দিল্লিতে একজন পরিচিত মুখ ওমকারনাথ। গেরুয়া রঙের পাঞ্জাবি, পিঠে ব্যাগ, পায়ে চটি। যে কাজটি তিনি করছেন এ মুহূর্তে তার ঐতিহাসিক স্বীকৃতি রয়েছে।
রবিনহুড বলে এক ডাকাত ছিলেন যিনি না-পুরাণ না-বাস্তব, ধনীদের কাছ থেকে সম্পদ ছিনিয়ে যিনি গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন।
ওমকারনাথ কোনো সশস্ত্র বিপ্লবী নন রবিনহুডের মতোন, তিনি কোমল বিপ্লবী। ধনীদের দিয়ে জীবনরক্ষাকারী ঔষধ নিয়ে তিনি গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেন যার যেটা দরকার তা বুঝে নিয়ে।
ওমকারনাথ নামে তাকে আর ক’জনে চেনে। কিন্তু সকলেই চেনে যদি বলা হয় ‘মেডিসিন বাবা’। মানুষের প্রতি অবাক ভালোবাসায় পৃথিবীর বুকে তিনি স্বর্গ রচনা করে যাচ্ছেন।
মেডিসিন বাবার পোশাকেই তার ফোন নাম্বার লেখা আছে। যারা ঔষধ দেন আর যারা নেন সবাই ওটা টুকে রাখেন। ধনীরা তার হাতে উদ্বৃত্ত ঔষধ তুলে দেন, গরীবরা জিজ্ঞেস করেন ‘ঐ’ ঔষধটা আছে কিনা।
ওমকারনাথ নিজ খরচায় রোগীর কাছে পৌঁছে নিখরচায় ঔষধপ্রাপ্তি ঘটান ঐ মানুষগুলোর। দিল্লির ধনীদের দ্বারে দ্বারে তিনি ধর্ণা দেন ঔষধ নিতে আর গরীবের দ্বারে দ্বারে উপস্থিত হন ঔষধ প্রয়োজন কিনা জানতে।
ব্রাত্য মানুষগুলো তাঁকে দেখে দেবতার মতো করে। ফার্মেসি সংক্রান্ত কোনো পড়াশোনা তার নেই বটে। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্কের টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করার সুবাদে চিকিৎসকদের নৈকট্য পেয়েছেন, ঔষধপত্রের সঙ্গেও পরিচিত।
তাই ব্যবস্থাপত্র দেখে তিনি প্রয়োজনীয় ঔষধগুলোর নাম চিনতে পারেন এবং সে অনুযায়ী হতে পারেন ঔষধ সংগ্রহের ব্যাপারে পর্যাপ্ত আত্মনির্ভরশীল। মেডিসিন বাবার কাছ থেকে জানা যায় তিনি প্রতি মাসে প্রায় ৭০ হাজার টাকার মতো ঔষধ বিলি করেন।
ভারত মেডিকেল টুরিজমে এশিয়ায় থাইল্যান্ড সিঙ্গাপুরের পরপর থাকলেও নিজ দেশীয় অধিবাসীদের স্বাস্থ্যখাতে কতটা অমনোযোগী তা সাম্প্রতিক বেশ ক’টি জরীপের ফলাফলে উঠে এসেছে।
ঠিক কোন ঘটনা ওমকারনাথ আজ পথে নামিয়ে এনেছে? না, ইতিহাসের অনেক বীরের মতো কোনো ব্যক্তিগত দুঃখবোধ তাকে মানুষের মধ্যে নামিয়ে আনেনি। তিনি প্রকৃই মহান মানুষ।
যে ঘটনাটি তিনি জিজ্ঞেস করলে বলে থাকেন সেটি হচ্ছে, একবার জনাকয়েক নির্মাণ শ্রমিককে তিনি মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালে তাদের ঔষধ থেকে বিমুখ করা হয়। এবং চরম অসহায়ত্বের মধ্যে ঠেলে দেয়া হয় যেমনটা হতে পারে বলে ওমকারনাথ ভাবেননি।
অতীতের কথা স্মরণ করে এখন দৃষ্টিভঙ্গির অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন তার চোখে পড়ে, যার পেছনে অজান্তেই রেখেছেন হীরন্ময় অবদান, অথচ কখনও তা স্বীকার করবেন না।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৬ জুলাই,১৫/ নাবিল