ঈদের ছুটি কাটাতে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে হাজার হাজার পর্যটকদের ঢল নেমেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ওইসব পর্যটক তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে এখানে ছুটে এসেছে। তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষের আগমণে এখন উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে ঈদের দিন তেমন পর্যটক না থাকলেও আজ সোমবার সকাল থেকে আগত পর্যটকদের আগমণে পুরো সৈকতে যেন মিলন মেলায় পরিণত হয়। এর ফলে হোটেল-মোটেলসহ পর্যটনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন প্রাণ চাঞ্চল্যতা ফিরে পেয়েছে। অধিকাংশ হোটেল মোটেলের সিট অগ্রিম বুকিং রয়েছে।
এদিকে, অস্বাভাবিক জোয়ারে কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়ক পথে তিনটি ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে পানিতে দুই দফা তলিয়ে থাকায় পর্যটকদের যানবাহন নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তবে সবুজ প্রকৃতির ধারক তালতলী উপজেলার সাথে কুয়াকাটার যোগাযোগ স্থাপন হলে অতিরিক্ত পর্যটকের আগমণ ঘটতে পারে বলে তালতলী উপজেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
কুয়াকাটা ঘুরে দেখা গেছে, ভ্রমণে আসা পর্যটকদের উম্মাদনায় পুরো সৈকত আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করছে। কুয়াকাটা রাখাইন মার্কেট, ঝিনুকের দোকান, খাবারঘর, চটপটির দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়েছে। ঈদের ২য় দিন রবিবার সকাল থেকে বাস, টেম্পু, প্রাইভেটকার মাইক্রোযোগে দলে দলে পর্যটকরা আসতে শুরু করে। নারিকেল বাগান, ইকোপার্ক, জাতীয় উদ্যান, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, সীমা বৌদ্ধ বিহার, সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল খ্যাত ফাতরার বনাঞ্চল, ফকির হাট, গঙ্গামতি, কাউয়ার চর, লেম্বুর চর, শুটকি পল্লী ও সৈকতের জিরো পয়েন্টে শিশু কিশোর যুবক যুবতীসহ নানা বয়সী পর্যটকদের পদচারণায় এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা আমাদের সময় পত্রিকার সহ-সম্পাদক সুলতান মাহমুদ জানান, কলাপাড়ার তিনটি ব্রিজ দ্রুত উম্মুক্ত করা হলে এখানে প্রতিদিন দেশী-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসবে। সরকারিভাবে এখানে পর্যটকদের সুবিধা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে পর্যটন খাত দিয়ে প্রচুর রাজস্ব আদায় করার সুযোগ পাবে সরকার।
ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন মন্টু ঢাকা থেকে সপরিবারে এসেছেন। তিনি বলেন, ঈদের ছুটি কাটাতে আমরা এখানে এসেছি। তবে সারা পথ ভাল ভাবে আসলেও তিনটি ফেরী পারাপারে দুর্ভোগে পরতে হয়েছে। তার পরও কুয়াকাটার সৈকতের অপরূপ দৃশ্য দেখে অসাধারন লাগছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট সেন্টারের ম্যানেজান আবুল হোসেন রাজু জানান, গত দু’দিন ধরে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছে। নৌ-পথে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য আমাদের নৌ-তরী রয়েছে।
আবাসিক হোটেল সৈকত এর সত্ত্বাধিকারী জিয়াউর রহমান শেখ জানান,পর্যটক নির্ভরশীল হোটেল মোটেলগুলো রমজান মাসে একেবারেই বন্ধ ছিলো। এখন পর্যটকদের আগমনে এখানকার হোটেল গুলো কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে পেয়েছে।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরিফ জানান, ঈদের ছুটি উপলক্ষে আগামী ৩০ জুলাই পর্যন্ত আগাম বুকিং রয়েছে। এখনো অনেক পর্যটকরা রুমের জন্য যোগাযোগ করছে।
কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এ এম মিজানুর রহমান বুলেট জনান, অমাবস্যার প্রভাবে জোয়ারের পানিতে কলাপাড়া, হাজীপুর ও মহিপুর ফেরি ঘাট ডুবে যাওয়ায় পর্যটকরা নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। আগামি পর্যটন মৌসুম ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মানাধীন তিনটি ব্রিজ চলাচলের উপযোগী করা হলে কুয়াকাটায় পর্যটকের তিল ধারনের ঠাঁই থাকবে না।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মীর মসিউর রহমান জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে আমাদের পুলিশ বিভিন্ন দর্শনীয় স্পটে টহল রয়েছে।
পাশ্ববর্তি তালতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান মিন্টু হাওলাদার জনানা, আন্দার মানিক নদীর নিশানবাড়িয়া পয়েন্ট মাত্র একটি ফেরী সার্ভিজ চালু হলে তালতলীর পর্যটন স্পট ফকির হাটে পর্যটকরা নির্ভিগ্নে আসা যাওযা করতে পারবে।
কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, পর্যটকদের যাতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয় এ জন্য কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও উপজেলা পরিষেদের পক্ষ থেকে নজরদারী রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ২০ জুলাই, ২০১৫/ রশিদা