সোমবার, ১০ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

মহাকাশে যত দুর্ঘটনা

সা ই ফ ই ম ন

মহাকাশে যত দুর্ঘটনা

মহাকাশ অভিযানে বহু দুর্ঘটনার ইতিহাস রয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুঃসাহসিক বহু নভোচারী। মহাকাশ অভিযানে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ব্যর্থ হয়েছে অনেক অভিযান। তবুও রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের মহাকাশ যাত্রা থেমে নেই। নানা দুর্ঘটনার পরও মহাকাশ যাত্রায় বিজ্ঞানীরা এগিয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। নিত্যনতুন অভিযানের ঘোষণা প্রায়ই দিয়ে থাকেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি চীনের নিয়ন্ত্রণ হারানো একটি রকেট আলোচনায় এসেছে।  মহাকাশ যাত্রায় দুর্ঘটনা ও ব্যর্থ অভিযান নিয়ে আজকের রকমারি...


ভারত সাগরে আছড়ে পড়ে চীনা রকেট

সম্প্রতি মহাকাশে পাঠানো চীনের একটি রকেট নিয়ে বেশ জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম; সবখানে চীনের নিক্ষেপ করা রকেট নিয়ে চলে চর্চা। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নিক্ষেপ করার পর মহাকাশযান ‘লং মার্চ ৫-বি’ রকেটটি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, পৃথিবীর কক্ষপথে নিজেদের মহাকাশ স্টেশন বানাতে চায় চীন। যার নাম দেওয়া হয় ‘তিয়ানহে মহাকাশ স্টেশন’। মহাকাশ স্টেশনটির একটি ‘মডিউল’ (অংশ) পরীক্ষামূলকভাবে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠাতে গত ২৯ এপ্রিল রকেট উৎক্ষেপণ করেছিলেন চীনের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। উৎক্ষেপণের পর ২১ টন ওজনের রকেটটি চীনের বিজ্ঞানীদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এরপর শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা, পৃথিবীর ঠিক কোথায় গিয়ে পড়বে চীনের রকেট!

অবশেষে সব আশঙ্কার অবসান ঘটিয়ে বেইজিং সময় সকাল ১০টা ২৪ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ৮টা ২৪ মিনিট) পৃথিবীর বায়ুম-লে প্রবেশ করে রকেটটি। আর তা গিয়ে আছড়ে পড়ে ভারত মহাসাগরে। রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রকেটটির ধ্বংসাবশেষ মালদ্বীপের পশ্চিমে মহাসাগরে পতিত হয়। চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, ‘লং মার্চ ৫বি’ নামের ওই রকেট চীনের হাইনান দ্বীপ থেকে পৃথিবীর কক্ষপথের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কিছুক্ষণ পর তার ধ্বংসাবশেষের জন্য অনেকে আকাশের দিকে উদ্বেগ নিয়ে তাকাতে শুরু করেন। তবে চায়না ম্যানড স্পেইস ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস বলছে, ধ্বংসস্তূপের বেশির ভাগই বায়ুম-লে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

গত ২৯ এপ্রিল ‘লং মার্চ ৫বি’ নামের ওই রকেট চীনের হাইনান দ্বীপ থেকে তিয়ানহে মডিউল নিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথের উদ্দেশে রওনা হয়। তিয়ানহে মডিউল চীনের নির্মাণাধীন স্থায়ী মহাকাশ স্টেশনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্টেশনটির তিন ক্রুর বসবাসের কোয়ার্টার এই মডিউলটিতে করেই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের জন্য কক্ষপথে মোট ১১টি মিশন পরিচালনা করবে চীন। এর প্রথমটি ‘লং মার্চ ৫বি’ রকেটে করে তিয়ানহে মডিউল কক্ষপথে পাঠানো হয়। লং মার্চ ৫বির ধ্বংসাবশেষ কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে তা নিয়ে আশঙ্কার পাশাপাশি অনেকে চীনের তীব্র সমালোচনা করছিলেন। যদিও রকেটের ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর জন্য একদমই বিপজ্জনক হয়ে উঠবে না চীন বলে আসছিল।

চীনের তৈরি ২১ টন ওজনের ‘লং মার্চ ৫বি’র ধ্বংসাবশেষ এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে ধসে পড়া সবচেয়ে বেশি ওজনের। এটি ৯৮ ফুট লম্বা এবং ১৬ ফুট চওড়া। সেটি কক্ষপথ হয়ে পৃথিবীর দিকে ঘণ্টায় প্রায় ২৭ হাজার ৬০০ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসে।


চাঁদের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারায় ভারতের রকেট

পৃথিবীর অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সঙ্গে বাজেটের দিক দিয়ে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইশরোর আকাশ-পাতাল তফাত। কিন্তু এত কম বাজেট সত্ত্বেও তাদের সাফল্য সবার জন্যই ঈর্ষণীয়। সম্প্রতি তারা তাদের চন্দ্রাভিযানের দ্বিতীয় প্রকল্প চন্দ্রযান-২ পরিচালনা করেছে। এর আগে ২০০৮ সালে চন্দ্রযান-১ প্রকল্পের মাধ্যমে চাঁদে প্রথম ছাপ রেখেছিল ভারত। কিন্তু চন্দ্রযান-২ এর অভিযানের স্বপ্ন মূল লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। চাঁদের পৃষ্ঠ স্পর্শ করার আগেই নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে নভোযানটির দুটি অংশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইশরোর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় চন্দ্রযান বিক্রমের। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ২২ জুলাই উৎক্ষেপণ করা হয় চন্দ্রযান-২। চাঁদে নামতে গিয়ে ২ দশমিক ১ কিলোমিটার আগেই ভারতের এ মহাকাশযানের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পর একে দেশটির ব্যর্থ মহাকাশ অভিযানের ব্যর্থতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। যদিও ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীদের দাবি, পুরো অভিযান ব্যর্থ নয়, অভিযানে মাত্র ৫ শতাংশ ব্যর্থ হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, চন্দ্রযান-২-এর দুটি অংশ ‘ল্যান্ডার বিক্রম’ ও ‘রোভার প্রজ্ঞানের’ সঙ্গে নিয়ন্ত্রণকক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এতে পুরো অভিযানের মাত্র ৫ শতাংশ ব্যর্থ হয়। তবে বাকি অংশ ‘অরবিটার’ এর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। অরবিটারটি চাঁদের কক্ষপথে সফলভাবে কাজ করছে। এর মাধ্যমেই অভিযানের ৯৫ শতাংশ প্রত্যাশা পূরণ হবে। এর আগে কলকাতার বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের সাবেক প্রধান ও মহাকাশবিদ ড. বি পি দুয়ারি গণমাধ্যমকে বলেন, চাঁদ প্রদক্ষিণকারী চন্দ্রযান-২ এখনো চাঁদকে ঘিরে ঘুরছে। এ যানটি উড়ে যাওয়ার একসময় জানাতে পারবে যে, বিক্রমের ভাগ্যে আসলে কী ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, ‘এখন বিক্রমের অবস্থা কী, কিংবা কী ঘটেছে, সেটা কেউই বলতে পারছেন না। কারণ তার সঙ্গে কোনোরকম বেতার যোগাযোগ আর করা যায়নি। হয়তো যানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে ভারত চন্দ্রযান-১ নামে একটি রকেট পাঠিয়েছিল যেটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে জলের কণার অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিল। তবে চন্দ্রযান-২ থেকে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা আশা করছিলেন তাদের সেই আবিষ্কারকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে। চাঁদের দক্ষিণ মেরু সূর্যের কাছ থেকে আড়াল থাকে বলে সেখানে তাপমাত্রা কম এবং সেখানে জলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় এ সম্ভাবনা প্রায় শেষ হয়ে গেল। এর আগে চন্দ্রযান-২ গত ২০ আগস্ট চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে।

 

স্পেসক্রাফট স্পুটনিক-২

পৃথিবীর কক্ষপথে প্রথম পরিভ্রমণ করেছিল রাশিয়ার একটি কুকুর। নাম লাইকা। খুবই শান্ত স্বভাবের লাইকা। আদুরে চেহারার পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তায় সবাইকে মুগ্ধ করেছিল লাইকা। তার চোখের রং ছিল কালো। ১৯৫৭ সালের নভেম্বর মাসের ৩ তারিখ লাইকাকে মহাশূন্যে পাঠানো হয়। চারবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছিল কুকুরটি। এ সময় প্রচুর তাপ উৎপন্ন হতে থাকে স্পেসক্রাফট স্পুটনিক-২ মহাকাশ যানে। ১০ ঘণ্টা পর প্রচ- তাপে লাইকা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কারণ, মহাকাশ যানে সে সময় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা যথেষ্ট নিরাপদ ছিল না। আবার বলা হয় যান্ত্রিক দুর্বলতাও একটা কারণ ছিল। সুতরাং মহাকাশে লাইকা গরমে সেদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল। শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ওঠার পর কুকুরটি তা সহ্য করতে পারেনি। অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে উৎক্ষেপণের ১০ ঘণ্টার মধ্যেই লাইকা মারা যায়। ধারণা করা হয়, তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি এর অন্যতম কারণ। কয়েক দশক পর লাইকার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পেরেছিল মানুষ। এ অভিযান থেকেই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে পৃথিবীর কক্ষপথে উৎক্ষিপ্ত মহাকাশযানে ওজনহীন থাকা সত্ত্বেও যাত্রীর পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব। লাইকা মারা যায়, তবে তার মাধ্যমে মনুষ্যবাহী নভোযান প্রকল্প শুরু হয়।

 

শিয়াপারেলি

২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর প্যারাসুট এবং থ্রাস্টারের মিশ্রণে অপেক্ষাকৃত জটিল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মঙ্গলপৃষ্ঠে একটি প্রোব অবতরণ করানোর চেষ্টা করেছিল মহাকাশ সংস্থাটি। তবে তাদের পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। ২৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে তৈরি করা নভোযানটি ৫০ কোটি কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করার পর প্যারাসুট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। ঘণ্টায় ৫৪০ কিলোমিটার গতিবেগে মঙ্গলপৃষ্ঠে পতিত হয় মহাকাশযানটি। ইউরোপিয়ান মহাকাশ গবেষণা সংস্থার লক্ষ্য হচ্ছে মঙ্গলগ্রহে আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে একটি ছয় চাকার রোভার পাঠানো। আর তার আগে অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যেই ইউরোপের এ শিয়াপারেলি মিশন শুরু করেছিল তারা। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কন্ট্রোল রুমে ছিল উল্লাসও। কারণ সাত মাস যাত্রা করে ৫০ কোটি কিলোমিটার অতিক্রম করে যানটি ঢুকে পড়েছিল মঙ্গলের কক্ষপথেও। কিন্তু বিপত্তি ঘটল চূড়ান্ত সময়ে। শিয়াপারেলি ঠিক যেভাবে অবতরণ করবে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করেছিলেন শেষ পর্যন্ত সে রকম হয়নি। টেলিমেট্রি তথ্য থেকে জানা যায়, শিয়াপারেলি যখন ওপর থেকে মঙ্গলের পৃষ্ঠের দিকে নেমে আসছিল তখন এর গতি কমিয়ে তাকে স্থিতাবস্থায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়াগুলো ঠিকমতো কাজ করেনি। ফলে তখনকার মতো ব্যর্থ হয়ে যায় ইউরোপের এ মিশনটি।

 

ফোবোস-গ্রান্ট

ফোবোস-গ্রান্ট মানুষের আরেকটি ব্যর্থ মহাকাশ অভিযানের নাম। রাশিয়া থেকে পরিচালিত হয়েছিল এ মহাকাশ অভিযান মঙ্গলের উদ্দেশে। এ মিশনটি একটু বেশি উচ্চাভিলাষী ছিল। কারণ এটি মঙ্গলের একটি চাঁদে অবতরণ করার কথা ছিল। যেখান থেকে পাথরের নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফেরত আসার কথা ছিল। ফোবোস-গ্রান্টের মঙ্গলে পৌঁছানোর কথা থাকলেও ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩৪৫ কিলোমিটার উচ্চতায় উঠতে পেরেছিল। এটি সফল হলে পৃথিবীর চাঁদ ছাড়া মহাকাশের অন্য যে কোনো অংশের পাথরের নমুনা পাওয়ার ঘটনা ঘটত প্রথমবারের মতো।

 

বিগল-২

ইউরোপের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার পক্ষ থেকে পাঠানো ‘বিগল-২’ মহাকাশযানটির মঙ্গলে পৌঁছানোর কথা ছিল ২০০৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর। শেষবারের মতো মহাকাশযানটির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় ২০০৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর। এরপর বিগল-২ যানটির সঙ্গে পৃথিবীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ২০০৩ সালে এটি মঙ্গলগ্রহ পর্যন্ত পৌঁছায় কিন্তু বিপত্তি বাধে এর পরই। বিগল-২ কখনো পৃথিবীতে কোনো বার্তা পাঠায়নি। ২০১৫ সালে নাসার মার্স রিকনাইসান্স অরবিটারের তোলা বিগল-২ এর ছবি থেকে ধারণা করা হয় এর একটি সোলার প্যানেলে ত্রুটির ফলে এর কার্যক্রম বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল।

 

স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জার

স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনাটি মহাকাশে ব্যর্থ অভিযানগুলোর মধ্যে অন্যতম ভাবা হয়ে থাকে। এ মহাকাশযানটির দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় ১৯৮৬ সালের ২৮ জানুয়ারি। সেদিন উড্ডয়নের পর মাত্র ৭৩ সেকেন্ডের মাথায় যান্ত্রিক সমস্যার কারণে স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জার ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। দুঃখের বিষয় হচ্ছে এর আরোহীর সাতজন মহাকাশচারী মারা যান। মহাকাশযানটির ধ্বংসাবশেষ পতিত হয় আটলান্টিক মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূলের কাছে। দুর্ঘটনটি ঘটে উত্তর আমেরিকার পূর্বাঞ্চলীয় আঞ্চলিক সময় বেলা ১১টা ৩৯ মিনিট, বিকাল ৪টা ৩৯ মিনিট (ইউটিসি)।

 

অ্যাপোলো-১

১৯৬৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপোলো কার্যক্রমের প্রথম ক্রু মিশন ছিল অ্যাপোলো-১। মানুষের চাঁদে অবতরণের প্রথম উদ্যোগ এটি। প্রাথমিকভাবে এএস-২০৪ মহাকাশযানকে মিশনের জন্য নির্ধারণ করা হয়। যদিও সে সময় মিশনটি ব্যর্থ হয়েছিল। অ্যাপোলো কমান্ড এবং পরিষেবা মডিউলটির প্রথম নিম্ন পার্থিব কক্ষপথের পরীক্ষা হিসেবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে তার আগেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল অ্যাপোলো-১। মিশনের আগে ২৭ জানুয়ারি কেপ কেনেডি এয়ার ফোর্স স্টেশন লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৪-এ অনুশীলন পরীক্ষার সময় হঠাৎ অগ্নিকান্ডে তিনটি ক্রু সদস্য মারা যান।

 

পর্যটন মহাকাশযান

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকালে ভার্জিন গ্যালাকটিকের স্পেসশিপ-২ উড্ডয়ন করে। ৪৫ হাজার ফুট ওপরে উঠে যায় হোয়াইটনাইট-২। উড্ডয়নের ৫০ মিনিট পর ১০টা ১০ মিনিটে স্পেসশিপ-২ উড়োজাহাজ থেকে আলাদা হয়। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। এর মাত্র ২ মিনিট পরই দেখা দেয় বিপত্তি। স্পেসশিপ-২ থেকে ধোঁয়া বেরোতে থাকে। পরীক্ষামূলক অবস্থাতেই মহাকাশযানটি আকাশে বিধ্বস্ত হয়। মহাকাশযানটিতে থাকা দুই বৈমানিকের একজন নিহত ও অন্যজন গুরুতর আহত হন। এটি ছিল একটি মহাকাশ পর্যটন যান। যা ছিল বিশ্বের প্রথম বেসরকারিভাবে মহাকাশ পর্যটনের উদ্যোগ।


চাঁদে যত ব্যর্থ অভিযান

> Pioneer 0

চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছতে ব্যর্থ মিশন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)। উৎক্ষেপণ : ১৭ আগস্ট, ১৯৫৮

চাঁদে অভিযান হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পদক্ষেপ ছিল এটি। কিন্তু উৎক্ষেপণের মাত্র ৭৭ সেকেন্ড পরেই রকেটটি    বিস্ফোরিত হয়।

 

> Luna 1958A

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)। উৎক্ষেপণ : ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৮

উৎক্ষেপণের পর পরই মহাকাশযান বহনকারী রকেটটি বিস্ফোরিত হয়।

 

> Pioneer 1

চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছতে ব্যর্থ মিশন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)। উৎক্ষেপণ : ১১ অক্টোবর, ১৯৫৮

উৎক্ষেপণের পরই রকেটটি তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে পৃথক হতে ব্যর্থ হয়, ফলে মহাকাশযানটি চান্দ্র মিশন পরিচালনায় সক্ষম হয়নি।

 

> Luna 1958B

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)। উৎক্ষেপণ : ১২ অক্টোবর, ১৯৫৮

উৎক্ষেপণের পর পরই মহাকাশযান বহনকারী রকেটটি বিস্ফোরিত হয়।

 

> Pioneer 2

চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছতে ব্যর্থ মিশন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)। উৎক্ষেপণ : ৮ নভেম্বর, ১৯৫৮

উৎক্ষেপণের দ্বিতীয় ধাপে রকেটটি প্রজ্বালনে ব্যর্থ হওয়ায় মহাকাশযানটি চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছতে পারেনি এবং পৃথিবীতে ফিরে আসে।

 

> Luna 1958C

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)। উৎক্ষেপণ : ৪ ডিসেম্বর, ১৯৫৮

উৎক্ষেপণের পর প্রথম ধাপেই রকেটটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।

 

