বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সামরিক বাহিনী ছাড়া যত দেশ

আবদুল কাদের

সামরিক বাহিনী ছাড়া যত দেশ

সামরিক বাহিনী প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব শক্তি। দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে নিজস্ব সামরিক বাহিনীর হাতে। বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষাসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিশ্বের প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব পরাশক্তি রয়েছে। তবে বর্তমান আধুনিক যুগেও বিশ্বে এমন কিছু দেশ রয়েছে যাদের নিজস্ব কোনো সেনাবাহিনী নেই।  অন্য কোনো দেশ বা বাহিনী দ্বারা তারা নিজের দেশের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে।  বিশ্বে এখনো ২০টিরও বেশি দেশ রয়েছে যাদের নেই নিজস্ব সেনাবাহিনী। এসব দেশ নিয়েই আজকের আয়োজন...

 

 

যেসব দেশে সশস্ত্র বাহিনী নেই

বিশ্বের যে কোনো দেশের শক্তি তার সামরিক শক্তি দ্বারাই অনুমান করা হয়। সামরিক শক্তি দেশের জনগণের সুরক্ষা প্রদান করে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রতিটি দেশই গুরুত্বের সঙ্গে দেখে থাকে। আধুনিক সময়ে সেনাবাহিনীর গুরুত্ব বাড়ছে। প্রতিটি দেশই তাদের সেনাবাহিনীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। বিশ্বের প্রায় ২২টি দেশে অফিসিয়াল সেনাবাহিনী নেই। এই ব্যতিক্রম অনেকের কাছেই কৌতূহল জাগায়।

 

প্রশ্ন জাগতে পারে- তাহলে বহির্দেশের আক্রমণে এ দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কী? উত্তরটি খুব সাধারণ। বেশির ভাগই অন্য দেশের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তি ও আন্তঃসম্পর্কের মাধ্যমে প্রতিরক্ষার দায় ছেড়ে দিয়েছে। আসলে তালিকাভুক্ত দেশগুলোর বেশির ভাগই অতীতের দখলকারী দেশের সঙ্গে দীর্ঘকালীন চুক্তিতে আবদ্ধ। আর সেসব শক্তিশালী দেশগুলোই তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। তবে এসব দেশের আর্মড ফোর্স বা অফিসিয়াল সেনাবাহিনী না থাকলেও কিছু দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের সীমিত মিলিটারি ফোর্স রয়েছে। সরকারি সেনাবাহিনী নেই- এ অর্থে দেশগুলোতে ‘আর্মড ফোর্স’ নেই বলে অভিহিত করা হয়।

 

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আইসল্যান্ড ও মোনাকোর কথা। এ দুটি দেশের অফিসিয়াল সেনাবাহিনী না থাকলেও ‘নন-পুলিশ মিলিটারি ফোর্স’ রয়েছে। কিছু দেশ আবার দীর্ঘস্থায়ী চুক্তিতে রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী তারা দেশে সেনাবাহিনী গড়ে তোলেনি। ফ্রান্সের সঙ্গে মোনাকোর চুক্তির ভিত্তিতেই কোনো সেনাবাহিনী তৈরি করেনি প্রায় ৩০০ বছর হতে চলল। কিছু দেশের আবার সেনাবাহিনী ও দেশের প্রতিরক্ষা নিয়ে বাড়তি মাথাব্যথা নেই। তারা অন্য দেশের সঙ্গে কোনো রকম সাতেপাঁচে নেই। মার্শাল আইল্যান্ড, মাইক্রোনেশিয়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে আগ্রহী নয়। ফেডারেল স্টেটস অব মাইক্রোনেশিয়া ইউনাইটেড স্টেটসের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যায়। আমেরিকার সহযোগিতা তারা ভালোমতোই পায়। আরও বলা যেতে পারে, অ্যান্ডোরার কথা। তাদের রয়েছে নামমাত্র সেনাবাহিনী। শুধু বিপদ-সংকট পরিবেশে সহায়তার জন্যই তাদের সেনাবাহিনীর দেখা মেলে, যুদ্ধে নয়। সামোয়া দেশটির প্রতিরক্ষার জন্য অন্য দেশের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। আইসল্যান্ড আবার ইউনাইটেড স্টেটসের সঙ্গে চুক্তিতে রয়েছে, যেন প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাহায্য করে। নিজস্ব সেনাবাহিনী গড়ে তোলেনি তারা। অন্য দেশগুলোর সেনাবাহিনী নেই; সীমিত পরিসরে মিলিটারি ফোর্স রয়েছে দেশের ভিতরে নানা বিপদে সহায়তা করার জন্য। কোস্টারিকা, হাইতি, গ্রানাডা দেশগুলো পুরোপুরি সেনা বিলুপ্তির পথে হাঁটছে। তারা কখনই কোনো ধরনের সশস্ত্র বাহিনী রাখবে না।

 

 

কেন নেই?

‘সামরিক বাহিনী’ শব্দটি তাদের নিজ নিজ সরকারের অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি নীতিকে আরও এগিয়ে নিতে যে কোনো সরকার-পৃষ্ঠপোষক প্রতিরক্ষা বোঝায়। মূলত দেশের প্রতিরক্ষার প্রয়োজনেই সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হয়। অফিসিয়াল সেনাবাহিনী নেই- এমন দেশের কথা উঠলে অনেকেই ভাবেন, এ দেশগুলো কেন সেনাবাহিনী গড়ে তোলেনি। যে ২২টি দেশের কথা বলা হচ্ছে, তাদের আয়তন, ভৌগোলিক ও জনসংখ্যা বিশ্লেষণে শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলার খুব একটা প্রয়োজন নেই। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের কারণে তারা নানাভাবে তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া কিছু দেশ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়েও খুব একটা কথা চালাচালি করতে পছন্দ করে না। শান্তিপ্রিয় এই দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবেও এতটা শক্তিশালী নয় যে, বৃহৎ পরিসরে সেনাবাহিনী গড়ে তুলবে। এ ছাড়া  প্রতিবেশী দেশগুলো সামরিক শক্তিতে যেমন বিশ্বসেরাদের কাতারে রয়েছে, তেমনি অবস্থানগত কারণেও যুদ্ধ-বিবাদে ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলেই সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার পথে হাঁটেনি অনেক দেশ।  তবুও এসব দেশ বহিঃশত্রুর হাত থেকে আছে সুরক্ষিত।

 

এক নজরে সেই দেশগুলো...

* অ্যান্ডোরা

* কোস্টারিকা

* ডোমিনিকা

* গ্রানাডা

* কিরিবাতি

* লিচেনস্টেইন

* মার্শাল আইল্যান্ড

* ফেডারেটেড স্টেটস অব      মাইক্রোনেশিয়া

* নাউরু

* পালাউ

* সেন্ট লুসিয়া

* সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডিনস

* সামোয়া

* সলোমন আইল্যান্ড

* টুভ্যালু

* ভ্যাটিক্যান সিটি

 

বাহিনী নেই, তবে আছে সীমিত ফোর্স

* হাইতি

* আইসল্যান্ড

* মরিশাস

* মোনাকো

* পানামা

* ভানুয়াতু

 

 

সেনা ছাড়া দেশের হালচাল...

ভ্যাটিকান সিটি

ইতালির রাজধানী রোমের ভিতরে হলেও ভ্যাটিকান স্বাধীন ভূখন্ড। ভ্যাটিকান বিশ্বের অন্যতম ক্ষুদ্র দেশ, আয়তনে শূন্য দশমিক চার বর্গকিলোমিটার। ২০১৯ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুসারে, ভ্যাটিকানের জনসংখ্যা মাত্র ৮২৫ জন। কাজেই জনসংখ্যার বিবেচনায়ও ভ্যাটিকান বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশ। ১৯২৯ সালে ইতালি সরকারের সঙ্গে ভ্যাটিকান সিটির বিরোধ হলে তারা ভ্যাটিকানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম দেশটির নেই কোনো নিজস্ব সেনাবাহিনী। তবে অতীতে দেশটির ছোট ছোট নিরাপত্তারক্ষী ছিল। ১৯৭০ সালে পোপ পল ৬-এর নেতৃত্বে শহরের নিরাপত্তা দিত ন্যাশনাল নোবেল গার্ড ও পেলেটাইন গার্ড।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

ভ্যাটিকান হচ্ছে ইতালির রাজধানী রোমের একাংশ। ইতালি সরকারের তত্ত্বাবধানে ভ্যাটিকানের নিরাপত্তায় রয়েছে পন্টিফিকাল সুইস গার্ড এবং সুইস গার্ড। যারা ভ্যাটিকানের পোপ এবং জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। ইতালির সঙ্গে দেশটির কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি নেই, তবুও ইতালির সশস্ত্র বাহিনীই দেশটির ভরসা।

কোস্টারিকা

মধ্য আমেরিকার দেশ কোস্টারিকায় ১৯৪৮ সালে গৃহযুদ্ধ বাধে। ৫১ হাজার বর্গ কিলোমিটার দেশটি গৃহযুদ্ধে ২ হাজার লোকের প্রাণহানি দেখে। এই সময় চরম আর্থিক সংকটে দেশটির সরকার আর সেনাবাহিনীর ব্যয়ভার বহন করতে পারেনি। গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। ওই বছর নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয় এবং বিদ্রোহীরা নির্বাচন না মেনে ক্ষমতা দখল করে নেয়। বিদ্রোহীরা সে সময় সেনাবাহিনী বিলুপ্ত ঘোষণা করে। তখন থেকে কোস্টারিকায় এমন পরিস্থিতি চলে আসছে। নিজস্ব সশস্ত্রবাহিনী না থাকলেও জাতিসংঘের শান্তি বিশ্ববিদ্যালয় এই কোস্টারিকাতেই অবস্থিত। ৫০ লাখের বেশি জনসংখ্যার দেশটির স্থল নিরাপত্তা, সীমান্ত চৌকি এমনকি বিভিন্ন দুর্যোগপূর্ণ সময়ে নিজস্ব পুলিশ বাহিনীই একমাত্র ভরসা।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

১৯৪৭ সালে মধ্য আমেরিকার দেশটি আন্তঃআমেরিকান একটি চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তিতে দেশটির ওপর বহিঃ আক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিলে আমেরিকা মহাদেশের ২১টি দেশ কোস্টারিকার নিরাপত্তা দেবে। যাদের মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র, চিলি ও কিউবার মতো পরাশক্তি।

অ্যান্ডোরা

ইউরোপের ছোট্ট দেশ অ্যান্ডোরা। স্বাধীন ভূখন্ড হিসেবে দেশটির আত্মপ্রকাশ ঘটে ১২৭৮ সালে। এটি স্পেন ও ফ্রান্সের সীমান্তবর্তী একটি দেশ। অ্যান্ডোরার মোট আয়তন মাত্র ৪৭৮ বর্গকিলোমিটার, যা কিনা জাকার্তার মতো কোনো বড় শহরের চেয়েও অনেক কম। এই দেশে নেই কোনো নিজস্ব সেনাবাহিনী। তবে তাদের আছে নিজস্ব প্রতিরক্ষা দল। ১৯৩১ সালে অ্যান্ডোরা সরকার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অ্যান্ডোরান পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলে। দেশের শান্তিরক্ষায় ও জিম্মি উদ্ধারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল পুলিশ বাহিনীকে। যার কাছেই একটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল তাকেই বাধ্যতামূলক পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিতে হতো। দেশ ও দশের স্বার্থে অ্যান্ডোরা সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে স্পেন আর ফ্রান্স আশ্বাস দিয়েছে, অ্যান্ডোরার নিরাপত্তা বিঘিœত হলে তারা এগিয়ে আসবে। বন্ধুরাষ্ট্রের আশ্বাসের কারণে দেশটি গড়েনি সেনাবাহিনী।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

ইউরোপের দেশ অ্যান্ডোরার আছে তিন অভিভাবক। যারা দেশটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্রান্স, স্পেন এবং যুক্তরাষ্ট্র। অবস্থানগত দিক থেকে অ্যান্ডোরা দ্বীপরাজ্য হওয়ায় ১৯৩৩ সালে দেশটির সরকার এই চুক্তি বাস্তবায়ন করে।

সামোয়া

প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত দ্বীপরাজ্যটি ১৯৬২ সালে নিউজিল্যান্ডের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। দ্বীপরাজ্যটি জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায় ১৯৭৬ সালে। দেশটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গড়ে তোলেনি নিজস্ব কোনো সশস্ত্র বাহিনী। আজব হলেও সত্য, সামোয়াতে কোনো পুলিশ ফোর্সও নেই। তবে দেশটির অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার জন্য ছোট পুলিশ বাহিনী এবং একটি মেরিটাইম নজরদারি ইউনিট রয়েছে। যারা ছোট অস্ত্রে সজ্জিত। এই মেরিটাইম ইউনিট দেশটির নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রশান্ত মহাসাগরে টহল নৌকায় নজরদারি করে থাকে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

সামোয়ার সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ১৯৬২ সালের চুক্তি অনুসারে নিউজিল্যান্ড সামোয়ার প্রতিরক্ষার জন্য দায়বদ্ধ। নিউজিল্যান্ড সে সময় বলেছিল, যে কোনো বিপদে পাশে দাঁড়াবে। সেই ভরসাতেই দেশটি আর নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেনি। এমনকি নিউজিল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বাহিনী সামোয়ার বিপদে-আপদে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

গ্রানাডা

আটলান্টিক মহাসাগরের ক্যারিবিয়ান অঞ্চলটির একমাত্র দ্বীপরাজ্য গ্রানাডা। যার আয়তন ৩৪৪ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৩২ হাজার। দ্বীপরাষ্ট্রটি কমনওয়েলথের সদস্য। কিন্তু দেশটির নেই কোনো নিজস্ব সামরিক বাহিনী। তবে এক সময় দেশটিতে সামরিক বাহিনী ছিল। হঠাৎ দেশটির সামরিক অভ্যুত্থান সব দৃশ্যপট পাল্টে দেয়। দেশটিতে অরাজকতা চলতে থাকে। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে দেশটির ওপর সামরিক আগ্রাসন চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে দেশটির সেনাবাহিনীকে চিরদিনের জন্য অপসারণ করা হয়। এই দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেবল পুলিশের ওপরে রয়েছে। মূলত রয়্যাল গ্রানাডা পুলিশ বাহিনী অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার জন্য একটি আধা সামরিক বিশেষ পরিষেবা ইউনিট বজায় রাখে। গ্রানাডার সংবিধানে একমাত্র পুলিশকেই বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

গ্রানাডার নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী না থাকলেও, রয়্যাল গ্রানাডা পুলিশ বাহিনী অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা দেয়। এ ছাড়া বহিঃদেশের আক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য অন্য দেশের সঙ্গে চুক্তি করে রেখেছে। দেশটির আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ কঠিন। যে কোনো যুদ্ধ বা সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য পাশের রাষ্ট্র এন্টিগুয়া ও বারমুডা, বারবাডোজ, ডোমিনিকা, সেন্ট কিটস ও নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট আটলান্টিক মহাসাগরীয় দেশটির সুরক্ষা দিয়ে থাকে।

সলোমন দ্বীপপুঞ্জ

প্রশান্ত মহাসাগরীয় আরেকটি দ্বীপরাষ্ট্র সলোমন আইল্যান্ড। পাপুয়া নিউগিনির পাশেই দেশটির অবস্থান। হাজারও ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত দ্বীপরাজ্যটি। ১১ হাজার বর্গ মাইলের সলোমন ১৮৯৩ সালে সার্বভৌমত্ব লাভ করে। ১৯৯৮ থেকে ২০০৬ সাল, সলোমন রাজ্যে সব সময় জাতিগত সংঘাত ও নৈরাজ্য লেগেই থাকত। কারণ দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো ছিল না। এরপর দেশটি জাতিগত সংঘাত এড়াতে আধা-সামরিক বাহিনী প্রতিষ্ঠা করে। সে সময় দেশটির আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড হস্তক্ষেপ করেছিল। এরপর থেকে কোনো সামরিক বাহিনী গড়ে ওঠেনি। তবে অভ্যন্তরীণ সুরক্ষায় তাদের একটি বড় পুলিশ বাহিনী এবং একটি মেরিটাইম নজরদারি ইউনিট রয়েছে। মেরিটাইম সার্ভিল্যান্স ইউনিট অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। এই মেরিটাইম ইউনিট বাহিনী প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টহল দেয়।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

সলোমন দ্বীপপুঞ্জে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পুলিশ বাহিনী থাকলেও সামরিক বাহিনী নেই। দেশটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। দেশটির ওপর অন্য রাষ্ট্র যুদ্ধ ঘোষণা করলে অস্ট্রেলিয়ার সামরিক বাহিনী দেশটির নিরাপত্তা দিয়ে থাকে।

 

মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ

১৯৪৬ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত আমেরিকা ৬৭ বার পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল এই দ্বীপে। ১৯৭৯ সালে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের সরকার গঠিত হয়। তবে কম্প্যাক্ট ফ্রি অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৮৩ সালে। দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও সংবিধানে তাদের সামরিক বাহিনী বা সেনাবাহিনী নেই। তাদের নিরাপত্তার জন্য বাইরের দেশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে দেশটির সরকার ত্রিদেশীয় নিরাপত্তা চুক্তি করেছিল। যার মধ্যে মাইক্রোনেশিয়া ও পালাউ ফেডারেটেড স্টেটসও রয়েছে। নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী না থাকলেও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের বৈধ বাহিনী হলো পুলিশ, যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার জন্য একটি মেরিটাইম ইউনিটও রয়েছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের অভ্যন্তরীণ কোনো নিয়মিত সামরিক বাহিনী বা যুদ্ধকালীন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই। তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে পাশে পায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তিকে। কম্প্যাক্ট অব ফ্রি অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জকে সার্বিক নিরাপত্তা ও বাইরের শত্রুর হাত থেকে রক্ষার সব দায়দায়িত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।

 

নাউরু

প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে ভেসে থাকা ছোট দেশ নাউরু। মাত্র ২১ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা এই দেশটি ভ্যাটিকান সিটি এবং মোনাকোর পর বিশ্বের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র। এর জনসংখ্যাও বেশ সীমিত। মাত্র ১১ হাজার আদিবাসী নিয়ে চলছে এই দেশটি। এটি মাইক্রোনেশিয়ার একটি অংশ। দেশটির নেই কোনো সামরিক বাহিনী। তবে অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার জন্য তুলনামূলকভাবে একটি বড় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী এবং একটি সহায়ক পুলিশ বাহিনী রয়েছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

মূলত ভৌগোলিক কারণে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নেই। তবে অস্ট্রেলিয়া দুই দেশের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক চুক্তির আওতায় নাউরুর প্রতিরক্ষার জন্য দায়বদ্ধ।

লিচেনস্টাইন

মধ্য ইউরোপের দেশ লিচেনস্টাইনে সেনাবাহিনী নেই ১৮৬৮ সাল থেকে। দেশটি ১৮৬৮ সালে তাদের নিজস্ব সেনাবাহিনী বিলুপ্ত ঘোষণা করে। মূলত আর্থিক কারণেই তারা এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সংবিধান মোতাবেক দেশটিকে আর কখনই সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠবে না। সেনাবাহিনী খুব বেশি কষ্টসাধ্য আর খরচও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ইতিহাস বলে, লিচেনস্টাইনে এক সময় ছোট পরিসরে সেনাবাহিনী ছিল। কিন্তু ১৯৬৮ সালে লিচেনস্টাইন অস্ট্রো-পরুশিয়ান যুদ্ধের পর তাদের নিজস্ব সেনাবাহিনীর সমাপ্তি ঘটে। তবে তাদের সংবিধানেই বলা আছে, দেশে যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনী গঠন করা হবে, তবে কোনো দিন তার প্রয়োজন পড়েনি। দেশটির নিরাপত্তায় জন্য ন্যাশনাল পুলিশ প্রিন্সিপালিটি নামের একটি স্পেশাল পুলিশ বাহিনী রয়েছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

 দেশ রক্ষায় কখনো প্রয়োজন হলে লিচেনস্টাইন সুইজারল্যান্ডকে চিঠি পাঠায়। সুইজারল্যান্ড পরোক্ষভাবে লিচেনস্টাইনের নিরাপত্তা দেয়, যদিও তারা বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। সুইজারল্যান্ড লিচেনস্টাইনের প্রতিরক্ষার মূল হাতিয়ার যা বেশ কয়েকবার প্রমাণিতও হয়েছে।

 

মোনাকো

মোনাকো একটি স্বাধীন দেশ। রিপাবলিক অব জেনোয়া থেকে ১২৯৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৯৩ সালে দেশটি জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এটি পশ্চিম ইউরোপের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি দেশ। সাংবিধানিক নাম প্রিন্সিপালিটি অব মোনাকো। মাত্র ৩৮ হাজার জনসংখ্যার দেশটিতে নেই কোনো সামরিক বাহিনী। দেশটির সরকার ১৭ শতাব্দীতে নিজেদের সামরিক বাহিনী বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিল। তবে দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় তাদের নিজস্ব পুলিশ বাহিনী এবং একটি স্পেশাল মেরিটাইম ইউনিট রয়েছে; যারা সার্বক্ষণিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত থাকে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

সাংবিধানিকভাবে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী না থাকলেও দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় নিজেদের দুটি বাহিনী রয়েছে। তবে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে দেশটি ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর