বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভূত আছে নাকি নাই

রণক ইকরাম

ভূত আছে নাকি নাই

পৃথিবীর সর্বকালের সবচেয়ে বড় অমীমাংসিত রহস্য সম্ভবত ভূত। মানুষের চিরন্তন আগ্রহ আর রহস্যময়তার কারণে ভূত বিষয়টির জনপ্রিয়তা কখনোই কমেনি। সবার একই চিন্তা—ভূত আছে, নাকি নেই। বাংলাদেশ প্রতিদিনের রকমারি পাতায়ও একাধিকবার এ নিয়ে ফিচার ছাপা হয়েছে। সম্প্রতি সাভারে ভূতের উপদ্রবের কারণে একটি ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে নতুন করে আলোচনায় চলে এসেছে ভূত। তবে আধুনিক বিজ্ঞান ভূত বিষয়টিকে স্বীকার করে না। আবার এমন হাজারো ঘটনা আছে যেগুলোর কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিতে পারেনি। আর তখনই দ্বিধা বাড়ে তাহলে কী সত্যি ভূত বলে কিছু আছে? পৃথিবীর নানা প্রান্তের উপকথা, গল্প এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে ভূতের উল্লেখ। বলা হয়েছে ভূত হলো আত্মা বা স্পিরিট। একজন মানুষের মৃত্যুর পর তার অদৃশ্য উপস্থিতি। যদিও তার বিবরণ সর্বত্র এক নয়। কোথাও বায়বীয় কোথাও জলের মতো কোথাও ছায়া আবার কোথাও তারা পশু পাখির অবয়বে বিরাজমান। ভূত নামের এই অদৃশ্য অলৌকিক এবং কাল্পনিক অবয়বটির প্রতি কমবেশি সবারই প্রবল অনুসন্ধিৎসা। এ নিয়েই আজকের রকমারি।

 

যুগে যুগে...

ভূত মানে মৃত আত্মা বা অপচ্ছায়া। ভূতে বিশ্বাস সেই প্রাচীনকাল থেকেই। অসংখ্য প্রাচীন লোককাহিনীতে ভূতের উল্লেখ আছে। পৃথিবীর অধিকাংশ জাতিই ভূতে বিশ্বাস করে। তাদের মতে প্রাণীর শরীর থেকে আত্মা চলে গেলেই সে প্রাণহীন হয়ে পড়ে। কোনো কোনো আত্মা প্রাণীর শরীর থেকে বের হওয়ার পরও ফিরে আসে। আর এই ফিরে আসা আত্মাই হচ্ছে ভূত। ভূতের শরীরী রূপ তার থাকে না। সে থাকে অস্পষ্ট। কিন্তু তার চালচলন স্বাভাবিক জীবিত শরীরের মতো। তাকে স্পষ্ট দেখা যায় না। কিন্তু উপলব্ধি করা যায়। ইংরেজিতে ঘোস্ট শব্দটির প্রাচীন ইংরেজির গাস্ট থেকে উদ্ধৃত। ল্যাটিনে ‘স্পিরিটাস’ শব্দটির অর্থ হলো শ্বাস বা জোরে বাতাস ত্যাগ করা। এমন নানান ব্যাখ্যা রয়েছে। বিভিন্ন ভাষায়, সেই আদিকাল থেকেই। প্রাচ্যের অনেক ধর্মে ভূতের উল্লেখ আছে। যেমন হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থ বেদ-এ ভূতের কথা উল্লেখ আছে। হিব্রু তাওরাত ও বাইবেলেও ভূতের উল্লেখ আছে। উনিশ শতকে ‘ক্রিসমাস ক্যারল’ বইতে লেখক চার্লস ডিকেন্স ভূত এনেছিলেন। ভূতদের নিয়ে নানান লৌকিক কাহিনী ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত।

 