> Pioneer 3

চঁাঁদের তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থ মহাকাশ মিশন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)। উৎক্ষেপণ : ৬ ডিসেম্বর, ১৯৫৮। উৎক্ষেপণের পর প্রথম ধাপেই রকেটটি বন্ধ হয়ে যায়, ফলে মহাকাশযানটি বিধ্বস্ত হয়।

 

> Ranger 2

পৃথিবীর কক্ষপথ পরীক্ষাকারী যান, ব্যর্থ মিশন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)। উৎক্ষেপণ : ১৮ নভেম্বর, ১৯৬১। উৎক্ষেপণের দুই দিন পরই মহাকাশযানটি পৃথিবীর বায়ুম-লে পুড়ে যায়।

 

> Ranger 3

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

উৎক্ষেপণ : ২৬ জানুয়ারি, ১৯৬২

চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের আগে চাঁদের খুব কাছ থেকে ছবি তোলার জন্য এর নকশা করা হয়েছিল। কিন্তু এটি ব্যর্থ হয়।

 

> Ranger 5

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

উৎক্ষেপণ : ১৮ অক্টোবর, ১৯৬২

উৎক্ষেপণের কিছু পরই এর একটি সোলার সেল নষ্ট হয়ে যায়।

 

> Sputnik 25

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)। উৎক্ষেপণ : ৪ জানুয়ারি, ১৯৬৩

সফল উৎক্ষেপণের পরও এটি পৃথিবীর কক্ষপথ অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয় এবং এক দিন পর পৃথিবীর বায়ুম-লে প্রবেশের সময় পুড়ে যায়।

 

> Luna 4

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)। উৎক্ষেপণ : ২ এপ্রিল, ১৯৬৩,

সোভিয়েত রাশিয়ার দ্বিতীয় প্রজন্মের চান্দ্র অভিযানের প্রথম মিশন ছিল এটি। ধারণা করা হয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সিস্টেমের সমস্যার কারণে চাঁদ থেকে ৮৪০০ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

 

> Luna 5

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)। উৎক্ষেপণ : ৯ মে, ১৯৬৫

চাঁদে অবতরণ : ১২ মে, ১৯৬৫

এ মিশনের মাধ্যমে চাঁদের পৃষ্ঠে হালকাভাবে অবতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটি চাঁদের Sea of Clouds এলাকায় বিধ্বস্ত হয়।

 

> Luna 6

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)। উৎক্ষেপণ : ৮ জুন, ১৯৬৫

এটি চাঁদের কক্ষপথ ছেড়ে বাইরে চলে যায়।

 

> Luna 7

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)। উৎক্ষেপণ : ৪ অক্টোবর, ১৯৬৫

চাঁদে অবতরণ : ৭ অক্টোবর, ১৯৬৫। চাঁদের Ocean of Storms এলাকায় এটি  বিধ্বস্ত হয়।

 

> Luna 8

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)। উৎক্ষেপণ : ৩ ডিসেম্বর, ১৯৬৫

চাঁদে অবতরণ : ৬ ডিসেম্বর, ১৯৬৫

চাঁদের Ocean of Storms এলাকায় এটি বিধ্বস্ত হয়।

 

> Surveyor 2

চাঁদে অবতরণ ব্যর্থ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

উৎক্ষেপণ : ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৬

চাঁদে আঘাত হানে : ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৬

চাঁদে নামার আগ মুহূর্তে এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠে বিধ্বস্ত হয়।

 

> Luna 1969A

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)। উৎক্ষেপণ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ উৎক্ষেপণের কিছু সময় পরই রকেটটি বিস্ফোরিত হয়।

 

> Zond 1S-1

চাঁদের কক্ষপথে পরিচালিত ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)। উৎক্ষেপণ : ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯, উৎক্ষেপণের কিছু সময় পরই রকেটটি বিস্ফোরিত হয়।

 

> Luna 1969B

চাঁদের নমুনা সংগ্রহে পরিচালিত ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)। উৎক্ষেপণ : ১৫ এপ্রিল, ১৯৬৯। রকেটটি উৎক্ষেপণ প্যাডে থাকা অবস্থাতেই বিস্ফোরিত হয়।

 

> Luna 18

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)। উৎক্ষেপণ : ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছে : ৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

চাঁদের কক্ষপথে ৫৪ বার প্রদক্ষিণ শেষে এটি চন্দ্রপৃষ্ঠে বিধ্বস্ত হয়।

 

> Luna 23

চাঁদের নমুনা সংগ্রহে পরিচালিত ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)। উৎক্ষেপণ : ২৮ অক্টোবর, ১৯৭৪। ৬ নভেম্বর, ১৯৭৪-এ চাঁদে অবতরণের সময় এটি বিকল হয়ে যায়, তাই কোনো প্রকার নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর