রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ এখন দখল ও পাল্টা দখলে নতুন মাত্রা পেয়েছে। সপ্তাহ তিনেক ধরে ইউক্রেনের সেনারা রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের প্রায় ১২০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখল করে আছে। অপরদিকে রাশিয়া ইউক্রেনের পোকরভস্ক শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
সমালোচকরা বলছেন, পূর্ব ফ্রন্টলাইনে শক্তি বাড়ানোর পরিবর্তে কুরস্কে সৈন্য পাঠিয়ে, ইউক্রেন পোকরভস্কসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোকে বিপদে ফেলেছে। পোকরভস্ক শহরটি ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ ও রসদ কেন্দ্র। পোকরভস্কে একটি প্রধান রেলওয়ে স্টেশন এবং বড় রাস্তা থাকায় তা পূর্ব ফ্রন্টলাইনে ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া এমন এক সময়ে এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ লাভ করে চলেছে যখন ইউক্রেনীয় সেনারা সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে। ফ্রন্টলাইন পরিদর্শনকালে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল ওলেক্সান্ডার সিরস্কি বলেন, রাশিয়া তাদের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করছে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে।
‘পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন’, বুধবার স্বীকার করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সামরিক বিশেষজ্ঞ মিখাইলো ঝিরোকোভ সতর্ক করে বলেন, ‘যদি আমরা পোকরভস্ক হারাই, তাহলে পুরো ফ্রন্টলাইন ভেঙে পড়বে।’
এদিকে ইউক্রেন কুরস্কের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণে নিলেও তাতে খুব বেশি সুবিধা হয়নি দেশটির। বরং কুরস্কে মনোযোগ দিতে গিয়ে ইউক্রেন অনেক এলাকা হারিয়ে ফেলছে। শুধু তাই নয় এতে কুরস্ক আক্রমণ গতি হারিয়ে ফেলছে ইউক্রেন।
কেন পোকরভস্ক গুরুত্বপূর্ণ : পোকরভস্ক শহরের পাশেই মিরনোহ্রাদ নামের আরেকটি শহর রয়েছে। যুদ্ধের আগে এই দুটি শহরে ১ লাখেরও বেশি মানুষ বাস করলেও এখন বেশির ভাগই বাস্তুচ্যুত। দোনেৎস্ক অঞ্চলের এ অংশের শেষ বড় শহরগুলোর মধ্যে পোকরভস্ক এবং মিরনোহ্রাদ এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে। অ্যাভডিয়িভকা শহরের নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর থেকে পোকরভস্কের জন্য প্রাণপণে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। ফেব্রুয়ারিতে মাসের পর মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ইউক্রেন অ্যাভডিয়িভকা শহরটি হারায়। পোকরভস্ক থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত অ্যাভডিয়িভকা শহরটি একটি শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল।
অ্যাভডিয়িভকা ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় পশ্চিম দিকে অবস্থিত শহরগুলো এবং সড়কগুলোকে সুরক্ষা দিয়েছিল, যা পুরো ফ্রন্টলাইনে ইউক্রেনের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছিল। কয়েক মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ফেব্রুয়ারিতে অ্যাভডিয়িভকা পতিত হয় এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়, যা ছিল ইউক্রেনের জন্য একটি বড় ক্ষতি।