বৈজ্ঞানিক যুক্তি

ভূত সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলেই একদল মানুষের প্রবল আপত্তি— ‘আরে ধুর, ভূত বলে কিছু নেই।’ আবার আরেকদল মানুষ একটু বেশি উত্তেজিত হয়, কেউ কেউ আবার ভীতও হয়ে ওঠে। বিজ্ঞান বলে, মানুষ সাধারণত অবাস্তব কাহিনীর জন্ম দেয় তার কল্পনাশক্তির ওপর ভর করে। হাজার বছর ধরে ভূতের গল্প প্রচলিত থাকলেও বিজ্ঞানের কাছে তার ব্যাখ্যা নেই।

বৈজ্ঞানিক যুক্তি অনুসারে শক্তি বিভিন্নভাবে বিরাজমান থাকতে পারে। তার রূপ পরিবর্তন করতে পারে। যেমন— তাপ, আলো, রাসায়নিক শক্তি, বৈদ্যুতিক শক্তি। শক্তি যে কোনো পরিবর্তন আনতে পারে। থার্মোডিনামিক্সে আলোচনার বিষয় এই শক্তি। থার্মোডিনামিক্সের প্রথম সূত্র অনুসারে শক্তি এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু তা সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যাবে না। পৃথিবীর মোট শক্তি এবং পদার্থ সবসময় ধ্রুব থাকবে।

থার্মোডিনামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র অনুসারে একই ব্যবস্থার মধ্যে শক্তির পরিবর্তনের সময় যদি নতুন কোনো শক্তি না ঢুকে বা কোনো শক্তি বের না হয়ে যায় তবে সম্ভাব্য শক্তি সবসময় প্রাথমিক শক্তির চেয়ে কম থাকবে। এটাকে এনট্রপি বলে। একসময় সম্ভাব্য শক্তি কার্বোহাইড্রেটের মধ্যে তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে যা গতিশক্তিরূপে রূপান্তর হয়। এই শক্তি পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় কিছু শক্তি তাপশক্তি রূপে উড়ে যায়। ফলে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় যা পরিমাপ করাই এনট্রপির কাজ। শক্তির প্রবাহ ক্রম এবং জীবন বজায় রেখে চলে।

থার্মোডিনামিক্সের সূত্র যদি বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করা যায় তবে প্রমাণ করা সম্ভব ভূত আছে। কেউ তা না মানলেও কিছু প্রশ্নের জন্ম হবে। প্রথম সূত্র মতে শক্তির কোনো বিনাশ নেই, শুধু এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় যায়। তাহলে, আমরা যদি শক্তি হই তবে মৃত্যুর সঙ্গে আমরা বিনাশ হব না, শুধু রূপ পরিবর্তন হবে।

আমাদের শরীর বিশ্লিষ্ট হয় মাইক্রোঅর্গানিজম দ্বারা এবং এভাবে মানুষের শক্তির রূপ পরিবর্তিত হয়। কিন্তু আমাদের বুদ্ধিমত্তার কী হয় যা দ্বারা আমরা একটা পরিচয় বহন করি। আমাদের মন কি হাওয়ায় উড়ে যায়? এই পরিবর্তন কি মেনে নেওয়া যায়? বিজ্ঞানের চোখ কী বলবে, আমাদের বাইরেও অনেক প্রাণ আছে? এ হিসাব করলে কিন্তু ভূতের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে। তবে ভূত বিষয়ক সব ঘটনাকেই বিজ্ঞানীরা মানুষের উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা বলে চালিয়ে দেন। তবে বৈজ্ঞানিক যুক্তির বাইরেও জগৎ আছে, ভাবনা আছে। সে হিসাবে ভূত থাকলে দোষের কী আছে?

 

ভূতের ভয়ে কারখানা বন্ধ

ভূতেরা কারখানার ভিতরে। আর সাত হাজার কর্মচারী বাইরে অপেক্ষায়। গেটে তালা। অতি সম্প্রতি এই ঘটনা ঘটেছে ঢাকার আশুলিয়া ডেকো ডিজাইন লিমিটেড কারখানায়। একদিন আগে একজন শ্রমিক বাথরুমে ভূত দেখে মূর্ছা যান, এরপরে অসুস্থ হন আরও অনেকে। এর রেশ ছিল পরদিনও। তবে মালিকপক্ষ বলছেন কারখানাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পুরোটাই কারও কারসাজি। ভূত বলে কিছুই নেই। শ্রমিকরা তা মানতে নারাজ। জানা গেছে, আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় ডেকো ডিজাইন লিমিটেড কারখানায় ‘ভূত আতঙ্ক’র পর আতঙ্ক বিরাজ করেছে। উপজেলা হাসপাতালের তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে  তদন্ত কমিটি গঠন করে পানি ও বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। কী কারণে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়েছেন—তা সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা। ডেকো ডিজাইন কারখানার উৎপাদক ব্যবস্থাপক খলিলুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খাবার পানি খাওয়ার পর থেকেই কারখানার বেশকিছু শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে কী কারণে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন—সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে ভূতের কী সম্পর্ক বা কী ঘটেছে সে বিষয়ে কোনোভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

 

ক্যামেরায় ধরা পড়া সত্যিকারের ভূত

 

ভালো করে তাকালে দেখা যাবে ড্রাইভারের পেছন সিটে একজন চশমা পরা মানুষ বসে আছে। কিন্তু বাস্তবে এই মানুষটির অস্তিত্বই ছিল না। ঘটনাটা সেই ১৯৫৯ সালের। ম্যাবেল চিনারি নামের এক মহিলা  সমাধিশালায় সমাহিত তার মায়ের কবর পরিদর্শনে আসেন। সঙ্গে তার স্বামী। মহিলা গোরস্থানে থাকা অবস্থায় তার স্বামী গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল। ফিরে যাওয়ার আগ মুহূর্তে মিসেস চিনারি তার সদ্য কেনা ক্যামেরা দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা তার স্বামীর একটি ছবি তোলেন। ছবিটি ডেভেলপ করার পর দেখা গেল গাড়ির ভিতর কেবল তার স্বামী একা ছিলেন না। পেছনের সিটে একজন লোককে। স্বয়ং চিনারির মা বসে আছেন!

 

লাল তীর চিহ্নিত আবছা ছবিটি আরেক বিস্ময়। কারণ নেইল স্যান্ডব্যাচ নামের এক ফটোগ্রাফার যখন এই ছবিটি তোলেন, তখন এই চরিত্রটি তার পটভূমিতে ছিলই না। ফটোগ্রাফার তখন কেবল একটি খামারের ছবি তুলছিলেন। উদ্দেশ্যহীনভাবেই নিজের নতুন ক্যামেরায় ইংল্যান্ডের হার্টফোর্ডশায়ার অঞ্চলের একটি খামারের কয়েকটি ছবি তুলছিলেন তিনি। ছবি তোলার সময় খেয়াল না করলেও পরে তিনি লক্ষ্য করেন যে ছবির মধ্যে একটি ছেলেকে দেখা যাচ্ছে। যে একটি অন্ধকার দেয়ালের পাশ থেকে উঁকি দিচ্ছে। এই বালকের ছবি এলো কোত্থেকে? খামারের মালিক জানান এই ভূতকে এর আগেও দেখা গেছে!

 

এই ছবিটি তুলেছেন ডেনিস রাসেল নামের একজন লোক। ছবিটি তোলা হয় ১৯৯৭ সালের ১৭ আগস্ট। আর ছবির মহিলাটি তার দাদি। যার মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে তোলা হয়। বার্ধক্যজনিত কারণে স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যু হয় মহিলার। দাদির স্মৃতি হিসেবে তার ছবিটি সংগ্রহ করে রাখেন ডেনিস। তখনো কেউ ছবিটির পেছনের লোকটিকে খেয়াল করেনি। ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে দাদির পেছনে একজন পুরুষ মানুষের মাথা উঁকি দিচ্ছে। যে পেছনের ব্যক্তিটি হুবহু তাদের দাদার মতো। দাদার সাদাকালো ছবি দেখে তারা নিশ্চিন্ত হন যে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি আসলেই তাদের মৃত দাদা।

 

এই ছবিটি ১৯৮৭ সালের। ইংল্যান্ডের সমারসেটে অবস্থিত ইয়েলভারটনের ফ্লিট এয়ার আর্ম স্টেশনে তোলা হয়েছিল এই ছবিটি। মিসেস সেয়ার ও তার বন্ধুরা সেবার ইয়েলভারটনের ফ্লিট এয়ার আর্ম স্টেশনে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেয়ারের বন্ধুরা তাকে বললেন হেলিকপ্টারের পাইলটের সিটে বসে একটি ছবি তুলতে। ছবি তোলার পর দেখা গেল ছবিতে সেয়ারের পাশের আসনে সাদা শার্ট পরা একজন ব্যক্তিকে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে! অথচ তখন সেয়ার ছাড়া তার পাশে আর কেউই ছিল না। খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই কপ্টারের পাইলট যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন। কে জানে তার আত্মাই হয়তো বসেছিল!

 

এই ছবিটিতে সাদা একটি মূর্তিকে একজনের পেছনে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ১৯৭৫ সালে ডিয়ান ও পিটার বার্থেলোট তাদের ১২ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে নরফকের ওর্স্টিড গির্জায় গেলেন। ডিয়ানের প্রার্থনারত এ ছবিটি  তোলেন পিটার। কয়েক মাস পর তারা ছবিটি খেয়াল করে দেখলেন, ডিয়ানের পেছনে কোনো একটি সাদা ছায়া মূর্তি দেখা যাচ্ছে। গির্জার রেভারেন্ড পেটিট ছবিটি দেখে বলেন, সাদা ছায়া মূর্তিটি একজন মহিলার। গির্জায় আগত কোনো প্রার্থনাকারী যদি আগে থেকেই অসুস্থ থাকেন তবে তাদের কিছুটা প্রশান্তি প্রদান করার ব্যাপারে সহযোগিতা করে এই বিদেহী আত্মা।

 

এই ছবিটি ১৯৪৭ সালে তোলা।  মিসেস এন্ড্রু নামের একজন মহিলা গিয়ে ছিলেন তার মেয়ের কবর দেখতে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের একটি গোরস্থানে। মিসেস এন্ড্রু  তার মৃত কন্যার কবরের একটি ছবি তোলেন। ছবিটি তোলার আগের বছর মাত্র ১৭ বছর বয়সে তার মেয়ে মারা যায়। ছবিটি ডেভেলপ হয়ে আসার পর দেখা গেল একটি বাচ্চা তার মেয়ের কবরের ওপরে বসে আছে। মিসেস এন্ড্রুর মতে তিনি যেদিন এই ছবি তুলেছিলেন তার ধারে কাছে কোনো বাচ্চা ছিল না। এমনকি এই বাচ্চা ছোট বেলায় তার মেয়ের মতো দেখতেও নয়। তাহলে এই বাচ্চা কার? সে রহস্য কেউ জানে না।

 

এই ছবিটি অনেক আলোচিত একটি ছবি। এটি তোলা হয় ১৯১৯ সালে। আর এটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালে। সে বছর রয়েল এয়ার ফোর্সের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্যার ভিক্টর গডার্ড এটি জনসম্মুখে নিয়ে আসেন। ছবিটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় দাইদালুস ট্রেনিং ফ্যাসিলিটিতে তোলা। ছবিতে সবার উপরে বাম পাশ থেকে চতুর্থ যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে তার নাম ফ্রেডি জ্যাকসন। তিনি ছিলেন একজন এয়ার মেকানিক, যিনি বিমানের প্রপেলারের আঘাতে দুর্ঘটনাক্রমে মারা যান। ছবিটি ফ্রেডির শেষকৃত্যানুষ্ঠানের দিন তোলা হয়। পরে দেখা যায়, সে স্মরণ অনুষ্ঠানের দিন তোলা ছবিতে মৃত ফ্রেডিও উপস্থিত!

 

এই ছবিটি ১৯৬৬ সালে তোলা। রালফ হার্জ নামের এক লোক ইংল্যান্ডের গ্রিনিসে অবস্থিত কুইন্স হাউস ন্যাশনাল ম্যারিটাইম মিউজিয়ামে অবস্থিত টিউলিপ সিঁড়ি নামের একটি প্যাঁচানো সিঁড়ির ছবি তোলেন। তখনই সেখানে ধরা পড়ে অশরীরী কিছু একটা সিঁড়ির ভিতর মাথা গুঁজে দাঁড়ানো। পরবর্তীতে ছবিটির নেগেটিভ নানাভাবে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে এটা বের করার জন্য যে, এটি কোনো অসাধু উপায়ে বানানো হয়েছে কিনা? কিন্তু সবাই একই মতামত দিয়েছেন যে, নেগেটিভটি ১০০% ঠিক আছে। তার চেয়েও বড় কথা কুইন্স হাউস আসলেই একটি ভৌতিক বাড়ি হিসেবে দারুণ জনপ্রিয়।

 

 

 

বিশ্বজুড়ে ভুতুড়ে আড্ডা

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কুখ্যাত একটি বাড়িকে বলা হয় ভূতের আড্ডাখানা। ১৯১০ সালের কথা। কেনটাকি রাজ্যে একটি দোতলা স্বাস্থ্যনিবাস হিসেবে নির্মিত হয় ওয়েভারলি হিলস। হাসপাতালটিতে ৪০-৫০ জন রোগীর চিকিৎসা করা যেত। টেলিভিশনে অনেকবার ওয়েভারলি হিলস সেনেটরিয়াম সম্পর্কে প্রতিবেদন দেখানো হয়েছে। হাসপাতালটির ভুতুড়ে কর্মকাণ্ডের জন্য বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। এ হাসপাতালে কিছু ছায়া দেখা যায়, শোনা যায় অদ্ভুত কণ্ঠস্বর ও চিৎকার।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি জায়গা চাঙ্গি বিচ। এটিও ভুতুড়ে স্থান হিসেবে স্বীকৃত। ‘সোক চিং’ যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার সময় জাপানিরা নিজেদের বিরোধী ভেবে অনেক নিরীহ চীনা নাগরিককে হত্যা করে তারপর তাদের এখানে কবর দেয়। আর সেই থেকে এই জায়গাটি হয়ে ওঠে ভুতুড়ে। এখানে রাত হলে শুরু হয় ভুতুড়ে সব কাজ কারবার। মনে হয় দূর থেকে কিছু মানুষ কান্না করতে করতে সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। অনেক পর্যটক কিছু না জেনে এখানে রাতের বেলা ঘুরতে আসে আর ফেরার সময় নিয়ে যায় অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতা। এখন পর্যন্ত প্রায় হাজার খানেক মানুষ এমন কান্নাকাটি শোনার কথা স্বীকার করেছে। আর স্থানীয় কেউ এখানে রাতের বেলা ভুল করেও আসে না।

আরেকটি কুখ্যাত স্থান ফ্রাঙ্কলিন প্যালেস। এর অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে। বাড়িটির নির্মাণশৈলীই অনেক ব্যতিক্রম। বাড়ির বয়সও কম নয়। ১৮৬০ সালে জার্মান নাগরিক হ্যানেস টাইডম্যানের জন্য এটি বানানো হয়েছিল। কিন্তু এ বাড়িতে আসার পরপরই তার চার কন্যার মৃত্যু হয়, যাদের তিনটিই ছিল শিশু। সব মৃত্যু দেখে মনে হয়েছে, এতে টাইডম্যান নিজেই জড়িত। এ বাড়ির দর্শনার্থীরা জানান, এখনো এখানে পদশব্দ, দরজা ধাক্কার শব্দ আর বাচ্চাদের কান্না শোনা যায়।

