বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
Bloomberg -এর দৃষ্টিতে বিশ্বের শীর্ষ ধনী

ইলন মাস্কের অবিশ্বাস্য উত্থান

ইলন মাস্কের অবিশ্বাস্য উত্থান

বিল গেটস, জেফ বেজোসকে পেছনে ফেলে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। রকেট নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী তিনি। গড়েছেন টেসলা, পেপ্যালসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান। তাঁর মোট সম্পদ ১৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাঁর বিস্ময়কর পরিকল্পনা কতটা বাস্তবসম্মত সেসব নিয়ে তর্ক করেছিলেন প্রযুক্তিবিদরা। কেউ কেউ হেসেছেন যখন তিনি বলেন, একদিন মঙ্গলগ্রহে থাকবে মানুষ। হাইপার লুক নিয়েও অনেকে ছিলেন সন্দিহান। তবুও একের পর এক সাফল্য ধরা দিয়েছে ইলন মাস্কের হাতে। এসব বিদ্রূপকে পাত্তা না দিয়ে তিনিই হয়ে উঠেছেন বিশ্বের সেরা ধনী।  - আবদুল কাদের

 

কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন?

প্রযুক্তির বিস্ময়মানব ইলন মাস্ক; প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও সফল ব্যবসায়ী। জিপ টু থেকে পেপ্যাল, এরপর স্পেস-এক্স, এখন টেসলা-মাস্ক নিজের পরিধি ধীরে ধীরে বাড়িয়েছেন। ব্লুমবার্গ সূচক অনুযায়ী, অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জেফ বেজোসকে পেছনে ফেলে বিশ্বের সেরা ধনীর খেতাব অর্জন করেন ৪৯ বছর বয়সী এই প্রযুক্তি ব্যবসায়ী। সম্প্রতি টেসলার শেয়ারমূল্য ৬ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় মাস্কের শেয়ার ১০ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পায়। ফলে ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ারস ইনডেক্সে এ বছরের শীর্ষ ৫০০ সম্পদশালীর তালিকায় প্রথম স্থান দখল করে নেন ইলন মাস্ক। স্পেস-এক্স এবং টেসলার প্রধান নির্বাহী মাস্কের সম্পদের অর্থমূল্য ১৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে তিন বছর ধনীর তালিকায় শীর্ষে থাকা অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোসের শেয়ার বৃদ্ধি পায় ২ শতাংশের কম। ব্লুমবার্গ সূচক অনুযায়ী, জেফ বোজোসের মোট সম্পদের অর্থমূল্য ১৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ব্লুমবার্গ রিয়েল টাইম বিলিয়নিয়ার সূচক অনুযায়ী মোট সম্পদের দিক থেকে ইলন মাস্ক এখন জেফ বেজোসের চেয়ে ৩ বিলিয়ন ডলার এগিয়ে রয়েছেন। ব্লুমবার্গ সূচক বলছে, বিল গেটস ১৩২ বিলিয়ন ডলার নিয়ে তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, গত বছর ইলন মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৫০ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। কম সময়ে এত সম্পদ বাড়ার নজির ইতিহাসে সম্ভবত এটাই প্রথম। তার এ অর্জনের পেছনে ছিল টেসলার শেয়ার মূল্যের অভূতপূর্ব উত্থান, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকে অন্তর্ভুক্তি এবং ওয়াল স্ট্রিট ও খুচরা বিনিয়োগকারীদের উদ্যম। ধারাবাহিক মুনাফার ফলে টেসলার শেয়ার গত বছর ৭৪৩% বৃদ্ধি পেয়েছিল। বিভিন্ন সূচকে অন্যান্য গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বাইরে টেসলার স্টক মূল্যের উত্থান এই মূল্যায়নকে আট গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, টেসলার প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে থাকা ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ২০ শতাংশ শেয়ারের মালিক। টেসলা গত বছর মাত্র অর্ধ-মিলিয়ন গাড়ি উৎপাদন করেছিল, যা ফোর্ড মোটর কোম্পানি ও জেনারেল মোটর কোম্পানির উৎপাদনের একাংশ। ডেমোক্র্যাটরা জর্জিয়ার সিনেটের উভয় আসন লাভ করে কংগ্রেসে সংখ্যাধিক্য হওয়ায় কোম্পানিটি এখন আরও বেশি স্বল্প-মেয়াদি লাভ করবে। ডেমোক্র্যাটরা দ্রুত সময়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন বাড়ানোর পক্ষে কাজ করছে। এদিকে ফোর্বস রিয়েল টাইম ট্রেকারের এখন শীর্ষে অবস্থান করছেন অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস। এই তালিকায় এখনো দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছেন যথাক্রমে ইলন মাস্ক ও বিল গেটস। যদিও ফোর্বস ম্যাগাজিন তাদের নতুন সূচক এখনো প্রকাশ করেনি। প্রকাশ করলে অবশ্যই তালিকার শীর্ষ অবস্থানে চলে আসবেন ইলন মাস্ক। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শীর্ষ ধনী হওয়ার পর ইলন মাস্কের তেমন উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। তিনি এটা নিয়ে বেশি কিছু বলেননি। হয়তো ধরেই নিয়েছিলেন, কিছুদিনের মধ্যে শীর্ষ ধনী হতে যাচ্ছেন তিনি। ভারতের প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদ মাধ্যম গেজেটস নাউয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের শীর্ষ ধনী হওয়ার পর নিজের প্রতিক্রিয়ায় ইলন মাস্ক এক টুইট বার্তায় লিখেন-‘কী অদ্ভুত’। অন্য একটি টুইট বার্তায় তিনি লিখেন-‘যাই হোক, কাজে ফিরে আসি...।’

 

কে এই ইলন মাস্ক

প্রযুক্তি ও ব্যবসায়ের খোঁজখবর রাখেন; তাঁরা ইলন মাস্কের কথা জানেন না, এমন মানুষ বোধহয় কম। ইলন মাস্ক দক্ষিণ আফ্রিকার বংশোদ্ভূত আমেরিকান উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী; যিনি ১৯৯৯ সালে এক্স ডট কম (যা পরবর্তীতে পেপ্যাল নামে পরিচিত পায়), ২০০২ সালে স্পেস এক্স ও ২০০৩ সালে টেসলা মোটরস প্রতিষ্ঠা করেন। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ইলন মাস্ক তাঁর জীবনের প্রথম প্রতিষ্ঠান জিপ টু (এমন একটি সফটওয়্যার যা খবরের কাগজের জন্য ইন্টারনেট গাইড হিসেবে ব্যবহার করা হতো) বিক্রি করে ধনকুবের বনে যান। ২০১২ সালের মে মাসে তিনি খবরের কাগজের শিরোনামে উঠে আসেন যখন তাঁর কোম্পানি স্পেসএক্স প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে অর্থের বিনিময়ে ভ্রমণে ইচ্ছুক যাত্রী প্রেরণ করে। ২০১৬ সালে সোলার সিটি কেনার মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর অর্জনের পাল্লা আরও ভারী করেন। ট্রাম্প প্রশাসনের শুরুর দিনগুলোতে উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করে শিল্প ও বাণিজ্যের জগতে একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা হিসেবে নিজের অবস্থান পাকা করেন।

যাত্রা শুরুর গল্প

১৯৯৫ সাল, ইন্টারনেট তখন নতুন। নীরবে বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে পৃথিবীর বুকে। খবরের কাগজের জন্য ইন্টারনেট গাইড হিসেবে কাজ করবে, এমন সফটওয়্যার আবিষ্কার করলেন ইলন মাস্ক। যার নাম দেওয়া হলো জিপ টু। ইলন মাস্ক ও তাঁর ভাই মিলে সফটওয়্যার কোম্পানিটি দাঁড় করান। তিনি ছিলেন কোম্পানির ৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক। প্রথম কাজেই সফলতা পেলেন, তাঁর সফটওয়্যারটা নজরে পড়ল বিখ্যাত টেক কোম্পানি কমপ্যাকের। ১৯৯৯ সালে কোম্পানিটি বিক্রি করে তাঁর পকেটে ঢুকল প্রায় ২২ মিলিয়ন ডলার।

এরপর পেপ্যাল

মানি ট্রান্সফার কোম্পানির মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে টাকা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানোর আইডিয়াটা সর্বপ্রথম এনেছিলেন ইলন মাস্ক। যার বাস্তবায়ন করেছিলেন একই বছর (১৯৯৯ সাল) মানি ট্রান্সফার কোম্পানি এক্স ডটকম চালু করার মাধ্যমে। যা পরবর্তীকালে রূপ নেয় অনলাইন মানি ট্রান্সেকশনের মাধ্যম পেপ্যাল এ। ২০০২ সালে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইবে পেপ্যালকে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয়। পেপ্যালের ১১ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিলেন মাস্ক, তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিল ১৬৫ মিলিয়ন ডলার!

সীমানা পেরিয়ে মহাকাশ

রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে পণ্য সরবরাহের চিন্তাটা ইলন মাস্কের মাথায় ছিল আগেই। রাশিয়ায় রকেট কিনতে গিয়ে ভাবলেন কম খরচে রকেট বানাবেন। ২০০২ সালে গঠন করলেন স্পেসএক্স। স্পেসএক্স থেকে ফ্যালকন-১ নামের রকেটটি উৎক্ষেপণ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছিলেন কিন্তু হাল ছাড়েননি। সম্প্রতি ফ্যালকন-১ এর সফল উৎক্ষেপণ হয়। ইলন মাস্ক নাম লেখালেন ইতিহাসে। মাত্র ৬০ জন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করা স্পেস-এক্স কোম্পানিতে বর্তমানে প্রায় সাত হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছেন।

টেসলা দিয়ে শীর্ষস্থান

বিশ্বের জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় ইলেকট্রনিক কারের মাঝেই ভবিষ্যৎ খুঁজে পেয়েছিলেন ব্যবসায়ী মাস্ক। তাই ২০০৪ সালে মার্টিন ইবারার্ট এবং মার্ক টারপেনিং-এর সঙ্গে চালু করেন টেসলা মোটরস। বছর দুয়েকের মাথায় প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে আসে মাস্কের টেসলা মোটরস। পরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পরিবেশবান্ধব গাড়ির জনপ্রিয়তা। ২০০৮ সালে টেসলার স্পোর্টস কার রোডস্টার বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী গাড়ির খেতাব অর্জন করে। মাস্কের বিশ্বাস, বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী গাড়ির খেতাব অর্জন করবে তার টেসলা মোটরস।

দ্য বোরিং কোম্পানি

২০১২ সালে দৈনন্দিন হাইপার-লুপ প্রযুক্তির ব্যবহারে আগ্রহ দেখান ইলন মাস্ক। হাইপার-লুপ-এর জন্য সুড়ঙ্গ খুঁড়তে তিনি ‘দ্য বোরিং কোম্পানি’ নামক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। রাস্তায় গাড়ির জ্যামে বিরক্ত হয়ে এমন পরিকল্পনা করেছিলেন মাস্ক। তার স্বপ্ন হচ্ছে কয়েকটি সুড়ঙ্গ তৈরি করা  যেগুলো দিয়ে মানুষ ও গাড়ি যানজট ছাড়াই পার হয়ে যাবে। সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে গাড়ি চলবে এমনটা নয়। বরং এটি একটি পডের উপর থাকবে, ওই পড চলবে নেটওয়ার্কে। সম্প্রতি ঘণ্টায় এক হাজার কি.মি. গতিতে চলা হাইপার-লুপের সফল পরীক্ষা হয়।

হাইপার-লুপ

২০১৩ সালে মাস্ক যাতায়াতের এক নতুন পদ্ধতির ঘোষণা দেন। যার নাম দেওয়া হয় হাইপার-লুপ। এর মাধ্যমে বড় শহরগুলোতে খুব সহজেই যাতায়াত সম্ভব হবে। প্রযুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে তা হবে দ্রুতগতির (ঘণ্টায় ৬০০ মাইল)। এটি টিউব কেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। টিউবটি একটি দেশের বিভিন্ন শহরে কিংবা কয়েকটি ভিন্ন দেশে যুক্ত থাকবে। যার ভিতরে থাকবে ক্যাপসুল আকৃতির যানবাহন। উদাহরণ হিসেবে মাস্ক বলেন, প্রযুক্তিটির মাধ্যমে নিউইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস যেতে সময় লাগকে মাত্র ৪৫ মিনিট।

 

বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিজীবন

জন্ম এবং ছেলেবেলা

জন্ম ১৯৭১ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায়। প্রচ- ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের ছিলেন ছোটবেলায়, তার জন্য ভুগতেও হয়েছিল তাকে। মা ছিলেন মডেল। বাবা ছিলেন ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার। পাশাপাশি তাঁর ছিল স্থাবর সম্পত্তির উন্নয়ন ও কেনাবেচার ব্যবসা। মাত্র নয় বছর বয়সে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়েছিল। সেই ধকল সামলাতে বই ও কম্পিউটারের সঙ্গে সময় কাটাতেন মাস্ক। নিজে নিজেই শিখেছেন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং।

পড়াশোনায়ও পারদর্শী

দক্ষিণ আফ্রিকায় উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে কানাডায় পাড়ি দেন। তখন মাস্কের বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। সেখানে ওন্টারিওর কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন মাস্ক। এর মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ পেনিসিলভানিয়া। ওই সময়টিতে সিলিকন ভ্যালিতে ‘ইন্টার্ন’ বা শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ করতেন তিনি। পরে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির পিএইচডি কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল মাস্কের। কিন্তু ইন্টারনেট স্টার্টআপ জগতে পা রাখার লক্ষ্যে পিএইচডি কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার দুই দিনের মধ্যেই প্রথম সারির এই বিদ্যায়তনকে বিদায় জানান।

দাম্পত্য জীবনে

সফল ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মাস্ক দাম্পত্য জীবনে অন্য রকম। বিয়ে করেছেন দুজনকে। দ্বিতীয় স্ত্রীকে আবার বিয়ে করেছেন দুবার। ২০০০ সালে কানাডিয়ান লেখিকা জাস্টিন উইলসনের সঙ্গে সংসার শুরু করেছিলেন। এটাই ছিল মাস্কের দীর্ঘ ৮ বছরের বিবাহিত জীবন। তবে তা ২০০৮ সালে বিচ্ছেদের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে। তাদের প্রথম সন্তান ১০ সপ্তাহ বয়সে মারা যায়। তবে সে ঘরে এখনো পাঁচ সন্তান রয়েছে। ২০১০ সালে বিয়ে করেন অভিনেত্রী তালুলাহ রেইলিকে। কিন্তু দুই বছর পর বিচ্ছেদে যান মাস্ক। ২০১৩ সালে আবার মাস্ক-রেইলি দম্পতি বিয়ে করেন। ২০১৬ সালে আবার বিচ্ছেদ ঘটে। ২০১৫ সালে অভিনেতা জনি ডেপের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর ২০১৭ সালে অ্যাম্বার হার্ডের জীবনে আসেন মাস্ক। তবে সে সম্পর্কেও ভাঙন ধরে। এরপর ২০১৮ সালে মাস্ক নতুন সম্পর্কে জড়ান সংগীতশিল্পী গ্রিমসের সঙ্গে। বিয়ে না করলেও তাদের ঘরে একটি ছেলে আছে। বিচ্ছেদের বিষয়ে ইলন মাস্ক বলেছেন, ‘কাজ আর প্রজেক্টের জন্য তিনি ব্যক্তিগত জীবনকে বিসর্জন দিয়েছেন।’

মিতব্যয়ী পরিশ্রমী

অতিরিক্ত খরচ একদমই পছন্দ নয় ইলন মাস্কের। উচ্চ পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রাবস্থায় মাত্র এক ডলার খরচ করতেন। দামি খাবার নয়, কমদামি নুডুলস ছিল প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়। কলেজের ফি এবং নিজের হাতখরচ মেটাতে নিজের রুম ও বন্ধুর রুমকে নাইট ক্লাব হিসেবে ভাড়া দিতেন। জীবনের প্রথম ব্যবসা শুরুর দিকে পুঁজি ছিল কম। ব্যবসা শুরু করার পর অফিসে ঘুমাতেন, কারণ বাসা ভাড়া নেওয়ার মতো অর্থ ছিল না। টি কম্পিউটারে সেরে নিতেন কাজকর্ম। দিনে ওয়েবসাইট চালু থাকত ও রাতে কোডিংয়ের কাজ করতেন।

