রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বরিশালে করোনা রোগী বাড়ছে, সেবা কমছে

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালে করোনা রোগী বাড়ছে, সেবা কমছে

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলের রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোটি কোটি টাকার ভারী যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে বিকল

দক্ষিণের মানুষের ভরসা শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ওয়ার্ডে রোগী বাড়ছে।  ওয়ার্ড ছাপিয়ে রোগীদের স্থান হচ্ছে বারান্দায় খোলা জায়গায়। তাদের সেবা দেওয়ার জন্য নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার-আয়া। বহিরাগত ১২৪ জন বুয়া পেটেভাতে কাজ করে ফুটফরমায়েশ করে রোগীদের। অন্যান্য দিন কালেভদ্রে ডাক্তার পাওয়া গেলেও শুক্র-শনিবার এই হাসপাতাল থাকেন প্রায় ‘ডাক্তারশূন্য’। এদিকে হাসপাতালের জটিল রোগ পরীক্ষার কোটি কোটি টাকার ‘অচল’ ভারী যন্ত্রপাতিগুলো চালু করার জন্য করোনাকালের শুরু থেকে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠলেও আজ পর্যন্ত একটি মেশিনও সচল করা হয়নি। এ কারণে রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার বেসরকারি বাজার ব্যাপক জমজমাট হয়ে উঠেছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কমিশন ভাগাভাগি নিয়ে হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তার নিগৃহীত হওয়াসহ এ নিয়ে ধর্মঘট পর্যন্ত হয়েছে ইন্টার্নদের। জরুরি প্রয়োজনে ডাক্তার না পাওয়াসহ নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনদের। এর বিপরীতে জনবল সংকটের যুক্তি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, ৫০০ শয্যা হাসপাতালের জনবল কাঠামো অনুযায়ী ডাক্তার থাকার কথা ২২৪ জন, আছে ৯৪ জন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৪১৫ কর্মচারীর স্থলে আছে ২৫০ জন। ২০১০ সালে হাসপাতাল এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও গত ১০ বছরে দ্বিগুণ জনবল কাঠামো অনুমোদন হয়নি। ৫০০ শয্যার ঘাটতি জনবল দিয়ে বর্তমানে দেড় হাজার রোগীর সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। এ কারণে অভাব-অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের নিত্যসঙ্গী। এই সুযোগে রোগীদের ফুটফরমায়েশ আর আর ট্রলি ঠেলে বকশিশ-কমিশন নিচ্ছে বহিরাগত ১২৪ জন ‘বুয়া’। কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে আবার ওয়ার্ড মাস্টারদের পার্সেন্টেজ দিয়েই নানাভাবে রোগীদের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। গত মার্চে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে যোগদান করার পর লাপাত্তা হওয়া সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শাখাওয়াত হোসেন আজ পর্যন্ত কর্মস্থলে ফেরেননি। এরপর ভরসা একমাত্র অভিজ্ঞ চিকিৎসক ডা. এ কে এম আজাদের গত ২৮ এপ্রিল অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়।

ডাক্তার না থানায় পরিচালক চিঠি ইস্যু করে জুনের শেষ সপ্তাহে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দেন। করোনা ওয়ার্ডে ১২টি এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ১০টি আইসিইউ বেড পরিচালনার জন্য পদ সৃষ্টি করে আজ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অন্য ওয়ার্ড থেকে সাময়িক ডাক্তার এনে আইসিইউ চালানোর চেষ্টা করা হলেও সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকায় আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটর সুবিধা পাচ্ছেন না রোগীরা। একটু মুমূর্ষু হলেই রোগী পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকায়। করোনা ওয়ার্ডে ডাক্তাররা এখনো থাকেন কক্ষবন্দী। নার্স-আয়াতে ভরসা রোগীদের। সার্বিক বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, রোগ পরীক্ষার ভারী যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়। কিন্তু এগুলো চালানোর দক্ষ জনবল দেওয়া হয় না। দিনের পর দিন অকেজো থাকায় মেশিনগুলো কার্যকারিতা হারাচ্ছে। ২০১০ সালে হাসপাতাল ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও সে অনুযায়ী জনবল কাঠামো অনুমোদন হয়নি। উপরন্তু ৫০০ শয্যা হাসপাতালের জনবল কাঠামোতেও ডাক্তার এবং তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট রয়েছে।

সর্বশেষ খবর