জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ৭৭টি সাংগঠনিক জেলার ২৭টিই মেয়াদোত্তীর্ণ। ১৬টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় সবকটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে কয়েকটির আহ্বায়ক ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, সংসদের বিরোধী দল হিসেবে যেমন তৎপরতা থাকা দরকার তা নেই পার্টিতে। পার্টির চেয়ারম্যান কেন্দ্র থেকে দলকে চাঙা করার চেষ্টা করলেও মূলত সারা দেশে পার্টির কার্যক্রম নেই। সে জন্য দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত সব পর্যায়ের নির্বাচনে দলটি অংশ নিলেও ফলাফল খুবই নাজুক।
জানতে চাইলে পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তৃণমূলকে চাঙা করার জন্য এরই মধ্যে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। অঙ্গ-সংগঠনগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বসছি। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পার্টির প্রেসিডিয়ামের সভা অনুষ্ঠিত হবে। ১০ মার্চ বর্ধিত সভা। সভায় ৭৭টি জেলা থেকে দায়িত্বশীলরা ঢাকায় আসবেন। এরপর এক মাস সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলবে। মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার কমিটি গঠনের জন্য তিন মাসের সময় বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে অনেক কাজ করা সম্ভব হয়নি। এখন আমরা বেকার সমস্যা, শিক্ষা ব্যবস্থাসহ নানান বিষয় নিয়ে সারা দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরব। এ ছাড়া এরশাদ শাসনামলের নানান উন্নয়ন তুলে ধরে আগামীতে ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করব। জানা যায়, দীর্ঘদিন মেয়াদোত্তীর্ণ পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিতে পরিবর্তন আনতে পারেনি দলটি। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের ওয়ার্ড এবং থানা কমিটি নেই। নামকাওয়াস্তে কমিটিতে যারা আছেন তারা সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়। জাতীয় পার্টির কর্মকান্ড বনানী কার্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকলেও দেশব্যাপী সাংগঠনিক কর্মকান্ড তেমন চোখে পড়ে না। অতিরিক্ত মহাসচিবদের নেতৃত্বে ৮টি বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের কার্যক্রমে খুশি নন দায়িত্বশীলরা। সম্প্রতি অতিরিক্ত মহাসচিবদের বৈঠকে বিষয়টি উঠে এসেছে। এ জন্য পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু নিজেই প্রতিটি জেলার কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। এরই মধ্যে কয়েকটি জেলার কর্মসূচিতে তিনি অংশ নিয়েছেন। আর বিভাগীয় কর্মসূচিতে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের উপস্থিত থাকবেন। নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন, সংসদে মাঝে-মধ্যেই সরব হয়ে উঠে জাতীয় পার্টি। সংসদের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে রাজপথে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি নেই। সংসদে জাতীয় পার্টির ২৪ জন সংসদ সদস্য থাকলেও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং লিয়াকত হোসেন খোকা ছাড়া অন্য এমপিদের পার্টির কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পদচারণা নেই বললেই চলে। অভিযোগ রয়েছে, দলীয় সিংহভাগ এমপির সঙ্গে তৃণমূলের সুসম্পর্ক নেই। সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রাধান্য দেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের। তারা বলছেন, দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের জাতীয় পার্টিতে অবমূল্যায়ন, পার্টির চেয়ারম্যান-কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট, পদন্ডপদবি ও কমিটি গঠন নিয়ে কেন্দ্র থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নেতাদের কোন্দল-গ্রুপিং সারা দেশে কার্যক্রমে সফলতা না আসার অন্যতম কারণ। তারা বলেন, এইচ এম এরশাদের জীবদ্দশায় পার্টি কয়েকটি ভাগে ভাগ হলেও তাঁর মৃত্যুর পর দল এখনো অনেকটাই এক। এ অবস্থায় দলকে শক্তিশালী করার সুযোগ রয়েছে। বিষয়টি কাজে লাগাতে পারলে পার্টির আগামীতে ভালো করার সুযোগ আছে। সবাইকে নিয়েই দল করতে হবে। যাদের পার্টিতে অবদান রয়েছে তাদের পার্টিতে ফেরাতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