রানী ভিক্টোরিয়া জন্মেছিলেন ১৮১৯ সালের ২৪ মে। রানীর মুকুট মাথায় দেওয়ার পর ভিক্টোরিয়ার প্রথম নির্দেশ ছিল, আমাকে এক ঘণ্টা একা থাকতে দাও। ইতিহাসের সবচেয়ে খ্যাতিমান রানীদের একজন তিনি। তাঁর সময়ই ব্রিটেনে শিল্পায়নসহ নানা ক্ষেত্রে নাটকীয় সব পরিবর্তন এসেছিল। ব্রিটেনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ উপনিবেশ ভারতেরও সম্রাজ্ঞী হয়েছিলেন। তিনি ভারতবর্ষের মহারানী...
রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলটি ইতিহাসে ভিক্টোরীয় যুগ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। কারণ এ রানীর সময়ই ব্রিটিশ সংস্কৃতিতে নাটকীয় সব পরিবর্তন এসেছিল। তার প্রভাব এমনই ছিল যে, তার শাসনামলের আসবাব, পোশাক, দালানকোঠা সবকিছুর ক্ষেত্রেই ‘ভিক্টোরীয়’ বিশেষণ ব্যবহৃত হয়। তার মানে এই নয় যে, রানী ভিক্টোরিয়া এসব ব্যবহার করেছেন বা এ ধরনের কিছু ব্যবহার করছেন! তার সময়ে সব ধরনের ট্রেন্ডই ভিক্টোরিয়ান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে ইতিহাসে। যেমন রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলের ফ্যাশনই ভিক্টোরীয় পোশাক হিসেবে পরিচিত। এ মহীয়সী রানীর শাসনামলেই সবচেয়ে বেশি বিস্তৃতি ঘটেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্পায়ন, বাষ্পীয় ইঞ্জিন এবং রেলের প্রসার, ব্রিটেনের পাতাল রেল-এসব কিছুই ঘটেছিল রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলে।
কেনসিংটন প্রাসাদে রানী ভিক্টোরিয়ার জন্ম হয়। তার পুরো নাম আলেকজান্দ্রিনা ভিক্টোরিয়া। শিশুকালেই বাবাহারা রানী বড় হয়েছেন মার কাছে। তার মা ডাকতেন দ্রিনা বলে। বাবা এডওয়ার্ড যখন মারা যান, বয়স তখন এক বছরও পূর্ণ হয়নি তার। এরপর মা ভিক্টোরিয়া তাকে একাই বড় করে তোলেন। একজন জার্মান গৃহশিক্ষিকা ছোট থেকেই জার্মান এবং ইংরেজি দুই ভাষায়ই পারদর্শী করে তোলেন ভিক্টোরিয়াকে। রানীর মুকুট মাথায় দেওয়ার পর তার প্রথম নির্দেশ ছিল, আমাকে এক ঘণ্টা একা থাকতে দাও। ১৮৩৭ সালে রাজা চতুর্থ উইলিয়াম মারা যাওয়ার পর খুব সকালে ভিক্টোরিয়াকে জানানো হয় তিনি এখন ব্রিটেনের রানী। কেমন ছিল সেই মুহূর্তটা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। সদ্য প্রয়াত রাজার জন্য শোক নাকি রানী হওয়ার আনন্দ কোনটা প্রাধান্য পেয়েছিল রানীর কাছে! রানী হওয়ার পরপরই রাজপরিবারের সদস্য থেকে অনন্যসাধারণ হয়ে ওঠেন রানী ভিক্টোরিয়া। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ রানীর সঙ্গে দেখা করেন। ২৮ জুন প্রথা অনুযায়ী ওয়েস্ট মিনস্টার অ্যাবেতে রানীর মাথায় মুকুট পরিয়ে দেওয়া হয়। বিশাল সাম্রাজ্যকে আরও বিশালতায় পরিণত করেন রানী। ভারতে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে বহু ইউরোপীয় মারা যায়। এরপরই ব্রিটিশ সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে সরাসরি ভারতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ১৮৭৭ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রয়েল টাইটেল অ্যাক্ট পাসের মাধ্যমে ভারতের সম্রাজ্ঞী হন রানী ভিক্টোরিয়া। আমাদের উপমহাদেশে রানী ভিক্টোরিয়া হয়ে উঠেছিলেন সুপরিচিত। শুধু ভারতবর্ষই নয়, ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক আগ্রাসী শাসনের কারণে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও আফ্রিকা মহাদেশের বিশাল অংশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। এ বিশাল সাম্রাজ্যের শাসনভার তার হাতে থাকায় ভিক্টোরিয়া রানী থেকে হয়ে ওঠেন মহারানী। তখন ইউরোপের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামায়নি ইংল্যান্ড। একের পর এক ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৃদ্ধি করে চলছিল সাম্রাজ্যের সীমানা। রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলেই শিল্প বিপ্লবের বিশাল প্রসার ঘটেছিল ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়া দেশগুলোতে। ১৮৬১ সালের ডিসেম্বরে টাইফয়েড আক্রান্ত হয়ে মারা যান রানী ভিক্টোরিয়ার স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্ট। স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিন পর জন ব্রাউন নামের এক স্কটিশ ভৃত্যের সঙ্গে বেশ অন্তরঙ্গ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে জানা যায়। ১৮৬৮ সালে ইংল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম গ্লাডস্টোনের সঙ্গে ভিক্টোরিয়ার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছিল। ব্রিটেনের আইন প্রণীত হতো ব্রিটিশ সংসদে। সরকার কী করতে চলেছে তা জানাতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীরা রানীর সঙ্গে দেখা করতেন। সামরিক প্রসঙ্গে নাক গলানোর ক্ষমতা ব্রিটেনের রাজপরিবারের ছিল না। তবুও রানী ভিক্টোরিয়া সৈন্যদের শীত থেকে বাঁচাতে মোজাসহ নানা সাহায্য উপকরণ পাঠান। যুদ্ধে স্বামী হারানো নারীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে চিঠি লেখেন রানী ভিক্টোরিয়া। তিনিই সৈন্যদের সম্মানিত করতে পদক চালু করেন।
১৮৮৭ সালে তার শাসনক্ষমতার ৫০ বছর পূর্তি এবং ১৮৯৭ সালে ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ইংল্যান্ডজুড়ে।
১৮৪০ সালে এডওয়ার্ড অক্সফোর্ড নামে ১৮ বছর বয়সী এক তরুণ লন্ডনের রাস্তায় রানীর ঘোড়ার গাড়ি লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোড়ে। বিকৃত মস্তিষ্কের যুক্তিতে সেই তরুণ ছাড়া পেয়ে যায়। ১৮৪২ সালে জন উইলিয়াম নামে আরেক তরুণ দুবার রানীকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। সেই তরুণও আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়। ১৮৪৯ সালে এক ক্ষুব্ধ আইরিশ নাগরিক রানীর ঘোড়ার গাড়ির ওপর হামলা চালায়। পরের বছর রবার্ট পেট নামে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তা লাঠি নিয়ে রানীর ওপর হামলা চালান। ১৮৮২ সালে স্কটল্যান্ডের এক বিখ্যাত কবি রানীর ঘোড়ার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এটি ছিল রানীকে হত্যার লক্ষ্যে তার তৃতীয় প্রচেষ্টা। তাকেও রেহাই দেওয়া হয়। এসব হত্যা প্রচেষ্টা বরং রানীর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছিল। ১৯০১ সালের ২২ জানুয়ারি তিনি অসবর্ন হাউসে পরলোকগমন করেন।
ভিক্টোরিয়া বনাম এলিজাবেথ
ব্রিটিশ সিংহাসনে সবচেয়ে দীর্ঘসময় আসীন থাকার ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়েছিলেন রানী ভিক্টোরিয়া। পরবর্তীতে এই রেকর্ড ভাঙেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এদিক থেকে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন রানী ভিক্টোরিয়াকে। ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রভাবশালী এই দুজন রানীর মধ্যে আশ্চর্য কিছু মিল আছে, আবার অমিলও রয়েছে। রানী ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন ১৮ বছর বয়সে এবং ৬৩ বছর সাত মাস দুদিন তিনি সিংহাসনে ছিলেন। অন্যদিকে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২৫ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন এবং রানী ভিক্টোরিয়ার রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছেন ইতিমধ্যেই। রানী ভিক্টোরিয়ার আমলে রাজ কোষাগার থেকে ছাড়া হয় আড়াইশ কোটি মুদ্রা। আর রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের আমলে এ পর্যন্ত ছাড়া হয়েছে ৬৮০ কোটি মুদ্রা। রানী ভিক্টোরিয়া যেদিন রানীর মুকুট পরেন সেদিন লন্ডনের রাস্তায় উৎসবে যোগ দিতে জড়ো হয়েছিলেন চার লাখ মানুষ। আর রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসনে বসার দৃশ্য টেলিভিশনে প্রচার করা হয় এবং তা দেখেন ব্রিটেনের ২ কোটি ৭০ লাখ মানুষ। রানী ভিক্টোরিয়া বিয়ে করেন প্রিন্স অ্যালবার্টকে ১৮৪০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে প্রিন্স ফিলিপের বিয়ে হয় ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর ২১ বছর বয়সে। রানী ভিক্টোরিয়ার আমলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বেশি বিস্তার ঘটে। এদিক দিয়ে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ পিছিয়ে পড়েছেন একেবারে। কারণ এলিজাবেথের আমল এখনো চলছে কিন্তু সাম্রাজ্য বর্তমানে সংকুচিত হতে হতে একেবারে ছোট হয়ে এসেছে। তিনি যুক্তরাজ্য এবং আরও ১৫টি কমনওয়েলথ দেশ ও ভূখণ্ডের সরকার প্রধান। রানী ভিক্টোরিয়া তার মেয়াদকালে ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রীর বদল হতে দেখেছেন। এলিজাবেথের মেয়াদকালে এ পর্যন্ত ব্রিটেনে ১২ জন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। রানী ভিক্টোরিয়ার নামে ব্রিটেনে মোট ১৫৩ রাস্তার নাম রাখা হয়েছে। আর রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের নামে আছে ২৩৭টি রাস্তা।
ইউরোপজুড়ে সবাই ছিলেন আত্মীয়
তার শাসনকালে যুদ্ধ এড়িয়ে অনেকটা স্থিতিশীল সময় কাটিয়েছে ব্রিটেন। রানীর বিয়েটা ছিল দারুণ ঘটনা। প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য অনুপ্রেরণীয় ভিক্টোরিয়ার ১৭তম জন্মদিনে জার্মানি থেকে তার আত্মীয়রা বেড়াতে আসেন। তাদের মধ্যে ছিলেন তার খালাতো ও মামাতো ভাই-বোনেরা। এদের মধ্যে অ্যালবার্টকে খুব পছন্দ করেছিলেন ভিক্টোরিয়া...
ইউরোপের সবাই ছিল রানীর আত্মীয়। রানী ভিক্টোরিয়ার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সন্তান আর মা ছিলেন জার্মান রাজপরিবারের সন্তান। রানীর ৯ ছেলেমেয়ের সবাই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাজকুমার ও রাজকুমারীদের বিয়ে করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, ইউরোপের প্রায় প্রতিটি রাজপরিবারে রানী ভিক্টোরিয়ার নাতি-নাতনি কিংবা পুতি রয়েছে। ইউরোপের রাজপরিবারগুলোর সঙ্গে আত্মীয়তার এ সম্পর্ককে কূটনৈতিকভাবেও ব্যবহার করেছিলেন তিনি। ফলে তার শাসনকালে যুদ্ধ এড়িয়ে অনেকটা স্থিতিশীল সময় কাটিয়েছে ব্রিটেন। রানীর বিয়েটা ছিল দারুণ ঘটনা। প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য অনুপ্রেরণীয় ভিক্টোরিয়ার ১৭তম জন্মদিনে জার্মানি থেকে তার আত্মীয়রা বেড়াতে আসেন। তাদের মধ্যে ছিলেন তার খালাতো ও মামাতো ভাইবোনরা। এদের মধ্যে অ্যালবার্টকে খুব পছন্দ করেছিলেন ভিক্টোরিয়া। কিন্তু এ অ্যালবার্টকেই রানী হওয়ার পর ভিক্টোরিয়া বিয়ে করেন। কিশোরীবেলা থেকেই সুপুরুষ আলবার্টের প্রেমে পড়েছিলেন রানী অনেকে দাবি করেন। কিন্তু রানীর প্রেম সে সময় সাধারণ মানুষ খুব একটা মেনে নেওয়ার মতো অবস্থায় ছিল না। তখনকার সমাজ ব্যবস্থা এখনকার মতো ছিল না। মজার ব্যাপার, প্রথা ভেঙে রানীই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কারণ কারও পক্ষে ব্রিটেনের রানীকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া তখন সম্ভব ছিল না। অ্যালবার্ট কখনই ব্রিটেনের রাজা হননি। স্বামী অ্যালবার্টের মৃত্যুর পর সরকারি দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন রানী। পরে অবশ্য রানী সরকারি দায়িত্ব পালন শুরুর মাধ্যমে আবার মানুষের আস্থা অর্জন করেন।
বিচ্ছেদ বেদনায় রানী ভিক্টোরিয়া ৪০ বছর শোক পালন করেন
ইংল্যান্ডের সিংহাসনের রাজমুকুট পরেন ভিক্টোরিয়া। তখন তার বয়স মাত্র ১৮। ১৮৩৭ সালে যখন তিনি ক্ষমতায় বসেন তখন ইংল্যান্ড এতটা উন্নত ছিল না। ক্ষমতা সামলানোর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পুরো মন দিয়েছেন তিনি। তার জীবনে প্রেম আসে আরও পরে। তিন বছর পর ১৮৪০ সালে রানী ভিক্টোরিয়া তার ফার্স্ট কাজিন প্রিন্স অ্যালবার্টকে বিয়ে করেন। প্রিন্স অ্যালবার্ট ছিলেন বেশ সংস্কৃতিমনা। তাদের এই বিয়েকে খুব একটা ভালো চোখে দেখেননি অনেকে। এ নিয়ে অনেক কানাঘুষাও চলত প্রাসাদে। তবে রানীর প্রতিপত্তির সামনে সেসব খুব বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। অন্যদিকে অ্যালবার্ট মানুষ ছিলেন অসাধারণ। তিনি রানীকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। যে কারণে তাদের মধ্যে কখনো কোনো সমস্যা শেকড় গেড়ে বসতে পারেনি। রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরেই তাদের প্রেম বটবৃক্ষের মতো ডালপালা মেলেছিল। কিন্তু রোগ-মৃত্যু রাজা-রানীকেও ছাড় দেয়নি। ১৮৬১ সালে টাইফয়েডে আক্রান্ত হন অ্যালবার্ট। বেশ কিছুদিন ভুগে মারা যান তিনি।
এ দুর্ঘটনা রানীকে পুরোপুরি আক্রান্ত করে। তিনি নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেন। নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখেন। রাজ্যপাট সামলানোতেও তিনি পিছিয়ে পড়েন। স্বামীর মৃত্যুর শোক রানীকে আবৃত করে ফেলে। রানী ভিক্টোরিয়া সেই শোকে পরের তিনটি বছর একবারের জন্যও লোকসমক্ষে আসেননি। তবে ভালোবাসার মানুষের বিচ্ছেদ বেদনা বুঝতে চায়নি সাধারণ মানুষ। রানী যে দিন শেষে একজন রমণী একজন প্রিয়তমা স্ত্রী এটা বুঝতে চাইত না জনগণ। এ নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন রানী। ১৮৬৬ সালে রানী পুনরায় কাজ শুরু করেন। ১৯০১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া শোকের কালো পোশাক পরিধান করতেন। প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত তার জন্য শোক করেছেন।
রাজশাহীর আম পছন্দ করেছিলেন রানী
রানী ভিক্টোরিয়ার আমলে আমাদের উপমহাদেশ ব্রিটিশদের শাসনে ছিল। রানী ভিক্টোরিয়া তখন এই আম খেতে চেয়েছিলেন। সে সময় ব্রিটিশ পরিবারের এত আম দেখার সুযোগ ছিল না। তখন রানী আম খেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখনো খাবার কিংবা ফল ফ্রিজিং করার পদ্ধতি আবিষ্কার হয়নি। আর আমাদের উপমহাদেশ থেকে ইংল্যান্ডের দূরত্ব অনেক। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশ। চার-পাঁচ মাস লেগেছিল রানীর জন্য আম পাঠাতে। তাই সব আম পচে গিয়েছিল। পরে আবার পাঠানোর জন্য রানী বলেছিলেন।
আর এ আমের কথা রানী শুনেছিলেন আবদুল করিমের কাছ থেকে। করিমকে রানী পছন্দ করতেন তা আগেই বলা হয়েছে উপরে। এই করিমের স্ত্রী ও শাশুড়ির সম্মানে রানী রাজপ্রাসাদে আলাদা অনুষ্ঠান করেন রানী। বোরকা পরেই করিমের স্ত্রী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি বসার সুযোগ পেয়েছিলেন রানীর পাশে। এতে অবশ্য রাজকর্তারা ক্ষুব্ধ হন।
ঘটনা হলো একদিন এই করিম রানীর কাছে ভারতীয় আমের গল্প করেছিলেন। আমের স্বাদ ও গুণাগুণ ব্যাখ্যা করেছিলেন। সঙ্গে এটাও বলেছিলেন এই উপমহাদেশের মধ্যে রাজশাহীর আম হলো সেরা। আমের নানা জাতের কথাও বলেছিলেন রানীকে। এর আগে রানী কোনো দিন আম দেখেননি। তাই রানী নির্দেশ দেন উপমহাদেশ থেকে আম পাঠাতে। নির্দেশ অনুযায়ী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ভারতে বিশেষ প্রতিনিধি পাঠান আম নিতে। একটি আম বিশেষ প্যাকেটে নেওয়া হয় রানীর সামনে। রানী আম দেখে বিস্মিত হন।
কাটার নির্দেশ দেন। কিন্তু দুই মাস জাহাজে রাখা আমটি নষ্ট হয়ে যায়। তখনই করিম ছুটে এসে জানান, এই আম খাওয়া যাবে না। কারণ আম নষ্ট। রানী ক্ষুব্ধ হন রাজ কর্মকর্তা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর ওপর। পরবর্তীতে রানী আবারও এই উপমহাদেশ থেকে আম পাঠাতে বলেন। আব্দুল করিমের মাধ্যমে উপমহাদেশের অনেক কিছুই জেনেছিলেন রানী।
অজানা রানী
► রানী হওয়ার পর অ্যালবার্টকে ভিক্টোরিয়া বিয়ে করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রথা ভেঙে রানীই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কারণ কারও পক্ষে ব্রিটেনের রানীকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া সম্ভব ছিল না।
► রানীর মুকুট মাথায় দেওয়ার পর ভিক্টোরিয়ার প্রথম নির্দেশ ছিল, আমাকে এক ঘণ্টা একা থাকতে দাও।
► রানী ভিক্টোরিয়ার ৯ ছেলেমেয়ের সবাই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাজকুমার ও রাজকুমারীদের বিয়ে করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, ইউরোপের প্রায় প্রতিটি রাজপরিবারে রানী ভিক্টোরিয়ার নাতি-নাতনি কিংবা পুতি রয়েছে।
ব্রিটেনের রানী ভিক্টোরিয়ার একজন কাজের লোক ছিল। তার নাম আবদুল করিম। এই করিমের সঙ্গে রানীর প্রেমের সম্পর্ক হয়। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র।
► ১৮২০ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার বয়স যখন এক বছরও পূর্ণ হয়নি তখন বাবা এডওয়ার্ড মারা যান। এরপর শুধু মায়ের আদরেই বেড়ে ওঠেন রানী।
► ভিক্টোরিয়া কখনো স্কুলে যাননি। তার জন্য একজন জার্মান গৃহশিক্ষিকা রাখা হয়েছিল। তাই ছোট থেকেই জার্মান ও ইংরেজি দুই ভাষায়ই পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি।
► বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্পায়ন, বাষ্পীয় ইঞ্জিন এবং রেলের প্রসার, ব্রিটেনের পাতাল রেল- এ সবকিছুই ঘটেছিল রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলে।