বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিশ্ব কাঁপানো জাদুকর

বিশ্ব কাঁপানো জাদুকর

নদীর ওপরে হেঁটে চলা, বাতাসে ভেসে বেড়ানো, মানুষকে দ্বিখণ্ডিত করা আরও সব অদ্ভুত কর্মকাণ্ড, যা স্নায়ুতে সবচেয়ে বেশি কড়া নাড়ে তা হলো জাদুবিদ্যা। নানা শ্বাসরুদ্ধকর খেলা দেখিয়ে দুনিয়া মাতাচ্ছেন অসংখ্য বিখ্যাত সব জাদুকর। তাদের নিয়ে মানুষের কৌতূহলেরও কমতি নেই। বিশ্বকাঁপানো এমন সব জাদুকরের বিখ্যাত হওয়ার কাহিনী নিয়েই আজকের আয়োজন। লিখেছেন— সাইফ ইমন

 

বিশ্ব মাতিয়েছেন পিসি সরকার

পুরো নাম প্রতুল চন্দ্র সরকার। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালিদের মধ্যে পিসি সরকার অন্যতম। জাদুশিল্পকে তিনি সব রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলা ও বাঙালিকে গৌরবোজ্জ্বল জাতি হিসেবে পরিচিত করিয়েছেন। ১৯১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার আশেকপুর গ্রামে জন্ম তার। আর শিক্ষাজীবন কাটে স্থানীয় শিবনাথ হাইস্কুলে। বাবার নাম ভগবান চন্দ্র সরকার। মা কুসুম কামিনী দেবী। পিসি সরকাররা ছিলেন দুই ভাই। পিসি সরকার বড়, ছোট ভাই অতুল চন্দ্র সরকার বা এসি সরকার। ছেলেবেলা থেকেই জাদুবিদ্যায় আগ্রহ তার। আবার জাদুবিদ্যায় বংশগত ঐতিহ্যও রয়েছে পিসি সরকারের। তখনকার খ্যাতিমান জাদুকর গণপতি চক্রবর্তী ছিলেন তার জাদুবিদ্যার গুরু। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তিনি জাদু দেখানো শুরু করেন। তাতে লেখাপড়া বাধাগ্রস্ত হয়নি। ১৯২৯ সালে প্রবেশিকা এবং ১৯৩৩ সালে গণিত শাস্ত্রে অনার্সসহ বিএ পাস করে জাদুকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন তিনি। জাদুশিল্পে পিসি সরকারের কৃতিত্ব হলো— তিনি বহু প্রাচীন জাদু খেলার মূল সূত্র আবিষ্কার করেন। করাত দিয়ে মানুষ দিখণ্ডিত করার খেলাটি দেখে দর্শকরা অভিভূত হয়ে পড়েন। এমন শ্বাসরুদ্ধকর জাদুতে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে যেতেন। সেই সময় দ্বিখণ্ডিত তরুণীর কুশল বার্তা জানতে বিবিসি অফিসে এত টেলিফোন আসতে থাকে যে, দুই ঘণ্টা পর্যন্ত অফিসের সব টেলিফোন লাইন ব্যস্ত ছিল। নিউইয়র্ক টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ খেলাটি দেখার জন্য তাকে বিশেষ বিমানে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা ও সম্মান লাভ করেন। ‘ওয়াটার অব ইন্ডিয়া’ তার আরেকটি জনপ্রিয় খেলা। ১৯৩৪ সালে তিনি সর্বপ্রথম বিদেশে গমন করেন এবং ৭০টির মতো দেশে জাদু প্রদর্শন করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। তার ফোর্স রাইটিং খেলাটি ভারতে মহা আলোড়ন সৃষ্টি করে। তার পরই বিদেশে একটি বিশেষ দ্রুতগামী রেলগাড়ি আসার মাত্র ৩৮ সেকেন্ড আগে তিনি হাতকড়া বন্ধ অবস্থায় ট্রেন লাইন থেকে মুক্ত হয়ে আসেন। এই হাতকড়াটি খুলতে ১৭টি চাবি ব্যবহার করা হতো। তার জাদু অস্ট্রেলিয়ান টেলিভিশন, বিবিসি, শিকাগোর ডারলিউ জিএনটিভি এবং নিউইয়র্কের এনবিসি ও সিবিএস টেলিভিশনে বহুবার প্রদর্শিত হয়েছে। ১৯৭০ সালের ১৩ জানুয়ারি পিসি সরকার জাপানের জিগেত্সু শহরে জাদু প্রদর্শন করতে গিয়ে অকস্মাৎ মারা যান।

 

বাংলাদেশের গৌরব জুয়েল আইচ

জাদুকে যিনি বিনোদন থেকে শিল্পের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি আর কেউ নন, জাদুকর জুয়েল আইচ। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে নতুনভাবে পরিচিতি দিয়েছেন এই জাদুকর। তিনি শুধু জাদুশিল্পীই নন; একাধারে বংশীবাদক, চিত্রশিল্পী, সমাজসেবীও বটে। তার আরেকটি পরিচয় তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা। বরিশালে জন্ম হলেও ছেলেবেলা কেটেছে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার সমদেকাঠি গ্রামে। সেই সুবাদে সমদেকাঠি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পিরোজপুর সরকারি হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং স্থানীয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এ ছাড়াও শিক্ষকতার সুবাদে তিনি ঢাকা টিচার্স ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট থেকে বিএড কোর্স সমাপ্ত করেন। খুব ছোটবেলা বাড়িতে বেদেবহর এসেছিল, তাদের কাছেই প্রথম জাদু দেখে ভালো লেগে যায় জুয়েল আইচের। সেই ভালো লাগা ভালোবাসায় পরিণত হয় বানারীপাড়া সার্কাস দলের এক জাদুকরের গলা কাটার জাদু দেখে। আর এই ভালোবাসাটা উন্মাদনায় পরিণত হয় সিরাজগঞ্জের জাদুকর আবদুর রশিদের জাদু দেখে, আর কবি বন্দে আলী মিয়ার রূপকথা পড়ে। সেই থেকেই একটু একটু করে জাদু রপ্ত করতেন নানার কাছে। তার বিখ্যাত জাদু কাগজ থেকে ডলার বানানো, চোখ বেঁধে গাড়ি চালানো, কাটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জোড়া লাগানো ইত্যাদি। মঞ্চে প্রথম তার জাদু প্রদর্শন করেন ১৯৭২ সালে। এ ছাড়া মিডিয়ায় প্রথম জাদু প্রদর্শন করেন ১৯৭৯ সালে। মূলত ভালোলাগা থেকেই জাদু চর্চা করা। কিন্তু একটা সময় তিনি জাদুবিদ্যাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেন। তার ইচ্ছা ছিল যেভাবেই হোক বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে সম্মানের আসনে বসাতেই হবে। সেই থেকেই জোরেশোরে জাদুর চর্চা শুরু। আমাদের জাদুর হাজার বছরের ঐতিহ্যের ইতিহাস তার জানা। বহিঃবিশ্বে দেশের মাথা উঁচু করার হাতিয়ার হিসেবে নিজের জাদুচর্চাকেই বেছে নেন তিনি। এরপরের ইতিহাস কেবল সামনে চলার। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এই গুণী শিল্পী বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার আন্তর্জাতিক পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা জাতীয় পুরস্কার বেস্ট ম্যাজিশিয়ান অব দ্য ইয়ার। সোসাইটি অব আমেরিকান ম্যাজিশিয়ান ১৯৮১ সালে তাকে এ পুরস্কারে ভূষিত করে। এ ছাড়া ইংল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে পুরস্কৃত হন তিনি।

 

মৃত পাখি জীবিত করেন ক্রিস অ্যানজেল

 ক্রিস্টোফার নিকোলাস কে চেনেন না এমন মানুষ পৃথিবীতে অনেকেই থাকতে পারেন। কিন্তু ক্রিস অ্যানজেলকে চেনেন না এমন মানুষ খুব বেশি নেই। মজার বিষয় হলো ক্রিস্টোফার নিকোলাস এবং ক্রিস অ্যানজেল একই ব্যক্তি। তার জাদু বিষয়ক টেলিভিশন শো ‘ক্রিস অ্যানজেল : মাইন্ড ফ্রিক’ জনপ্রিয়তা পায় গোটা বিশ্বজুড়ে। অনুষ্ঠানটির ছয়টি সিজন প্রচারিত হয়েছে। ২০০৫ সালে ‘এ অ্যান্ড ই’ নেটওয়ার্কে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানটি চলে ২০১০ সাল পর্যন্ত। নিত্য নতুন চমকপ্রদ সব জাদু উপহার দিয়ে ক্রিস অ্যানজেল পান বিশ্বজোড়া খ্যাতি। ম্যাজিক ক্যাসেল হলিউড তাকে তিনবার বর্ষসেরা ম্যাজিশিয়ান খেতাবে ভূষিত করে। এ ছাড়াও বিখ্যাত কানাডিয়ান কোম্পানি ‘চিরক দ্য সুলেল’ এর সঙ্গে দশ বছরের চুক্তি করেছেন। জাদু দেখানোর খেলায় তিনি হঠাৎ আকাশে উড়েছেন, পানির ওপর দিয়ে হেঁটে পার হয়েছেন সুইমিং পুল, রাস্তায় পড়ে থাকা গলা কাটা মৃত পাখিকে দান করেছেন জীবন। পাখি এবং মাথার ধর জোড়া লাগিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন আকাশে। এমন বহু সংখ্যক জাদু দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মানুষকে। ক্রিস অ্যানজেলের আরও একটি টেলিভিশন শো বিখ্যাত। নাম ছিল ‘ক্রিস অ্যানজেল : বিলিভ’।

 

আধুনিক জাদুর জনক রবার্ট হুডিনি

রবার্ট হুডিনিকে বলা হয় আধুনিক জাদু শিল্পের জনক। ১৯ শতকের অন্যতম বিখ্যাত জাদুশিল্পী ছিলেন হুডিনি। রবার্ট হুডিনি পরবর্তীতে অনেক জাদুশিল্পীর আদর্শ হিসেবে গণ্য হন। রবার্ট হুডিনির বিখ্যাত জাদুগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘সেকন্ড সাইট’। তার আরেকটি বিখ্যাত জাদু হচ্ছে ‘গ্লাস অব ওয়াটার’। এখানে দেখা যায় তিনি একটি গ্লাসে কিছু তরল রেখে সামনে উপস্থিত দর্মকদের তরলটি সম্পর্কে চিন্তা করতে বলতেন। যে যেই তরলটি সম্পর্কেই বলত না কেন দেখা যেত সেটিই আছে গ্লাসের ভিতর। আরও একটি জাদু হলো তার শূন্যে ভেসে থাকা। এ রকম জাদু দেখিয়ে অনেকেই বেশ নাম কামান। তবে রবার্ট হুডিনি অবশ্য রবার্টের ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম ছিল। তিনি মাটির সমান্তরালে একটি লাঠি স্পর্শ করে শুয়ে থাকতেন। দেখে যে কেউ মনে করতেন তিনি শূন্যে ভেসে ঘুমাচ্ছেন। এরকম বহু জাদু বিখ্যাত হয়েছে রবার্ট হুডিনির। এসবের মধ্যে লাইট অ্যান্ড হেভি চেস্ট, মারভেলাস অরেনজ ট্রি, দ্য ইথারিয়েল সাসপেনসান ইত্যাদি রয়েছে। রবার্ট হুডিনির বাড়িটি পরবর্তীতে জাদুঘর হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বাড়িটির সামনে রবার্ট হুডিনির একটি মূর্তি রয়েছে।

 

পুলিশকে চ্যালেঞ্জ হুডিনির

বিখ্যাত জাদুকর হ্যারি হুডিনির নাম শোনেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যেভাবেই আটকে রাখা হোক তাকে, দড়ি কিংবা শিকল দিয়ে, ঠিক তা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে পালিয়ে যেতই সে। আর এটাই ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে হুডিনির সবচেয়ে বড় জাদুর কৌশল। একবার এক পুলিশকেই চ্যালেঞ্জ করেন হুডিনি। পুলিশ তাকে হাতকড়া পরায় আর সেখান থেকেও নিজেকে ছাড়িয়ে নেন হুডিনি। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে হুডিনির নাম। ১৯০৪ সালে নেওয়া বিখ্যাত এই জাদুকরের বিশেষ হাতকড়া থেকে মুক্তির চ্যালেঞ্জ, দম না নিয়ে সর্বোচ্চ সময় থাকার চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন কাজ পৃথিবী বিখ্যাত। খুব ছোট বেলাতেই প্রথম নিজের উধাও হওয়ার খেলা দেখান হুডিনি। এক্কেবারে উধাও হয়ে যান ১২ বছর বয়সে। চড়ে বসেন এক মালবাহী গাড়িতে। পাড়ি দেন শত শত মাইল আর হয়ে যান অনেকদিনের জন্য হাওয়া। পালিয়ে থাকার এই সময়টা তার কীভাবে কেটেছিল সেটা জানা না গেলেও এতটুকু জানা যায়  যে, ওই সময়টা কানসাসে কাটিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে নিউইয়র্কে নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন হুডিনি আর সাহায্য করতে শুরু করেন তাদের। এক চিত্রগ্রাহকের সহকারীসহ আরও কিছু ছোটখাটো কাজ করতে থাকেন তিনি। রবার্ট হুডিনি বেশ বড় জাদুকর ছিলেন তখন। তার পথ অনুসরণ করেই নিজের নাম হ্যারি হুডিনি করে ফেলেন হুডিনি আর ঢুকে পড়েন জাদুর জগতে।

 

চীনের দেয়াল ভেদ করেন ডেভিড কপারফিল্ড

হিসেবে ডেভিড কপারফিল্ড নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অন্য উচ্চতায়। বিশ্বজুড়ে রয়েছে কপারফিল্ডের কোটি কোটি ভক্ত। তার জাদু মুগ্ধ করে সবাইকে। সব জাদুর মধ্যে কিন্তু একটা ট্রিক্স থাকে। কিন্তু এই জাদুকরের এর ট্রিক্স এর ক্ষেত্রে কেউই সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। এজন্যই কপারফিল্ড বিশ্বজুড়ে সবার আগ্রহে পরিণত হন। তার বিখ্যাত জাদুর খেলার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চীনের দেয়াল ভেদ করা। যা অকল্পনীয় একটি ব্যাপার। সরাসরি নিজের চোখকে বিশ্বাস করাই কষ্টকর। আরও একটা আছে যা ‘ডেভিড কপারফিল্ড ডেথ স্য’ নামে বিখ্যাত। এটি দেখে সাধারণ মানুষও হার্টফেল করতে পারে। এখানে একটি ইলেক্ট্রিক করাত ব্যবহার করে নিজেকে দুই ভাগ করে পেরে কপারপিল্ড এবং আবার নিজেকে জোড়া দেন। সবার চোখের সামনে এ কাজ করেন কপারফিল্ড। আরও মজার মজার জাদু আছে তার যেখানে ডেভিড কপারফিন্ড উড়ে বেড়ায়, মাঝে একজন দর্শককেও সঙ্গে নেয়। একবার একটি ট্রেন ঢেকে দেওয়া হলো বিশাল কাপড় দিয়ে। উত্সুক জনতা অপেক্ষা করছে।

এরপর কী হবে? ডেভিড কপারফিল্ড বলছেন গোটা ট্রেনটাই নাকি হাওয়ার সঙ্গে মিশে যাবে। সত্যিই তাই হলো। ট্রেনটি মুহূর্তেই হারিয়ে গেল দৃশ্যমান পৃথিবী থেকে। যা সত্যিই বিস্ময়কর।

জাদুর প্রতি জীবনের শুরুতেই তার ভিতর আগ্রহ তৈরি হয়। সেটা তার দাদার সঙ্গে থেকে। তার দাদা একবার ডেভিডকে তাসের কার্ড দিয়ে জাদু দেখাছিলেন। তখন ডেভিডের বয়স মাত্র সাত। সে সময় দাদার এ জাদু তার ভিতরটা নাড়া দেয়। তবে দুঃখের বিষয় হলো তিনি যখন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ঠিক তার আগেই তার দাদা পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। তাই তার জাদুর সব কৃতিত্ব দাদাকে উৎসর্গ করে দেন ডেবিড কপারফিল্ড। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত অসহায়ত্বের মধ্যে কেটেছে ডেভিডের জীবন। মূলত সামাজিকভাবে নিজেকে উপরের সারিতে নিয়ে যাওয়ার জন্যই ডেভিড জাদুশিল্পে মনোনিবেশ করেন। তিনি যখন জাদু শিখছিলেন এবং মানুষকে দেখানো শুরু করলেন ঠিক সে মুহূর্ত থেকেই সবাই তাকে আলাদা চোখে চিনতে শুরু করে। বিষয়টা ডেভিডকে অন্যরকম অনুভূতি এনে দেয়। অনেকেই মনে করেন তিনি ডাকিনি চর্চা (ভুডো) কিংবা কিছু একটা করেন যার সহায়তায় এসব কিছু হয়। তাদের দাবি ডেভিড কপারপিল্ডের ভিতর নিশ্চয়ই অলৌকিক কিছু একটা আছে যা ডেভিড কখনই প্রকাশ করেননি।

 

ডেভিড ব্লেইনের ডাইভ অব ডেথ

নাম ডেভিড ব্লেইন। সবার কাছে তিনি পরিচিত স্ট্রিট ম্যাজিশিয়ান হিসেবে। খুব কাছ থেকে জাদু দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দেন মানুষকে। কঠিন অবস্থায় তার টিকে থাকার অসাধারণ দক্ষতা হতবাক করে দিয়েছে এসময়ের সবাইকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত জাদুটি হলো ফ্রোজেন অব টাইম। এত দেখা যায় বরফের ভিতর ডেভিড প্রবেশ করে ৬৩ ঘণ্টা থেকে চমকে দেন সবাইকে। এটা ছিল একটি বিশ্বরেকর্ড। ডেভিডের বাবা ছিলেন একজন স্প্যানিশ এবং মা রাশিয়ান বংশোদ্ভূত একজন ইহুদি। তার ৪ বছর বয়সে বাবা হারিয়ে যান। তার মা ছিলেন একজন জিপসি, জাদু চর্চা করতেন। তিনি উঁচুমানের সহিষ্ণু কসরতদার হিসেবে গোটাবিশ্বে প্রসিদ্ধ এবং অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ব রেকর্ড ভাঙেন ডেবিড ব্লেইন।

বিশেষ দুঃসাহসিক কাজগুলোর মধ্যে আছে গস্ট্রিট ম্যাজিক ও ম্যাজিক ম্যান, ফ্রোজেন ইন টাইম, ভার্টিগো, ডাইভ অব ডেথ ইত্যাদি। ৯০ দশকের শেষের দিকে এসে ডেভিড ব্লেইন বিখ্যাত হন। 

স্ট্রিট ম্যাজিক নামে তার টেলিভিশন শো গোটা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এরপরই ব্লেইনের জীবন কাহিনী নিয়ে বড় পর্দায় কাজ করে রবার্ট ডি নিরোর প্রোডাকশন কোম্পানি ট্রাইবেকা।

 

নদীর ওপর হাঁটেন স্টিভেন

পুরু নাম স্টিভেন ফ্রেনি ডায়নামো। যিনি জাদুবিদ্যায় নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্যমাত্রায়। পুরো নাম স্টিভেন ফ্রেনি। তবে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে তিনি ডায়নামো নামে পরিচিত। তার ছোটবেলা থেকে  বেড়ে ওঠার স্থানটি ব্রাডফোর্ডের ডেলফহিল এবং হোল্মি উড এস্টেস। পাহাড়-পর্বত আর বনের রহস্য মায়াজাল স্টিভেনকে এক রহস্যময় মানুষে পরিণত করেছে। জাদু শিখতে ভ্রমণ করেছেন মার্কিন মুল্লুকের নিউ ওরলিয়ন্স ও লুইজিয়ানায়। আর জাদুবিদ্যার এ পীঠস্থানেই নিজেকে একজন পরিণত জাদুশিল্পী বানিয়েছেন। আর নিজের কাজকে বহুমাত্রিকতা দিতে শিখেছেন নৃত্যের কলাকৌশল। তার নৃত্যে যোগ হয়েছে আধুনিকতম সংস্করণ হিপ হপ। একজন পেশাদার জাদুশিল্পী হিসেবে মঞ্চে পরিবেশন শুরু করেন ২০০২ সাল থেকে। ডায়নামোর টেলিভিশনে অভিষেক চ্যানেল ফোরের স্পেশাল আয়োজন ‘ডায়নামোস স্টেট অব মাইন্ড’ অনুষ্ঠানে। ২০১১ সালের ২৫ জুন তিনি একই সঙ্গে স্থিরচিত্র এবং ভিডিওটেপ প্রকাশ করেন যেখানে তাকে টেমস নদীর ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে। তিনি ২০১১ সালের ২৩ অক্টোবর বিশ্ব জাদুশিল্পীদের সংগঠন ম্যাজিক সারকেলে  যোগদান করেন। ডায়নামো বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্য বিনামূল্যে জাদু পরিবেশন করে তহবিল গঠনে সাহায্য করে থাকেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর