জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ তারকার গাওয়া অনেক গানই রয়েছে শ্রোতাদের পছন্দের তালিকায়। নিয়মিত মৌলিক গান প্রকাশ করে যাচ্ছেন জনপ্রিয় এ গায়িকা। স্টেজ শোতেও অনেক ব্যস্ত তিনি। গান ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে- পান্থ আফজাল
এ অস্থির সময় নিয়ে উপলব্ধি কী?
আর ভালো লাগছে না, বড্ড হতাশ লাগছে। অসহায় তো সব সময়ই ছিলাম, এরপরও এতটা একা বোধ হয়নি। এত অস্থির সময়, অথচ পার হচ্ছে না। এত অক্সিজেন, অথচ বাতাস কতটা গুমোট, ভারী। আটকে আছি দম বন্ধ বাস্তবতায়। মনে হচ্ছে কত দিন বাঁচা হয়নি। কেউ একটা সুন্দর গল্প বলুন না, কত দিন হাসা হয়নি, একটা লাইনও গাওয়া হয়নি।
নেট বন্ধ ছিল, সময় কীভাবে কেটেছে?
প্রথম দুই দিন একটু সমস্যা হয়েছে। পরে অবশ্য মানিয়ে নিতে পেরেছি। মানুষ আসলে সব কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারে। আমার আম্মুর বাসায় গিয়েছি। কিছু সিনেমা, নাটক ডাউনলোড করা ছিল সেগুলো দেখেছি। পরিবারের সঙ্গে সময়টা খারাপ কাটেনি। কভিডের সময় লকডাউনে ঘরে ছিলাম সবাই। তখন আবার নেট সুবিধা ছিল। এবার নেট ছিল না। দেশের কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে সাধারণ মানুষ যেমন সাফার করেন, শিল্পীরা আরও বেশি সাফার করেন। কারণ একটু বৃষ্টি হলে শো বাতিল, হরতাল হলে শো বাতিল, একটু মিছিল হলে শো বাতিল। যেকোনো কিছু হলেই শিল্পীরাই ঘরে বসে যায়। তাদের কাজ শুধু বাতিল হয়।
শিল্পীরা তাহলে বেশি সমস্যায় পড়ছেন?
আসলে রাজনৈতিক কারণে আমাদের দেশের শিল্পীরা বেশি সাফার করেন। এমনটি পৃথিবীর কোথাও নেই। আমরা যারা পেশাদার শিল্পী, তারা করপোরেট শোয়ের পাশাপাশি অনেক রাজনৈতিক শোও করি বা করতে হয়। এগুলো কিন্তু সম্মানী নিয়েই করা হয়, কিন্তু এসবের কারণে আমাদের শিল্পীদের রাজনৈতিক তকমা দেওয়া হয়। ক্ষমতার পরিবর্তন হলে আবার ওই শিল্পীদের আর কোনো অনুষ্ঠানে ডাকা হয় না। শিল্পীরা তো কোনো দলের না। শিল্পী তো সবাইকে গান শোনাবে এটাই স্বাভাবিক।
সামাজিক মাধ্যমে শিল্পীদের কাদা ছোড়াছুড়ি...
এগুলো খুবই দুঃখজনক। এখন যেরকম হয় এগুলো আমি কখনো দেখিনি। শিল্পীর সঙ্গে শিল্পীর প্রতিযোগিতা সারা জীবন ছিল। রেষারেষি বা কারও সঙ্গে ঝগড়া হতেই পারে। সেটা পাবলিকলি কেন হবে? সেটাকে পাবলিক করে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পুঁজি করা এগুলো তো নোংরামি। প্রকৃত শিল্পীরা এগুলো করেন না। আসলে শিল্পীদের আরও সহনশীল হওয়া উচিত।
শাফিন আহমেদ, হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল নেই...
শাফিন ভাই এবং জুয়েল ভাইয়ের মৃত্যুতে আমি হতভম্ব হয়েছি। শাফিন ভাই কত বড় মাপের একজন শিল্পী ছিলেন। আমি তো উনাদের গান ছাড়া আমার কৈশোরের কোনো স্মৃতি মনে করতেই পারব না। আমার কলেজ জীবনের পুরোটাই ছিল তাদের গান ঘিরে। তাদের গান শুনে আমি প্রথম প্রেম করতে শিখেছি। শাফিন ভাইয়ের সঙ্গে আমি রিয়েলিটি শোতেও কাজ করেছি। তিনি অনেক বন্ধুবৎসল মানুষ ছিলেন। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। এদিকে কত ছোটবেলা থেকে জুয়েল ভাইকে আমি চিনি, এটা বলতে পারব না। তার প্রথম অ্যালবামে আমার আম্মুর গান ছিল আইয়ুব বাচ্চু ভাইয়ের সুরে। গানের নাম ‘এমন কিছু কথা আছে’ যেটা পরবর্তী সময়ে আমার ইউটিউব চ্যানেলে রিলিজ করেছি। এই গানই আমার সবচেয়ে প্রিয় গানের একটি। সবাই এভাবে চলে যাচ্ছেন, এরপর আমাদের অভিভাবক কে থাকবেন? আমরা কাদের দিকে তাকাব। আমরা অভিভাবকহীন হয়ে যাচ্ছি।
সিনেমার গানে কেন নেই?
সিনেমার গানের সঙ্গে যারা আছেন ওরা মনে হয় আমাকে চেনেন না। ওরা যাদের চেনেন তাদের দিয়েই গান গাওয়ান।
নতুন অডিও গান...
গান তো প্রকাশ করলে যখন-তখন করা যায়। কয়েকটি গান তৈরিই আছে। প্রকাশ করছি না অনেক কারণে। একে তো এখন অস্থির সময় চলছে, শ্রোতারা ট্রেন্ডি গানে মজে আছে। তারা আগে শান্ত হোক, তারপর নতুন গান। আর আমরা চাইলেও তো সস্তা কথার গান করতে পারব না।