৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৫:০২

কেন মৌলভীবাজারের হাওরে কমছে পাখি?

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

কেন মৌলভীবাজারের হাওরে কমছে পাখি?

হাওর বেষ্ঠিত মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি, কাউয়াদীঘি, হাইলহাওর, বাক্কা বিলসহ ছেট বড় ৮টি হাওর। শীত মৌসুমে হাওরগুলোতে অতিথি পাখি আসে। কিন্তু সেইসব হাওরেই এখন অনিরাপদ আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি। শিকারীদের কারণে দিন দিন কমছে পাখির সংখ্যা। যার কারণে  হাওরের জীববৈচিত্র্য পড়তে পারে হুমকির মুখে।

জানুয়ারি মাসের ২৮ ও ২৯ তারিখে দুই দিনব্যাপী হাকালুকি হাওরে পরিচালিত হয় পাখিশুমারি। বাংলাদেশ বন বিভাগ, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) পাখি শুমারি করে।

বাংলাদেশে ৭১৮ প্রজাতির পাখির মধ্যে ৩৮৮ প্রজাতির পাখিই পরিযায়ী। শীতকালে পরিযায়ী হয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসে বাংলাদেশে। তারা বেছে নেয় হাওর-বাওরসহ নিরাপদ জলাশয়। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিতে পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে বেশি। প্রায় ১৮১ বর্গ কিলোমিটার মিটার পানির এ হাওরে রয়েছে ছোট বড় ২৭৬ টি বিল। 

এবারের পাখি শুমারিতে দেখা গেছে, হাকালুকিতে এসেছে ২৫ হাজার পাখি। যা বিগত বছর গুলোর থেকে অনেক কম।  ২০২০ সালে ছিল ৪০ হাজার ১২৬ টি পাখি।

মাত্র কয়েক বছর আগে দেশে ৫-৬ লাখ পরিযায়ী পাখি আসত। এসব পাখি বেশিরভাগ মৌলভীবাজার ও সিলেটের হাওরগুলোকে মুখরিত রাখতো।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন)-এর পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ২০ বছরে সমগ্র বাংলাদেশে ৩৫  শতাংশ কমেছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। এবং হাকালুকিতে কমেছে ৪৫ শতাংশ। ২০০০ সালের আগে হাওরে গড়ে বিচরণ করতো ৭৫-৮০ হাজার পাখি। তার ৮০ শতাংশ হাকালুকি হাওরে।

পরিযায়ী পাখির সংখ্যা এতো দ্রুত কেন কমছে, পেছনের মূল কারণ কী? এই প্রশ্নের জবাবে পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাওরের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে, নদী দূষণ, জাল, বিষটোপ ও পটাশ দিয়ে পাখি শিকার, একসাথে বেশ কয়েকটি বিলে মাছ আহরণ, ইজারাদার দ্বারা বিল শুকিয়ে মাছ নিধন, বিলে দিবারাত্রি পাহারা ও জলজ বৃক্ষ নিধন সহ নানান সমস্যার কথা।

পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের দুজন সদস্য স্থানীয় পরিবেশ কর্মী কামরুল হাসান নোমান ও দেলাওয়ার হোসেন জানান, হাকালুকি হাওরের সাথে যে নদী গুলো মিলিত হয়েছে এখন এই নদীগুলো ময়লার ভাগাড়! প্লাস্টিক, পলিথিন, দূষিত পানি! পাখি কমার বিশেষ কয়েকটি কারণ মধ্যে এটি একটি। জাল, বিষটোপ ও পটাশ দিয়ে নিয়মিত পাখি নিধনের পাশাপাশি পাখিদের বিচরণ ভূমি জলাশয় গুলো অরক্ষিত থাকায় দিন দিন কমছে পাখির সংখ্যা। হাওরের পরিযায়ী পাখি রক্ষায় স্থানীয়দের সচেতনতা বাত্যতামূলক, পাশাপাশি প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা থাকতে হবে। এতে বাঁচবে আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি।

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর হাওরে বিলগুলো ইজারা দেয়া হয়। এবছরও হয়েছে। এতে বেশ লোকসমাগম ঘটে। দিনরাত পাহারা দেয়া হয়। এসব কারণে পরিযায়ী পাখিরা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে না। ইজারদার দ্বারা বিল শুকিয়ে মাছ আহরণের কারণে নষ্ট হচ্ছে হাওরের  জীববৈচিত্র্য। ফলে পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা কমছে।


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর