বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অনলাইন সংস্করণ নিবন্ধনের নির্দেশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার নীলনকশা : টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, জাতীয় সম্প্রচার কমিশন এবং অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তার আগেই দেশের সমস্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং জাতীয় পত্রিকা ও টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণসমূহ পৃথকভাবে নিবন্ধন করতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক নির্দেশ সংবাদমাধ্যমের ওপর সরকারের সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করবে। এই নির্দেশ মূলত গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের অপচেষ্টা বাস্তবায়নের পথে আরও এক আত্মঘাতী পদক্ষেপ। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, দেশের সমস্ত অনলাইন সংবাদমাধ্যম, এমনকি দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশিত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশন চ্যানেলের অনলাইন পোর্টালকে নতুন করে নিবন্ধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলোকে সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা এবং অপসাংবাদিকতা রোধের কৌশল বলা হলেও মূলত এটি দেশের গণমাধ্যমের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ নিশ্চিত করবে। দেশে গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা বিদ্যমান থাকার পরও পৃথক নিবন্ধনের এই নির্দেশ সাংবাদিকতার স্বার্থে নাকি গণমাধ্যমকে চাপে রেখে সরকার ও স্বার্থান্বেষী মহলকে সমালোচনা ও জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা।

সংবিধান-স্বীকৃত অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিতে যেখানে গণমাধ্যমগুলোকে আরও শক্তিশালী ও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করাটাই প্রত্যাশিত, সেখানে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সাহসী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করার মতো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, প্রচলিত নিবন্ধনের আওতায় দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশনগুলোর অনলাইন পোর্টাল চালু থাকা উচিত ও যুগোপযোগীÑ গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের এমন মতের তোয়াক্কাই করা হলো না। বিশেষ করে অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা অনুযায়ী নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ বা কমিশন গঠন চূড়ান্ত না করেই নতুন নিবন্ধনের এই নির্দেশ মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য কার্যকর হুমকি হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, অনলাইন গণমাধ্যমের নামে সাংবাদিকতাকে ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের সুযোগ রোধ করুন। অনলাইন মাধ্যমে মুক্ত সাংবাদিকতার পথটাও উন্মুক্ত রাখুন। ‘অবাধ তথ্যপ্রবাহ স্বাধীন মতপ্রকাশ’ বা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’, এসব শব্দমালা শুধু কাগুজে ঘোষণায় সীমাবদ্ধ থাকবে, যা কোনো কল্যাণকামী ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিচয় হতে পারে না। টিআইবি আন্তরিকভাবে আশা করে, তথ্য মন্ত্রণালয় প্রচলিত আইনের আওতায় প্রকাশিত পত্রিকা ও টেলিভিশনের অনলাইন পোর্টালগুলোর জন্য পৃথক নিবন্ধনের নির্দেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করবে। সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের হীন পরিকল্পনা বাদ দিয়ে তথ্যের অবাধ প্রবাহের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিবর্তনমূলক ধারাসমূহ বাতিল করবে এবং কার্যকর ও ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পাশাপাশি ভুঁইফোঁড় অনলাইন পোর্টাল ও সাংবাদিকতা চর্চার বিপরীতে ব্যক্তিস্বার্থে প্রকাশিত নামসর্বস্ব কথিত অনলাইন মাধ্যম ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করে মুক্ত ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ মসৃণ করবে।

সর্বশেষ খবর