স্বপ্ন ছোঁয়া প্রজেক্টমিশন মার্স

মঙ্গলগ্রহ নিয়ে অদ্ভূত আগ্রহ মাস্কের। স্পেসএক্স থেকে ফ্যালকন হেভি নামের একটি স্পেসশিপ তৈরি করেছেন কেবল ‘মিশন মার্সে’র জন্য। প্রযুক্তির বিস্ময়কর মানবের প্রকাশ করা পরিকল্পনা নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক সংবাদ বিজনেস ইনসাইডার।

২০২৪ সালের মধ্যে মানবজাতিকে মঙ্গলগ্রহে পাঠানো শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন মাস্ক। মাস্ক বলেছিলেন, মঙ্গল যাত্রার জন্য কার্গো ফ্লাইট প্রস্তুত রয়েছে, যা মানুষের জন্য উপযুক্ত। সে সম্পর্কে মাস্ক আরও বলেছেন, প্রতি ২৬ মাসে একবার পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহের মিলনস্থল তৈরি হয় অর্থাৎ ২০১৮ সালে একবার এবং ২০২০ সালে একবার এমন সময় তৈরি হবে। আর আমি মনে করি, যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কিছু ঠিকঠাক হয় তবে ২০২৪ সালে আমরা মানুষ পাঠিয়ে ২০২৫ সালে পৌঁছে দিতে পারি।

মঙ্গলে মানুষের শুধুই বেঁচে থাকা নিয়ে আগ্রহী নন মাস্ক। ২০৫০ সালের মধ্যে মাস্ক মঙ্গলগ্রহে একটি থ্রাইভিং সিটি (সমাজকল্যাণ সংস্থা, যা পৃথিবীর উন্নয়নে কাজ করে থাকে) তৈরি করতে চান। নতুন শহরের পরিকল্পনা নিয়ে মাস্ক বলেছেন, লাল দুনিয়ায় (মঙ্গল) কাপড় আয়রন থেকে পিৎজা দোকান সব অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্পেসএক্সের তৈরি রকেট ফ্যালকন হেভির সফল উৎক্ষেপণ হয়। তবে এর আগে স্পেসএক্স থেকে ফ্যালকন ১ রকেটটি উৎক্ষেপণ করতে গিয়ে ব্যর্থ হন, তবে বারবার ব্যর্থ হয়েও তিনি হাল ছাড়েননি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে মঙ্গলে শহর স্থাপন কেবল সময়ের ব্যাপার।

‘মিশন মার্স’ নামের প্রোজেক্টটি ইলন মাস্কের ড্রিম প্রোজেক্ট। মাস্ক কয়েকবার বলেছেনও, মঙ্গলে মরতে পারলে তিনি বেশি খুশি হবেন। লোকে তার পরিকল্পনাকে আজগুবি বলছে, তবুও থেমে নেই মাস্কের ‘মিশন মার্স’ প্রজেক্ট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতের রেকর্ড বজায় থাকলে, মঙ্গলযাত্রার বেশি দেরি নেই!

 

দক্ষিণ আফ্রিকার ছেলে

১৯৭১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেটোরিয়াতে ইলন মাস্কের জন্ম। বাবা দক্ষিণ আফ্রিকান ও কানাডিয়ান মায়ের সন্তান ইলনের পুরো নাম ‘ইলন রিভ মাস্ক’।

শেষ করেননি শিক্ষাজীবন

স্নাতকোত্তর শেষে পিএইচডির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পান। কিন্তু অর্থ উপার্জনের নেশায় পিএচইডি অধরা থেকে যায়। বর্তমানে উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্বের তরুণদের আইকন তিনি।

প্রতিভাবান

মাত্র ১০ বছর বয়সেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে পারদর্শিতা লাভ করেন। ১২ বছর বয়সে বেসিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে ব্লাস্টার নামের একটি ভিডিও গেম তৈরি করেন। যা পরবর্তীতে ৫০০ ডলারে পিসি অ্যান্ড অফিস টেকনোলজি ম্যাগাজিনের কাছে বিক্রি করেছিলেন। 

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠায় ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি স্পেসএক্স-এর সবচেয়ে আধুনিক ফ্যালকন রকেটের মাধ্যমে ২০১৮ সালের মে মাসে মহাকাশে পাঠানো হয়।

