বিশ্বের প্রবীণতম ম্যারাথন দৌড়বিদ হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশ-ভারতীয় ফৌজা সিং ১১৪ বছর বয়সে ভারতীয় পাঞ্জাবের নিজ গ্রামে পথ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। পাঞ্জাবের জলন্ধরের নিকটবর্তী বিয়াস পিণ্ড গ্রামে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি অজ্ঞাত গাড়ি তাঁকে ধাক্কা দেয়। স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি।
প্রথমে কৃষক, পরে বিশ্বের অন্যতম অনুপ্রেরণাদায়ক ক্রীড়াবিদ হয়ে ওঠা ফৌজা সিং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। ৮৯ বছর বয়সে দৌড় শুরু করে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি নয়টি পূর্ণ ম্যারাথন শেষ করেন। ২০১১ সালে টরন্টো ম্যারাথনে ১০০ বছর বয়সে দৌড় শেষ করে তিনি ইতিহাস গড়েছিলেন। যদিও জন্মের বছর ১৯১১-এর সরকারি প্রমাণপত্র না থাকায় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তার নাম ওঠেনি।
ফৌজা সিংয়ের কোচ এবং ‘শিখস ইন দ্য সিটি’ সংগঠনের অন্যতম সংগঠক হরমন্দর সিং জানিয়েছেন, মানবতার প্রতীক এবং ইতিবাচকতার বাতিঘর ছিলেন ফৌজা। তার স্মৃতিতে ২০২৬ সালের ২৯ মার্চ পর্যন্ত সব অনুষ্ঠান উৎসর্গ করা হবে। সেইসঙ্গে ইলফোর্ডে তার প্রশিক্ষণের পথে ‘ফৌজা সিং ক্লাবহাউস’ নির্মাণের প্রচেষ্টাও করা হবে।”
সিংয়ের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। তিনি ফৌজা সিংকে অসাধারণ মনোবলসম্পন্ন এক ক্রীড়াবিদ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ফৌজা সিংয়ের জীবনের গল্প যেন একটি জীবন্ত ইতিহাস। শৈশবে দুর্বল পায়ে হাঁটতে না পারা এই মানুষটি পরে হয়ে ওঠেন বিশ্বব্যাপী অনুপ্রেরণা। স্ত্রী জিয়ান কৌরের মৃত্যু ও কনিষ্ঠ পুত্র কুলদীপের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর মানসিক অবসাদ কাটাতে তিনি দৌড় শুরু করেন। পরে লন্ডনের ইলফোর্ডে গুরদুয়ারায় একদল বয়স্ক দৌড়বিদের সঙ্গে দেখা হয় তার। সেখান থেকেই ম্যারাথনের জগতে প্রবেশ।
২০০০ সালে লন্ডন ম্যারাথনে নিজের প্রথম দৌড়ে অংশ নেন তিনি, ৮৯ বছর বয়সে। নবজাতক শিশুদের সহায়তায় ব্লিস সংস্থার জন্য দৌড়ান, তাঁর স্লোগান ছিল সর্বজ্যেষ্ঠ দৌড়াচ্ছে সর্বকনিষ্ঠদের জন্য!
প্রথম দৌড় ফৌজা সিং শেষ করেন ছয় ঘণ্টা ৫৪ মিনিটে। তিন বছরের মাথায় টাইমিং কমিয়ে আনেন এক ঘণ্টারও বেশি।
২০০৩ সালে অ্যাডিডাসের ‘ নাথিং ইজ ইমপসিবল’ প্রচারে তাঁকে যুক্ত করা হয়, যেখানে মোহাম্মদ আলির মতো কিংবদন্তিরাও ছিলেন। ২০০৫ সালে পাকিস্তানের লাহোর ম্যারাথনে আমন্ত্রণ পেয়ে অংশগ্রহণ করেন এবং ২০০৬ সালে ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের বিশেষ আমন্ত্রণে বাকিংহাম প্যালেসে যান।
সম্প্রতি জুন মাসে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, আজও আমি হাঁটি, পায়ের যত্ন নিই। শরীরকে ভালো রাখতে হলে নিজের যত্ন নিতে হয়। দুঃখজনকভাবে সেই পথেই তাঁর জীবনের শেষ হাঁটা শেষ হয়।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল