শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রে পারফিউম ব্যবসায় কুমিল্লার ফারুক ম্যাজিক

কানাডা-মধ্যপ্রাচ্যের গন্ডি পেরিয়ে পণ্য পৌঁছেছে বাংলাদেশেও

বিশেষ সংবাদদাতা

যুক্তরাষ্ট্রে পারফিউম ব্যবসায়  কুমিল্লার ফারুক ম্যাজিক

আমদানি-রপ্তানি, পারফিউম (সেন্ট) তৈরির পাশাপাশি অনলাইনে পাওয়া অর্ডার অনুযায়ী নানারকমের সুগন্ধি ডাকযোগে পাঠিয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে বাংলাদেশি আমেরিকান গোলাম ফারুক ভূঁইয়ার মালিকানাধীন ‘জিএফবি গ্রুপ’। যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির ব্রান্সউইকে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার বর্গফুট জমির ওপর স্থাপিত এই শিল্প গ্রুপের উৎপাদিত পারফিউম ছাড়াও অন্যান্য মালামালের বাজার যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে কানাডা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যেও বিস্তৃত হয়েছে। এর অন্যতম হচ্ছে বডি লোশন, শ্যাম্পু, সাবান, মোমবাতি, আগরবাতি, টুথপেস্ট, হ্যান্ড স্যানিটেশন ইত্যাদি। সম্প্রতি বাংলাদেশেরও দুটি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। কাশেম ইন্ডাস্ট্রি আগে থেকেই মালামাল নিচ্ছে। এখন ওয়ালটন কোম্পানি চুক্তিবদ্ধ হতে চায়। জিএফবি গ্রুপে রয়েছে অ্যারোমেটিক ইনোভেশন্স, নিনন করপোরেশন, নিনন ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিয়েল্টি এবং ওরফিউয়াস লিমিটেড। ১৮০০ রকমের কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। বর্তমানে বার্ষিক ৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। সবটাই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। বিক্রির পরিধি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে উৎপাদিত পণ্য সহজলভ্য হওয়ায়। তুলনামূলক হারে দামও নির্ধারণ করা হচ্ছে অনেক কম। এসব তথ্য জানালেন এই শিল্প গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক ভূঁইয়া। তিনি জানান, ‘অর্ডার অনুযায়ী আমরা পারফিউম উৎপাদন করতে পারি। কাঁচামাল রয়েছে ৫ হাজার রকমের পারফিউম তৈরির। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম একটি পারফিউম প্রস্তুতকারী হিসেবেও বিবেচনা করা যায় জিএফবি গ্রুপকে।’ ফখরুল ইসলাম মুন্সির মালিকানাধীন আয়ুর্বেদীয় ফার্মেসি-এপির জেনারেল ম্যানেজারের চাকরি ছেড়ে ১৯৯৭ সালে অভিবাসী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যান কুমিল্লার দেবিদ্বারের সন্তান গোলাম ফারুক। দেবিদ্বার হাই স্কুল থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ হয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে ইতিহাসে মাস্টার্স করা গোলাম ফারুক যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর উচ্চতর ডিগ্রি নেন ইনফরমেশন টেকনোলজিতে। এরপর নেক্সটেল টেলিকমিউনিকেশন এবং এটিঅ্যান্ডটিতে চাকরি করেছেন বেশ কিছুদিন। পেশাগতভাবে খুবই মর্যাদাশীল হলেও অন্তরে সদা জাগ্রত ছিল নিজে একটি ব্যবসার মালিক হওয়ার। সেই আবেগ-আগ্রহ থেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত একজন শিল্পপতিতে পরিণত হয়েছেন মৃদুভাষী গোলাম ফারুক। তিনি বললেন, কর্মযজ্ঞ বিশাল হলেও লোকবল কম। মাত্র ৪০ জনে সবকিছু সামলাচ্ছি। কারণ, আমাদের সাপোর্টিং গ্রুপ রয়েছে অনেক। আইটি সেক্টর, অর্ডার গ্রহণ ও সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন বাইরের লোকজন। অনলাইনে আমার এখানে অর্ডার আসার পরই কিছু লোক রয়েছেন যারা সঠিক পণ্যটি প্যাকেট করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। প্রসাধনীসামগ্রী তৈরির মনিটরিং করা হচ্ছে অটোমেটিক পদ্ধতিতে। কম্পিউটারের নির্দেশে মালামাল যাচাইয়ের সঙ্গে পণ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হচ্ছে। এভাবেই কম লোকবল দিয়ে অনেক বেশি কাজ করা সম্ভব হচ্ছে আমার এ প্রতিষ্ঠানে-জানালেন গোলাম ফারুক। তিনি বললেন, আমার স্ত্রী নিলুফা বেগম যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর আইটিতে লেখাপড়া করে চাকরি করেছেন থমসন রয়টার্সে। সিস্টেম এনালিস্ট হিসেবে ছিলেন সেখানে। আমি যখন ৩৫ বছরের পুরনো সবধরনের পারফিউম প্রস্তুতের কোম্পানি ‘ওরফিউয়াস’ ক্রয় করি তখনই তার সাহায্য চাই সেটি পরিচালনায়। সেই থেকে শুরু এবং বর্তমানে তিনি আমার গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আর্থিক বিষয়ের দেখাশোনা করছেন। আমার ছেলে শাহরিয়ার ফারুক পেন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেছে সেও আমার কোম্পানির সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। শাহরিয়ার পারফিউমের ওপরেও লেখাপড়া করেছে বিধায় বাড়তি সুবিধা পাচ্ছি সঠিকভাবে সবকিছু তৈরি ও বাজারজাতকরণে। শাহরিয়ার নিজের আরেকটি ব্যবসার পাশাপাশি আমাকে সহযোগিতা করছে। একমাত্র কন্যা সাঞ্জানা ফারুক কলম্বিয়া থেকে আইনে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠতম ১০টি ল’ ফার্মের একটিতে তিনি কাজ করছেন।

সর্বশেষ খবর