ঈদ পরবর্তী উত্তরবঙ্গের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এখনও কাটেনি ঈদের আমেজ। শহর জীবনের কোলাহল থেকে বের হয়ে এসব মানুষ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করছে। প্রতিদিন আসছে মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে স্বপ্ন নয়, অথচ স্বপ্নের মতো সুন্দর নিরিবিলি এক মোহন নয়নাভিরাম মায়াবী স্বপ্নময় ভূবন স্বপ্নপুরী। এ ছাড়াও শহরের সিটি পার্ক, রামসাগর, বীরগঞ্জের সিংড়া ফরেস্টসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রেও ভিড় লক্ষণীয়।
ঈদের দিন থেকে এসব বিনোদন কেন্দ্রে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী নারী-পুরুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।
উত্তরবঙ্গের তেমন চিত্ত বিনোদনের স্থান না থাকায় বিভিন্ন জেলার সবাই এ স্বপ্নপুরীতেই ভিড় জমায় দিনাজপুর শহর থেকে সড়ক পথে ৫২ কিলোমিটার দুরে নবাবগঞ্জ উপজেলার স্বপ্নপুরী বিনোদন কেন্দ্রতে।
পর্যটকরা স্বপ্নপুরীর গেটে এসে পৌঁছলে স্বাগত জানাবে দণ্ডায়মান দুটি বিশাল আকৃতির পরীর প্রতিকৃতি মূর্তি। এ দুটি পরী তাদের দু’ডানা প্রসারিত করে ও একহাত উঁচু করে গেটের দু’পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গেট পেরিয়ে পথের দু’ধারে বিভিন্ন গাছের সমারোহ। চোখে পড়বে পথের দু’ধারে সারি সারি দেবদারু গাছ। গাছের দু’পাশে আবার নারিকেল গাছের সারি। মনোমুগ্ধকর পরিবেশে নিঃস্তবদ্ধ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে মনে পড়বে, রবী ঠাকুর কিংবা কাজী নজরুলের গানগুলি।
এখানে রয়েছে কৃত্রিম হ্রদ, পাহাড়, লেক, উদ্যান, বৈচিত্র্যপূর্ণ গাছ-গাছালি ও ফুলের সমারোহ, শিশু পার্ক, চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম পশুপাখি, ফুলবাগিচা, ইটখোলা, কৃত্রিম ঝরণা, ঘোড়ার রথ, হংসরাজ সাম্পান, শালবাগান, খেলামঞ্চ, নামাজঘর। যেন এক মোহন-মায়াবী স্বপ্নীল ভূবন।
স্বপ্নপুরীর মেঠো পথ চলতে চলতে এক পর্যটক আলী আকবর জানান, এখানে দেখার মতো অনেক কিছু রয়েছে। একেবারে মনের মতো। দেখবেন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা ঘাড়গুঁজো বসে থাকা অবসন্ন কৃষকের ভাস্কর্য। সেখানে সারিবদ্ধ চেয়ার, টুল বসানো আছে। হংসরাজ সাম্পানে চড়ে স্বচ্ছ নীল পানির লেকে হারিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। সাম্পানে যেতে যেতে দেখা যায় কোথাও একাকী দাঁড়িয়ে আছে নারী, মাথা নিচু করে বসে আছে হতাশাগ্রস্ত যুবক অথবা ফুটে আছে বিশালকৃতি কচুপাতা। এরপর রয়েছে কৃত্রিম পশু দুনিয়া। প্রবেশ পথে দুটি ড্রাগন সাদর সম্ভাষণ জানানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। দেয়ালে চুন-সুরকি দিয়ে তৈরী করা হয়েছে বিলুপ্তপ্রায় হিংস্র প্রাণীদের প্রতিকৃতি। এরপর দু’এক পা ফেলতেই চমকে উঠতে হয়। সামনেই পথ জুড়ে হাঁ করা এক নর-করোটি। এই নর-করোটির মুখের ভেতর দিয়েই মূল পশু দুনিয়ার পৌছাতে হবে। এখানে রয়েছে কৃত্রিম পাহাড় ও ঝরণা। ঝরণার পানি গড়িয়ে একটি ছোট জলাশয়ে পড়ছে। অবসর যাপনের জন্য রয়েছে একাধিক মনোমুগ্ধকর ডাকবাংলা।
স্বপ্নপুরীর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বর্তমানে জাপার ভাইস চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, বাংলাদেশের সেরা অবকাশ যাপনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে স্বপ্নপুরীকে। তিনি বলেন, আমার শেষ স্বপ্ন এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ স্টুডিও নির্মাণ করার। যেন দেশ-বিদেশের আসা পর্যটকরা তা দেখে মুগ্ধ হয়। এখানে মানুষ মনের প্রশান্তির পাশাপাশি কিছু শিখেও যেতে পারে সে চেষ্টা আমি করছি।
বিডি-প্রতিদিন/ ২০ জুলাই, ২০১৫/ রশিদা