কখন থেকে মানুষ ক্রিটিকাল এনালাইসিস শুরু করবে এ নিয়ে অনেকে বিতর্ক তুলতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে একজন শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই তার মধ্যে ক্রিটিকাল এনালাইসিস শুরু হয়। সে একজন আপনজনকে অনুভব করতে শেখে। তার আবেগ, হাসি-কান্না আর অনুভূতিকে বুঝতে পারে। এক ধরনের অদৃশ্য বন্ধন গড়ে ওঠে। আর সেই অদৃশ্য বন্ধনের মানুষটি হচ্ছে তার মমতাময়ী মা। তবে এ বিশ্লেষণের প্রক্রিয়াটি পুরোপুরিভাবে কার্যকর হয় একজন শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই। যেমন মা যখন সন্তানের সঙ্গে কথা বলেন, যখন ঘুম পাড়ানি গান শোনান, শিশু যখন হাঁটি হাঁটি পা করে চলতে শুরু করে তখন থেকেই ক্রিটিকাল এনালাইসিসের প্রক্রিয়াটি আরও পূর্ণতা লাভ করে। কারণ একজন শিশু যখন কথা বলতে শুরু করে, আনন্দে নেচে ওঠে আর কারও সাহায্য ছাড়া হাঁটতে শুরু করে তখন বোঝা যায় শিশুটি প্রকৃতি, মানুষ আর তাদের জীবনাচরণকে বিশ্লেষণ করে তার মধ্যে এ সক্ষমতা গড়ে তুলেছে। ফলে শিশুটির শেখার আগ্রহ বেড়ে যায়। এটা তার শিক্ষার হাতেখড়ি বলা যায়। কিন্তু ভোগবাদী ও বস্তুবাদী শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে যখন সে পদার্পণ করে তখন তার ক্রিটিকাল এনালাইসিস করার যে সক্ষমতা গড়ে উঠেছিল তা রুদ্ধ হয়ে যায়, ফলে শিক্ষাকে প্রকৃত অর্থে গ্রহণ করার পরিবর্তে তার মধ্যে কৃত্রিম শিক্ষা গ্রহণের প্রবণতা বাড়ে। বইয়ের বোঝা তার মধ্যে জ্ঞান সৃষ্টির উপাদান হিসেবে কাজ না করে তা এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করে।
ফলে শিক্ষা তার মূল উদ্দেশ্য হারায়। প্রশ্ন হতে পারে, তার মধ্যে প্রকৃতিগতভাবে ক্রিটিকাল এনালাইসিস করার যে সক্ষমতা জন্মের আগে থেকেই তৈরি হয়েছিল, তা থেকে সে কেন বিচ্যুত হয়ে পড়ল? তার বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সেটিও তো বেড়ে ওঠার কথা। প্রকৃতপক্ষে এমনটিই ঘটার কথা ছিল; কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থায় গলদের কারণে তা তার গতিপথ হারায়। এর পরিণতিতে শিক্ষিত হয়েও মানুষের মধ্যে স্বশিক্ষা থাকে না। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষাকে সহজ করে জীবনমুখী করে তোলা। এটি সম্ভব হলে ক্রিটিকাল এনালাইসিস তার বাড়ার সক্ষমতা বজায় রেখে শিক্ষিত মানুষের মধ্যে স্বশিক্ষার শেকড় শক্ত করে ধরে রাখত। আর প্রকৃত শিক্ষার মূল্য এখানেই। শিক্ষাকে যদি প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হতো, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত করা হতো, বিজ্ঞানকে যদি হাতে কলমে আনন্দ ও সৃষ্টির অনুসর্গ হিসেবে চিন্তা করা হতো, জীবন, মানুষ, বাস্তবতাকে চেনা ও জানার আগ্রহ সৃষ্টির প্রয়াস থাকত তবে ক্রিটিকাল এনালাইসিস করার সক্ষমতা বাড়তে থাকত। যা শিশুকে আনন্দপূর্ণ জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে একদিন পরিপূর্ণ একজন মানুষে পরিণত করত। হয়তো একদিন তেমনটিই ঘটবে। কারণ আমরা আশাবাদী আর হার না মানা এক বীর জাতি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন
 
                         
                                     
                                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        