ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে সবার আগে শিল্পের নিরাপত্তা, নীতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতের যথাযথ স্বীকৃতি ও সরকারের সমর্থন প্রয়োজন। প্রয়োজনে শ্রম খাতের সংস্কার করতে হবে। ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া ঋণের কিস্তি পরিশোধে কম হলেও এক বছর সময় দিতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ করলে ব্যবসায়ীরা উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে পারবেন বলে তারা জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্যে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, তার জন্য সুশাসনও নিশ্চিত করতে হবে। ৫ আগস্ট গণ অভ্যুথানের পর শ্রমিক অসন্তোষের অজুহাতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুরের কারণে শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করার পরও অনেক কারখানায় বিচ্ছিন্নভাবে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাড়ে তিন বছর ধরে ভালো যাচ্ছে না দেশের শিল্প খাত। করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গত দুই বছরে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা শিল্প খাতের সংকটের পেছনে প্রধান কারণ। এ ছাড়া বিগত সরকারের বেশকিছু নীতি-সিদ্ধান্ত ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা সংকটকে আরও প্রকট করেছে। গ্যাসের দাম ইউনিটপ্রতি এক লাফে তিন গুণ বাড়ানোর পরও শিল্পে গ্যাস সংকট কাটেনি। জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে এবং বিদ্যুতের দামও দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে টাকার বিপরীতে ডলারের অস্বাভাবিক অবমূল্যায়ন হয়েছে। ডলার সংকটের কারণে কাঁচামাল আমদানিও ব্যাহত হয়। বিগত সরকারের শুল্ক ও কর কাঠামোও শিল্পবান্ধব ছিল না। এত সব সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি। শিল্পের নিরাপত্তা, নীতিসিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়েছে। ফলে শিল্পকারখানায় ব্যাপক নিরাপত্তাসংকট দেখা দিয়েছে। অনেক কিছু ঘটছে, যার দ্রুত কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। এ কারণে এক ধরনের দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারের উচিত, এখন আইনশৃঙ্খলা ও অর্থনীতির বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। এক কথায় বলতে গেলে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই শিল্প বা ব্যবসাবান্ধব হবে পরিবেশ। একই সঙ্গে প্রয়োজন হলে শ্রম খাতের সংস্কার করতে বলে জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক অবস্থায় না ফিরলে দেশের বিভিন্ন শিল্প এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের যেসব ঘটনা ঘটছে, তা দিন দিন আরও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ ব্যাংক নানা সমস্যায় জর্জরিত। এ অবস্থায় ব্যাংক খাতকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা না করলে অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের যথাযথ সেবা দিতে পারবে না। সেবা দিতে না পারলে শিল্পমালিকরা তাদের কর্মীদের বেতন-ভাতাও পরিশোধ করতে পারবেন না। এমনকি আমদানি ঋণপত্রও খুলতে পারবেন না।
► বাংলাদেশ ব্যাংককে অবস্থা বুঝতে হবে
► ঋণ পরিশোধে ছয় মাস সময় দিতে হবে