সরকারি দলের সদস্যরা বিএনপির তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, বিএনপি যতই সন্ত্রাস করুক, যতই হরতাল-অবরোধের ডাক দিক, বাংলাদেশে আমরা শতদল ফোটাবই। আর বিরোধী দল গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, সংসদের বর্তমান ও সাবেক সদস্য, আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদদের অনেকেই বাংলাদেশের অর্থ লুটপাট করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বেগমপাড়া, সেকেন্ড হোম, থার্ড হোম তৈরি করেছেন। জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের গতকালের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদ, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, সরকারি দলের তানভীর ইমাম ও হাবিবর রহমান।
কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপি ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে যে তান্ডব চালিয়েছিল তা অবর্ণনীয়। ২০১৫ সালে তারা অবরোধের নামে গাড়িতে আগুন দিয়ে এক শর মতো মানুষ হত্যা করেছিল। হরতাল-অবরোধের ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে খালেদা জিয়া বাসায় ফিরে গিয়েছিলেন। এই সেদিনও তারা বলেছিল, ১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়ার নির্দেশে। কিন্তু শেখ হাসিনার উদারতার কারণে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। বিএনপি যতই সন্ত্রাস করুক, যতই হরতাল-অবরোধের ডাক দিক, বাংলাদেশে আমরা শতদল ফোটাবই।’ তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, যে লক্ষ্যগুলোর কথা বলা হয়েছিল, সে সব লক্ষ্য আমরা অর্জন করেছি। এই অর্জন সারা পৃথিবীতে নন্দিত, প্রশংসিত হচ্ছে। এর আগে বিএনপি যখন ক্ষতায় ছিল সারা দেশে তাদের অপশাসনে গণতন্ত্র ছিল বিপন্ন। তারা লুটপাটের অর্থনীতি চালু করছিল। অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যার রাজত্ব কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আড়াই কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমা থেকে বের করে নিয়ে এসেছে।’ এ সময় তিনি বিশ্বখ্যাত ইংরেজি সাপ্তাহিক নিউজ উইক ও ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘এই সংসদে এমপি হওয়ার সুবাদে অনেকেই হয়তো শত শত বা হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, একাধিক গাড়ি, বাড়ি, অট্টালিকার মালিক হয়েছেন। কিন্তু যেদিন থেকে আমি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করলাম, সেদিন থেকে আমার জীবনের মোড় পাল্টে গেল।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, সেটা আমরা অস্বীকার করি না। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপশি সরকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ন্যায্যমূল্যের কার্ড দিচ্ছে, এখানে মারাত্মক অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি হচ্ছে। এই কার্ডগুলো ৮০ ভাগ দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেওয়া হচ্ছে। চাইলে ভূরি ভূরি প্রমাণ আছে।’ তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ ও অসাধু ব্যবসায়ী সব সময় মানুষের কষ্টকে পুঁজি করে লুটপাট করে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, আগেও বলেছি আজকেও দাবি করছি, সেরা এসব দুর্নীতিবাজ, লুটেরাকে আইনের আওতায় এনে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে কয়েকজনকে সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করেন। আমি হলফ করে বলতে পারি, এতে দুর্নীতি অনেক কমে যাবে। আশা করি প্রধানমন্ত্রী, আপনি জাতির পিতার কন্যা, সাধারণ মানুষের কষ্টের কথাগুলো মাথায় রেখে বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন।’ মোকাব্বির খান বলেন, ‘হ্যাঁ, যুক্তরাজ্যে আমার সেকেন্ড হোম আছে সেটা গোপনীয় কিছু নয়। আর এটা নিয়ে আমার বিব্রত হওয়ারও কিছু নেই। আমার সৌভাগ্য হয়েছে আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা, নাম বলতে চাই না, এখানেও আছেন, তারা আমার এই সেকেন্ড হোমে গিয়েছেন। তবে আমি বলতে চাই, লুটপাটের অর্থ তো নয়ই, এমনকি বাংলাদেশ থেকে পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রির কোনো টাকা নিয়েও সেই সেকেন্ড হোম তৈরি করিনি। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে আমি ইংল্যান্ডে অত্যন্ত সফলভাবে ব্যবসা করে সেই বাড়ির মালিক হয়েছি। এখন আমার পরিবার সেই বাড়িতে বসবাস করছে। আমি ইংল্যান্ডে ব্যবসা করতাম। তখন একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সেখানে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেছি, বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করেছি।’