বেতন

কোম্পানির সিইও হিসেবে বছরে বেতন নেন মাত্র এক ডলার। নিজের অংশীদারিত্ব থাকা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশসহ আরও কিছু সুবিধা পান মাস্ক। বছরে ১ ডলার বেতন সিলিকন ভ্যালির ট্রেন্ড।

বিতর্কিত চরিত্র

বিতর্কের জন্ম দিতে ভালোবাসেন মাস্ক। টুইটারে নানা বিতর্কিত টুইটও করেন। শুধু তাই নয়, নিজ প্রতিষ্ঠানের সহযোগীদের সঙ্গেও নানা সময় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৮ সালে কমেডিয়ান জো রোগান-এর সঙ্গে অংশ নেওয়া এক পডকাস্টে সরাসরি সম্প্রচারের সময় গাঁজা সেবন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন।

পাত্তা দেননি কভিড-১৯

করোনাভাইরাসকে একেবারেই পাত্তা দেননি এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা। গত এপ্রিলে কভিড-১৯ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া বোকামি বলে বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন মাস্ক। যদিও পরবর্তীকালে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। আর লকডাউনে ফ্যাক্টরি বন্ধ রাখার ঘোষণা উপেক্ষা করে, উল্টো ফ্যাক্টরি বন্ধ করলে তিনি সেখান থেকে তা সরিয়ে নেওয়ার হুমকি দেন।

 

জানা অজানা...

ইলন মাস্কের বিশ্বাস, স্কুল কখনো মানুষকে জ্ঞানী করতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন সাধনা।

 

প্রযুক্তি বিশ্বের বিস্ময় ইলন মাস্কের অনুপ্রেরণীয় চরিত্র আয়রনম্যান মুভির টনি স্টার্ক। আয়রনম্যান টু মুভির কিছু অংশ স্পেসএক্সের ভিতরে দৃশ্যায়িত হয়।

 

টেসলা মোটরসের সিইও হওয়া সত্ত্বেও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা মাস্কের বার্ষিক বেতন ছিল মাত্র এক ডলার!

 

যখন মাস্ক কলেজে ছিলেন, প্রতিদিন এক ডলার বেতনে হট ডগ ও কমলা খেয়ে জীবনধারণ করতেন।

 

মাস্কের বাবা-মায়ের ধারণা ছিল, ছেলে বুঝি বধির! কারণ, দূর থেকে ডাকলে তিনি সাড়া দিতেন না।

 

স্কুলে খুব বাজেভাবে সহপাঠীদের হয়রানির শিকার হতে হতো মাস্ককে। একবার তাকে একদল সহপাঠী সিঁড়ির ওপর থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল।

 

সহপাঠীদের দ্বারা হয়রানির পর ১৫ বছর বয়সে মাস্ক মার্শাল আর্ট (কারাতে, জুডো ও কুস্তি) শিখেন।ছেলেবেলায় মাস্ক অন্ধকারকে প্রচ- ভয় পেতেন। কিন্তু বই পড়ে আবিষ্কার করেন, অন্ধকার হচ্ছে কেবল ফোটনের অনুপস্থিতি মাত্র।

 

ইলন মাস্কের বিশ্বাস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো- মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় শত্রু।

 

আয়রনম্যান খ্যাত মাস্কের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্বের একজন মহৎ বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা।

 

ইলন মাস্কের তিনটি দেশের (সাউথ আফ্রিকা, আমেরিকা ও কানাডা) নাগরিকত্ব রয়েছে।

 

ইলন মাস্ক ছয় সন্তানের জনক। তাদের প্রত্যেকেই ছেলে। প্রথম স্ত্রীর ঘরে পাঁচ সন্তান এবং কানাডিয়ান বান্ধবী গায়িকা ক্লেরি এলিজের ঘরে এক সন্তান।

 

মাস্ক মহাকাশ যাত্রার ব্যয়কে ৯০% কমিয়ে আনেন। যা ছিল ১ বিলিয়ন ডলার, এখন খরচ ৬০ মিলিয়ন ডলার।

 

এখন পর্যন্ত মোট ৮টি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন মাস্ক। সেগুলো-জিপ টু, পেপ্যাল, টেসলা, স্পেসএক্স, ওপেন এআই, নিউরালিঙ্ক, হাইপার-লুপ ও দ্য বোরিং কোম্পানি।

সর্বশেষ খবর