বিয়ের পর থেকেই মফিজ প্যারার মধ্যে আছে। আগে বন্ধুদের সঙ্গে সারাক্ষণ আড্ডা দিয়ে বেড়াত। সে এখন খাঁচায় বন্দী পাখি। পাখা ঝাপটালেও বের হওয়ার সুযোগ নেই। স্ত্রী চোখে চোখে রাখে তাকে। বাইরে যাওয়ার কথা উঠলেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। বাইরে যাওয়ার জন্য মফিজের মনটা ছটফট করে। কিন্তু স্ত্রীর কারণে সে বাসা থেকে বের হতে পারে না। মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছে। ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার জন্য সকাল-বিকাল পরিকল্পনা করছে সে। কোনো পরিকল্পনাই সফল হচ্ছে না। আবার ঘরবন্দী মফিজকে নিয়ে মহল্লায় কানাকানি শুরু হয়েছে। বিয়ের পর নাকি সে বউয়ের আঁচলের নিচে দিনরাত বসে থাকে। ঝড়ের বেগে সে খবর এসে পৌঁছেছে মফিজের কানে। বন্ধুমহলেও এ খবর গরম চানাচুরের মতো হিট। সব মিলিয়ে এমন দুরবস্থা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না মফিজ। সব পরিকল্পনা যখন ভেস্তে যাওয়ার পথে তখন সে নতুন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করল। আজ থেকে স্ত্রীর সঙ্গে আর রাগারাগি নয়। সব সময় স্ত্রীর সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলবে। তার সব কাজ নিজ দায়িত্বে করবে। স্ত্রী যেন কোনোভাবেই তার পরিকল্পনা বুঝতে না পারে। তাকে সে পথেই হাঁটতে হবে। পরিকল্পনা মেনে কাজ শুরু করল মফিজ। এদিকে তার এমন আচরণে খুশি হয়ে স্ত্রী তাকে আরও কাজের চাপ দিতে থাকে। কিন্তু মফিজ ভুলেও কোনো আওয়াজ করে না। রান্না, ঘর মোছা, কাপড় ধোয়া সব ধরনের কাজে সে এক শ দুই শ পাওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই পরিস্থিতি দেখে মফিজের স্ত্রীর সন্দেহ বেড়ে যায়। হঠাৎ তার সঙ্গে এত ভালো ব্যবহার করছে কেন? শুধু তাই নয়, ঘরের সব কাজ একাই করছে। এর রহস্য কী? রহস্য উদঘাটনের জন্য তার স্ত্রী মফিজকে আরও চোখে চোখে রাখা শুরু করল। মফিজ এবার বিরক্ত হয়ে দাঁতে দাঁত কামড় দিয়ে বলেই ফেলল, ‘একটু বাইরে যাই প্লিজ?’ কথার সাউন্ড একটু বেশি হয়ে গেল মনে হয়। কারণ ধমক খেয়ে তার স্ত্রী তাড়া করল। মফিজও ভয়ে সোজা দৌড়াতে শুরু করে। মফিজের পেছনে ছুটছে তার স্ত্রী। মফিজকে অনেক দিন পর ঘরের বাইরে এ অবস্থায় দৌড়াতে দেখে এক বন্ধু বলল, ‘কিরে মফিজ? দৌড়াচ্ছিস কেন? ভাবি তাড়া করেছে নাকি!’ মফিজ হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ‘নারে। অনেক দিন ঘরে শুয়ে বসে ছিলাম তো, মোটা হয়ে গেছি। চর্বি কমানোর জন্য ব্যায়াম শুরু করেছি। তাই দৌড়াচ্ছি। মফিজ কখনো তার স্ত্রীকে ভয় পায় না। কথাটা মনে রাখিস।’
- ভূয়াপুর, টাঙ্গাইল