বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

১১ কোটি টাকা ছিনতাই পরিকল্পনায় তিনজন বাস্তবায়নে পাঁচজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বহুল আলোচিত ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা ডাকাতির ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী তিনজন। বাস্তবায়ন করে পাঁচজন। ডাকাতির অপারেশনে অংশ নেয় ১০/১২ জন। তবে মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন মো. আকাশসহ আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৫৮ লাখ ৭ হাজার টাকা। গ্রেফতার বাকি দুজন হলো- মো. হৃদয় ও মো. ইমন ওরফে মিলন। এই দুজনই পেশাদার ডাকাত। সর্বশেষ এই তিনজনসহ মোট ১১ জনকে গ্রেফতার এবং মোট ৭ কোটি এক লাখ ৫৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গত রাতে (সোমবার) রাজধানীর গুলশান কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকা থেকে হৃদয়কে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৪৮ লাখ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নেত্রকোনার দুর্গাপুর এলাকা থেকে আজ (মঙ্গলবার) সকালে মিলন নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করি। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১০ লাখ টাকা। মূল পরিকল্পনাকারীর অন্যতম একজন আকাশকে একটু আগেই খুলনা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক থাকা মূল পরিকল্পনাকারীদের আরেকজন সোহেল রানা একসময় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্লান্ট লিঙ্কের ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতেন।

এ কারণে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের খুঁটিনাটি বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। বাধাহীনভাবেই তারা মাইক্রোবাসটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। পলাতক হলেও তিনি গোয়েন্দা জালের মধ্যেই আছেন।’

গ্রেফতার আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, ডাকাতিতে অংশ নিয়ের্ছিলেন ১০/১২ জন। যখন মানি প্লান্ট লিঙ্কের গাড়ি থেকে ট্রাংকগুলো স্থানান্তর করে ডাকাতদের ভাড়া করা হাইয়েস গাড়িতে তোলা হয়, তখন আকাশ উঠতে না পেরে দৌড়াতে থাকে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই আকাশ সেই ব্যক্তি। ডাকাতির ঘটনায় কেউ ছিলেন পরিকল্পনাকারী, কেউ ছিলেন মোবাইল ও সিম সংগ্রহকারী, কেউ ছিলেন কামলা (ডাকাত) ও কামলা সংগ্রহকারী। পরিকল্পনার বিষয়টি সোহেল রানা প্রথমে গ্রেফতার মিলনের সঙ্গে শেয়ার করেন। ইমন জানান সানোয়ারকে। সানোয়ার দায়িত্ব নেন কামলা (ডাকাত) সংগ্রহের। নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ থেকে এ রকম ৯ জনকে ভাড়া করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। তাদের দায়িত্ব ছিল ওয়ান টাইম ব্যবহারের জন্য ওখান থেকে মোবাইল ও সিম কিনে নিয়ে আসা। এদের মধ্যে একজন গ্রেফতার এনামুল হক বাদশা। তার নামে ২৭টি ডাকাতির মামলা রয়েছে। হারুন অর রশীদ বলেন, ডাকাতদের জানানো হয় হুন্ডির ৬০/৭০ লাখ টাকা ডাকাতি হবে। সহায়তা করবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। এ জন্য এক দিন আগেই তাদের ঢাকায় আনা হয়। কিনে দেওয়া হয় নতুন কাপড় ও জুতা। তবে ডাকাতির দিন মূল হোতা আকাশ টাকা লুটের পর মাইক্রোবাসে উঠতে ব্যর্থ হন। বাকিদের ধারণা ছিল, আকাশ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। তাই ধরা পড়ার ভয়ে কাছে থাকা অপারেশনাল মোবাইল ফোনগুলো রাজধানীর ৩০০ ফিট সড়কে ফেলে দেন তারা। তাড়াহুড়ো করে ট্র্যাঙ্ক ভেঙে টাকা লুট করে ৩০০ ফিটেরই একটি নির্জন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে ব্যাগ বস্তায় করে যার যার মতো টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। আমরা এরই মধ্যে মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করেছি। তাদের সবাইকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে এই ডাকাতির ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কি না বা মানি প্লান্ট লিঙ্কের কেউ জড়িত ছিল কি না তা জানা যাবে।

 

সর্বশেষ খবর