজন নেতার স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করার দরকারই বা কী!
তবে মিউজিয়মের মালিক উইল্যান্ড জিয়েবেল সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, ‘এটা হিটলারি মতবাদের পুনরুজ্জীবন মোটেই নয়, বরং ইতিহাসের পুনরুজ্জীবন।’
বাঙ্কারের মধ্যে যে ঘরে হিটলার আত্মহত্যা করেন, সেই ঘরটিকেও যতটা সম্ভব ইতিহাস সম্মতভাবে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সেই ঘরের দেওয়ালে ঝোলানো রয়েছে প্রুশিয়ার ফ্রেডেরিক দা গ্রেটের একটি পেইন্টিং। এই ফ্রেডেরিকই ছিলেন হিটলারের আদর্শ।
চলতি বছরের শুরুর দিকেও একবার হিটলার এসেছিলেন সংবাদপত্রের শিরোনামে। সেই সময়ে অস্ট্রিয়ায় একদল মানুষ দাবি করেছিলেন, সেই দেশে যে বাড়িতে হিটলার জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেটিকে ভেঙে ফেলা হোক। কিন্তু অস্ট্রিয়ার প্রশাসন জানায়, ‘সেই কাজ করার অর্থ, অস্ট্রিয়ার ইতিহাস থেকে নাৎসি অধ্যায়টিকে মুছে ফেলা’। ফলে বহাল তবিয়তে এখনও রয়ে গেছে হিটলারের আঁতুড়ঘর। এবার পুনর্নির্মিত হল, হিটলারে মৃত্যুস্থলটিও।
বিডি প্রতিদিন/ ৩১ অক্টোবর ২০১৬/ এনায়েত করিম