ইংল্যান্ডের দক্ষিণ ডিভনে বেরি পমেরয় গ্রামের কাছেই অবস্থিত একটি প্রাসাদ। ১৫ শতকের শেষের দিকে নির্মিত এই প্রাসাদটি বর্তমানে পৃথিবী বিখ্যাত দুই নারী ভূতের বাসস্থান বলে সবার কাছে পরিচিত। এদের একজনের নাম ‘ব্লু লেডি’ এবং অপরজন ‘হোয়াইট লেডি’। আর অভিজ্ঞতা বলে যে প্রাসাদটিতে ব্লু লেডির উপস্থিতিই বেশি দেখা যায়। প্রাসাদের আশপাশে বেড়াতে আসা লোকদের সে মোহনীয় জাদুকরী ক্ষমতায় বশ করে নেয়, তারপর সে হারিয়ে যায়।

তার জাদুতে আচ্ছন্ন হয়ে লোকেরা ঘুরেফিরে প্রাসাদের ছাদের আনাচে-কানাচে। এক সময় তারাও হারিয়ে যান। হোয়াইট লেডি হচ্ছে মার্গারেট পমরয়। সে অবশ্য দূরে কোথাও যেতে পারে না। তার বাস প্রাসাদের নিচের কুঠুরি, বা ডানজনে। বলা হয়ে থাকে তার আপন বোন তাকে সেখানে আটকে রেখেছিল আমৃত্যু। তাই তার আনাগোনা কেবল ওইটুকুতেই। তবে নিচের ওই অন্ধকার কুঠুরি থেকে তার আর্তচিৎকার আর আহাজারি অনেকেই শুনতে পেয়েছে।

আরেকটি কুখ্যাত ভুতুড়ে জায়গা হচ্ছে চেকপ্রজাতন্ত্রের একটি রোমান ক্যাথলিক গির্জা। কিন্তু আর দশটা গির্জার সঙ্গে এর মূল পার্থক্য শুধু এটুকুই যে, একে সাজিয়ে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে মৃত মানুষের হাড়গোড় এবং কঙ্কাল। বলা হয়ে থাকে এ যাবৎ পর্যন্ত ৪০০০০-৭০০০০ মানুষের সৎকার করা হয়েছে এখানে। আর এদের মধ্যে অনেকেরই হাড়গোড় শোভা বাড়িয়েছে এই জায়গাটির অন্দরমহল সাজসজ্জায়। এত সাজানো-গোছানোর পরও এর বদনাম কিন্তু একটুও কমেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও ইউনিভার্সিটি সেখানকার সবচেয়ে ভুতুড়ে স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে বহু পুরনো পাঁচটি সমাধি আছে যা কিনা একটি পঞ্চভুজ তৈরি করে। আর এখানে অনেক পুরনো একটি মানসিক রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ল্যাব রয়েছে। যেখানে তাদের ইলেক্ট্রিক শক দেওয়া হতো পরবর্তীতে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। লোকমুখে শোনা যায় যে, সন্ধ্যা হওয়ার পর এখানে নাকি অদ্ভুত চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা যায়। আর ভয়ে সেখানে যেতে কেউই সাহস করে না।

ভারতের রাজস্থানের পাশে অবস্থিত ভাঙার দুর্গ। এখানকার মানুষের মুখে শোনা যায় এই জায়গাটির ওপর নাকি অনেক অভিশাপ আছে। কোনো এক পুরনো ঋষি এই জায়গাটির ওপর অভিশাপ দিয়েছিল যে যারা এখানে মারা যাবে তাদের আত্মা সারা জীবন এই খানে বন্দী থাকবে। সব চেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে এখানকার কোনো বাড়ির ছাদ নেই। আর সবগুলো বাড়ির ছাদ তৈরি করার সময় নাকি সেগুলো ভেঙে পড়ে। সন্ধ্যার পরে এখানে যে পর্যটকরা গেছে তারা আজ পর্যন্ত ফিরে আসেনি আর এখনকার সরকার সন্ধ্যার পর সেখানে যেতে পুরোপুরি নিষেধ করে দিয়েছে।

 

ভূত-বিশ্বাসী

এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, ব্রিটেনের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৮ শতাংশ মানুষ প্রেতাত্মায় বিশ্বাস রাখেন।

আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমেরিকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৪ শতাংশ মানুষের মন ঘোরতর ভূত-বিশ্বাসী। তার মধ্যে আবার ২৩ শতাংশ মানুষ দাবি করেছেন, তারা রীতিমতো ভূত দেখেছেন অথবা ভৌতিক অস্তিত্ব অনুভব করেছেন।

ঠিক কেন এই ভূত বিশ্বাস? সমাজ-মনস্তাত্ত্বিকদের মতে, এ ধরনের গণবিশ্বাসের পেছনে দুই দেশে দুই প্রকার কারণ কাজ করেছে। ব্রিটেনের স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া, বৃষ্টি-প্রাধান্য ভৌতিক গল্পের সংক্রমণের পক্ষে উপযুক্ত। তার ওপরে বিপুল সংখ্যক পুরনো প্রাসাদ, কবরখানা, মান্ধাতার আমলের গির্জা, তার ভল্ট, মাটির নিচের অলিগলি অবশ্যই এক ধরনের ছমছমে পরিস্থিতি বজায় রাখে, যাতে ভূতে বিশ্বাস হওয়াটাই স্বাভাবিক।

সেই সঙ্গে অবশ্যই রয়েছে ব্রিটিশ সাহিত্যিকদের অনবদ্য কলমের অবদান। বিদেহী আত্মা নিয়ে চর্চাও ব্রিটেন কম করেনি। প্ল্যানচেট, সিয়াস, গুপ্তচক্র বিভিন্ন কালে সেদেশে ফিরে ফিরে এসেছে। এমন পরিবেশে ভূতে বিশ্বাস না রাখাটাই আশ্চর্যের।

 

হোয়াইট হাউসের ভূত

ওয়াশিংটন ডিসির ১৬০০ পেনসিলভেনিয়া এভিনিউর ‘হোয়াইট হাউস’ কেবল আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বাসভবনই নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক ভবনও বটে। এমন একটি ভবনে যখন ভূতপ্রেতরা আস্তানা গাড়ে তাহলে কেমন হয়? প্রেসিডেন্টের বাসভবনে নাকি ঘুরে বেড়াচ্ছে ডজনখানেক প্রেতাত্মা! এমন বিশ্বাস কেবল ভৌতিক গল্পপ্রিয় সাধারণ আমেরিকানদেরই নয়, হোয়াইট হাউসের একাধিক সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারীও নিজেদের এসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করেন। হোয়াইট হাউসের পূর্ব দিকের একটি কক্ষে প্রায়ই কাজে ব্যস্ত থাকেন হোয়াইট হাউসের প্রথম ফার্স্ট লেডি এবিগেইল অ্যাডামসের ভূত। আবার মরার পরও বাগানে কাজ করে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউসের কর্মচারী ডলি ম্যাডিসন। শুধু তারাই নন, আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন, রুজভেল্ট, হ্যারিসন, রিগ্যান, অ্যান্ড্রু জ্যাকসনসহ আরও অনেকের প্রেতাত্মা এখনো দিব্যি ঘুরে বেড়ায় হোয়াইট হাউসে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর