বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ক্রীড়াবিশ্বে চমকে দেওয়া বাংলাদেশিরা

সাইফ ইমন

ক্রীড়াবিশ্বে চমকে দেওয়া বাংলাদেশিরা

বিশ্বের ক্রীড়া জগতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার বাংলাদেশের নাম বিশ্ব দরবারে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তবে শুধু সাকিবই নন, বিশ্বজুড়ে আরও অনেক বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। বিশ্ব ক্রীড়া জগতে নিজেদের যোগ্যতায় যারা সপ্রতিভ। এদের মধ্যে অন্যতম ফুটবলার হামজা চৌধুরী, জিমন্যাস্টিক মার্গারিতা মামুন, ফুটবলার আমির হামজা, রেফারি রিপন বিশ্বাস, বক্সার রুকসানাসহ আরও অনেকেই আছেন; যারা চমকে দিয়েছেন ক্রীড়াবিশ্ব। এমন কয়েকজনকে নিয়ে আজকের রকমারি...

 

অলিম্পিক জয়ী বাংলার বাঘিনী রাজশাহীর রিতা

মার্গারিতা মামুন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশ তরুণী। রাশিয়ার জনপ্রিয় ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব তিনি। এই জিমন্যাস্টিক কন্যাকে খেতাব দেওয়া হয়েছে ‘বাংলার বাঘিনী’ হিসেবে। আর এই খেতাব তাকে দিয়েছেন রুশ কোচ ইরিনা ভিনের। রাশিয়ার সংবাদ মাধ্যমগুলোও এ নামেই তাকে অভিহিত করেছে। তার খ্যাতি আর সাফল্যের মুকুট জানান দিয়ে যায় সত্যিকার অর্থেই তিনি ‘বাংলার বাঘিনী’। শরীরে শৈল্পিক ছন্দ আর দুরন্ত গতিতে নৃত্যের ছলে ছুটে চলা। এ যেন মঞ্চজুড়ে প্রজাপতির মতো চঞ্চল ওড়াউড়ি। তার  শৈল্পিক খেলাগুলো কয়েক মুহূর্তের জন্য দম বন্ধ করে আনে বিস্ময়ে। এ বিস্ময় অবিশ্বাস্য মুগ্ধতার। রিদমিক জিমন্যাস্টদের কাজটাই তো এটা। সেটাই করে দেখান মার্গারিতা মামুন। রাশিয়াজুড়ে তার খ্যাতি পা রেখেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। তবে তাকে নিয়ে আলাদা করে গর্ব করতে হয়। কারণ এই মেধাবী রিদমিক জিমন্যাস্টের শেকড় বাংলাদেশে। মার্গারিতা অলিম্পিকেও খেলছেন। ২০১৩ সালে প্রথম আলোচনায় আসেন তিনি। তাকে সবাই রাশিয়ার সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে মেধাবী রিদমিক জিমন্যাস্ট বলেই চেনে। তবে রাশিয়ায় তাকে আজকাল মার্গারিতা মামুন নামে নয়, চেনে বাংলার বাঘিনী নামে। রাশিয়ার বিখ্যাত ক্রীড়া ম্যাগাজিন ইউরো স্পোর্টসের প্রচ্ছদে উঠে আসেন তিনি। বিশ্ব মিডিয়ায় খেতাব পান বাংলার বাঘিনী নামে। মার্গারিতা দেখিয়ে দিয়েছেন, তার শরীর শুধু শরীর নয়; যেন জাদুমন্ত্রের অবিশ্বাস্য এক শরীর। শরীরকে দুমড়ে-মুচড়ে এটুকু করে ফেলছেন, আবার পরক্ষণেই সব ঠিক। কখনো আবার কাপড়ের ফিতা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হাওয়ায় ফুটিয়ে তোলেন দৃষ্টিনন্দন সব চিত্রকর্ম। ২০১১ সাল থেকেই সাফল্য ধরা দিতে শুরু করে মার্গারিতার হাতে। সে বছর মন্ট্রিল ওয়ার্ল্ড কাপে অংশ নিয়ে ১০৬.৯২৫ পয়েন্ট পেয়ে অল অ্যারাউন্ডে ব্রোঞ্জ পদক পান রিতা। আর বল ফাইনালে ২৭.০২৫ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে জিতে নেন স্বর্ণপদক। ওই বছর রাশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় দলে ডাক পড়ে তার।

 

হামজা চৌধুরী

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত

২০১৫-১৬ মৌসুমে রূপকথার জন্ম দিয়েছিল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লিস্টার সিটি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতে নিয়েছিল এ ক্লাবটি। ইংলিশ ফুটবলের সেই দলের হয়ে অভিষেক হয়েছে অনেক বিখ্যাত ফুটবল তারকার। সে সময় ক্লাবটির হয়ে অভিষেক হয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক তরুণের। তার নাম হামজা দেওয়ান চৌধুরী। ১৯ বছর বয়সী এ মিডফিল্ডারের বাবা বাংলাদেশি আর মা ক্যারিবিয়ান। তার বাবার আদি নিবাস বাংলাদেশের সিলেটে। হামজা দেওয়ান চৌধুরীই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রথম কোনো খেলোয়াড় যিনি ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলে এমন ক্লাবের জার্সি গায়ে মাঠে নামেন। অভিষেকেই বাজিমাত ইংলিশ লিগ কাপের ম্যাচে জায়ান্ট ক্লাব লিভারপুলের বিপক্ষে অভিষেক হয় হামজার। প্রথম মাঠে নামার আনন্দটা এ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ রাঙিয়ে নিয়েছেন জয় দিয়ে। লিস্টার সিটির জার্সিতে প্রথমবার ইংলিশ ফুটবলে মাঠ মাতালেও হামজার অভিষেক হয়েছে কিন্তু আরও আগেই। আরেক ইংলিশ ক্লাব বার্টন অ্যালবিয়নের জার্সিতে ঘটেছিল এ অভিষেক। লিস্টার সিটি ক্লাব থেকেই ২০১৬ সালে তিনি ধারে গিয়েছিলেন বার্টন অ্যালবিয়নে। ইংলিশ লিগ ওয়ানে বার্টন অ্যালবিয়নের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন এ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মিডফিল্ডার। দুই বছর বার্টন অ্যালবিয়নের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন। এবারই ফিরেছেন তিনি লিস্টার সিটিতে। ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরীর জন্ম লিস্টারশায়ার সিটিতেই। পড়াশোনা ও বেড়ে ওঠা সেখানেই। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা খুব ছোটবেলা থেকেই ছিল তার। শিশুকাল থেকেই ফুটবলের সঙ্গে গড়ে ওঠে তার সখ্য। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ১২ বছর বয়সে হামজা যোগ দেন লিস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবের যুব দলে। ফুটবলের প্রফেশনাল আঙিনায় পা রাখা তখন থেকেই। এর সাত বছরের মাথায় লিস্টার সিটির মূল দলের হয়ে অভিষেক হওয়ার পর সেখানেই খেলছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই মিডফিল্ডার।

 

যুক্তরাষ্ট্রের এফসি ডালাস অনূর্ধ্ব-১৫ দলে

আমাদের জিদান

বিভিন্ন অঙ্গনে বাংলাদেশি খুদে তারকাদের ভিড় বাড়ছে। দেশের বাইরে বিভিন্ন খেলাধুলায়ও ভালো করছেন তারা। তাদের মধ্যে আমাদের জিদান মিয়া অন্যতম। এশিয়ান ফুটবল অ্যাওয়ার্ডস আসরে বিশেষ স্বীকৃতি হিসেবে জিদানের হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘স্পেশাল রিকগনিশন অ্যাওয়ার্ডস’। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এফসি ডালাস অনূর্ধ্ব-১৫ দলে নিয়মিত খেলেছেন। জিদান ২০০১ সালের ৭ মার্চ লন্ডনের এক বাংলাদেশি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সাত বছর বয়সে খেলা শুরু করে ক্যারিয়ারের বিভিন্ন ধাপে উল্লেখযোগ্য পারফর্ম করেন। আমেরিকায় তিনি প্রফেশনাল ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নকে ছুঁতে ছুটে চলেছেন। বাবা সুফিয়ান মিয়া নবজাতক ছেলেকে হাসপাতালে দেখতে যান সঙ্গে একটি ফুটবল নিয়ে। হয়তো বাবা সেদিন এতটা নিশ্চিত হতে পারেননি ছেলে বড় হয়ে প্রথম উপহার দিয়ে নিজেকে অলঙ্কৃত করবেন। জিদান ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন ২০০৮ সাল থেকে। প্রিয় তারকা ডেভিড বেকহ্যামের একাডেমিতে খেলা শুরু করেন তার ভাগনে ফ্রেডির সঙ্গে।

 

 

রিপন বিশ্বাস

ইতালির রিজিওনাল ফুটবলের রেফারি

শুরুতে স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হবেন। সে লক্ষ্যেই কঠোর সাধনা শুরু। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার ছেলে রিপন বিশ্বাস নিজেকে শামিল করেন ইতালির রিজিওনাল ফুটবলের  রেফারি হিসেবে। ক্রিকেট শিক্ষার্থী হিসেবে প্রথমে ভর্তি হন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি)। ২০০৬ সালে জার্মান দূতাবাসের আমন্ত্রণে লিপিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বের ২০টি দেশের অ্যাথলেটদের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল  ট্রেনিংয়ে অংশ নেন। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রেনিং সম্পন্ন করে রিপন ক্রিকেট নিয়ে কাজ করতে যান ইতালিতে। ইতালিয়ান ভাষায় পারদর্শী থাকায় ২০০৯ সালে রেফারি  কোচিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাঁশি হাতে মাঠে নামার সুযোগ পান। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত ইতালির রিজিওনাল ফুটবলের খেলা পরিচালনা করেছেন। সপ্তাহে দুটি ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ পান। তবে রিপন রিজিওনাল ফুটবলের  রেফারি হিসেবেই সন্তুষ্ট থাকতে চান না। রিজিওনাল থেকে এক দিন ইতালির ন্যাশনাল লেভেলেও বাঁশি হাতে মাঠে নামার স্বপ্ন দেখেন। আর মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তিনি বিশ্বাস করেন মানুষ তার স্বপ্নের চেয়েও বড়। ২০০১ সালে ক্রিকেট খেলার মাঠে হঠাৎ তিনি ইনজুরিতে পড়ায় ক্রিকেটার না হতে পারলেও ঠিকই সফল হয়েছেন তিনি।

 

ইংলিশ যুব ক্লাবে আমির

কিশোর বয়সে তখন আমির হামজা। ক্রীড়া নৈপুণ্যে চমক দেখিয়েছেন তিনি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে গোলবার সামলাচ্ছেন তিনি। গোলরক্ষকের এ পরিচয় ছাপিয়ে গেছে তার অন্য এক পরিচয়। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ কিশোরই প্রথম যিনি ইংলিশ যুব ক্লাবে বাংলাদেশের নাম তুলে ধরেছেন। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবস্থান বেশ শক্তপোক্ত। এই যাত্রাও শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগ থেকেই। কিন্তু সে হিসেবে ফুটবলে অবস্থান যদি ধরা হয়, তবে তা ক্রিকেটের পুরো উল্টো। বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ফুটবলার অতীতে দেশের বাইরের লিগে খেলার সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু তা আটকে ছিল প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যেই। ক্লাব ফুটবলের মহাযজ্ঞ যে ইউরোপে, সেখানে খেলার কথা স্বপ্নেও ভাবার সক্ষমতা ছিল না। আর মানের বিচারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব সে তো সুদূর ভবিষ্যৎ। এমন অবস্থায় বিশ্বখ্যাত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সঙ্গে যদি কোনো বাংলাদেশি খেলোয়াড় হিসেবে নাম লেখাতে সক্ষম হন তবে তা অবশ্যই উচ্ছ্বাসের বিষয়। আজ থেকে ছয় বছর আগে সে কাজটিই করে দেখিয়েছেন আমির হামজা নামে দুরন্ত কিশোর।

 

মেসি রোনালদোর সঙ্গে

উপস্থাপক রেশমিন

মেসি, রোনালদোর সঙ্গে উপস্থাপক রেশমিন।

তারকায় ভরা উয়েফা বর্ষসেরা ফুটবলার আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপিংয়ের ড্র অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন! তিনি উপস্থাপিকা ও ক্রীড়া সাংবাদিক রেশমিন। অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিশ্ব ফুটবলের সব তারকা গিয়ে হাজির হয়েছিলেন মোনাকোতে। লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, জিয়ানলুইজি বুফন থেকে শুরু করে জিনেদিন জিদান, জোসেফ মারিয়া বার্তেমেউরাও ছিলেন উয়েফার অনুষ্ঠানে।

মেসি-রোনালদো-জিদানদের এক ছাদের নিচে নিয়ে জমকালো এক অনুষ্ঠান। যে কোনো বাংলাদেশি গর্ববোধ করতেই পারেন, কারণ উয়েফার অনুষ্ঠানের বিষয়ে চোখ বুলালেই দেখবেন উপস্থাপনার জায়গায় লেখা আছে রেশমিন চৌধুরীর নামটি। যুক্তরাজ্যের ক্রীড়া সাংবাদিকতা করা এই নারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। রেশমিনের জন্ম অবশ্য লন্ডনেই। ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর লন্ডন প্রবাসী এক বাংলাদেশি পরিবারে জন্ম তার। পড়াশোনাও করেছেন লন্ডনে। ওডফোর্ড কাউন্টি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার পর যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে স্নাতক করেছেন। পরে ২০০৩ সালে হার্লো কলেজে সাংবাদিকতার ওপর স্নাতকোত্তর করেছেন রেশমিন চৌধুরী। এর আগে রয়টার্স টিভি, বিবিসি, ব্লুমবার্গ, আইটিএন ও রিয়াল মাদ্রিদ টিভিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে রেশমিন চৌধুরীর। এরপর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ইউরোপা লিগের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন বিটি স্পোর্টসে।

 

কিক বক্সিং চ্যাম্পিয়ন রুকসানা

হ্যাংলা-পাতলা গড়নের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুকসানা বেগম এখন সারা বিশ্বের এক আলোচিত নারী ক্রীড়াবিদ। শক্তিশালী এই নারী বক্সারের জন্ম লন্ডনের সেভেন কিংস এলাকায়। লন্ডনে জন্ম নিলেও রুকসানার দাদার বাড়ি বাংলাদেশের সিলেট জেলার বালাগঞ্জে। বাবা আওলাদ আলী এবং মা মিনারা বেগম দম্পতির তিন ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে রুকসানা দ্বিতীয়। ২০০৬ সালে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট মিনস্টার থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন রুকসানা। থাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট অর্জন করেছেন আবারও। সুইডিশ সুজানা স্যালমিজার্ভিকে পরাস্ত করেন তিনি। এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে তাকে বিশ্বের সেরা ১০ নারী বক্সারকে পরাস্ত করতে হয়। এর আগেও চার বছর নিজের দখলে রেখেছেন ব্রিটিশ কিক বক্সিং ও মুয়ে থাই চ্যাম্পিয়নের সম্মান। ১৬ বছর বয়সে রুকসানা সর্বশেষ বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ রুকসানা পর পর চার বছর নিজের দখলে রেখেছেন ব্রিটিশ কিক বক্সিং ও মুয়ে থাই চ্যাম্পিয়নের সম্মান। পঞ্চমবারের মতো মুয়ে থাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের সম্মান অর্জন করেন রুকসানা। কিক বক্সিং কঠোর শারীরিক কসরতনির্ভর একটি খেলা। এ খেলায় পর পর পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হন রুকসানা। বক্সিংয়ে সাফল্যের জন্য শারীরিক সক্ষমতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একজন সফল বক্সার হিসেবে রুকসানাকেও কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে শরীরচর্চা করতে হয়। শরীরের ওজন ধরে রাখতে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। রুকসানা চেষ্টা করেন শরীরের ওজন ৪৮ থেকে ৫০ কেজির মধ্যে ধরে রাখতে। এ জন্য শুধু নিয়মমাফিক খাওয়া-দাওয়াই নয়; চলে ঘামঝরা নানা কসরত। সপ্তাহে ছয় দিন দুই ঘণ্টা করে চলে ব্যায়াম।

 

অস্ট্রেলিয়ায় খ্যাতি কুড়িয়েছেন রিদওয়ান

বয়স তার তখন মাত্র আঠারোর কোঠায়। সে সময়ই অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলে খ্যাতি কুড়িয়েছেন। তার পুরো নাম রিদওয়ান হান্নান। বাংলাদেশি এই তরুণ আমেরিকা থেকে উচ্চতর স্কলারশিপ পান। রিদওয়ান আসলে যেমনটি চেয়েছেন ঠিক তেমনটাই পেয়েছেন। ক্যানবেরা একাডেমির হয়ে খেলেন এই তরুণ ডিফেন্ডার। ক্যানবেরার প্রশিক্ষক ফুটবল বিশ্বে ব্যাপক পরিচিত একটি ক্লাব। এখান থেকেই বেরিয়ে আসেন বিশ্বের বড় বড় ক্লাবগুলোর সেরা ফুটবলার। ক্যানবেরার এই ক্লাবে সপ্তাহে পাঁচ-ছয়বার কঠিন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেরা খেলোয়াড়দের বের করে আনা হয় এবং সেসব খেলোয়াড়কে পরবর্তীতে বড় আসরের দু-একটি খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগও দেওয়া হয়। তাই তো অন্য সবার মতো তার স্বপ্নও বড় ক্লাবের খেলোয়াড় হওয়া।

 

 

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে

ইতালির ক্রিকেটে রাকিব

স্বপ্ন ছিল লাল-সবুজের জাতীয় জার্সি গায়ে মাঠে দাপিয়ে বেড়ানো। ছিলেন সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, এনামুল হক, তাইজুল ইসলাম এবং আবুল হোসেনদের সঙ্গে একই দলে। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলেও খেলেন এক সময়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ঠিকই, তবে বাংলাদেশের নয়; ইতালির হয়ে। তিনি প্রবাসে পাড়ি জমানো বাংলাদেশি রাকিবুল হাসান।

ইতালির তেরঙা আঁকা জার্সিতেই ক্রিকেট খেলেন এই বাংলাদেশি। এমনিতেই ইতালি ফুটবল বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমাদৃত। তবে বেশ কিছুকাল আগেও ছিল না ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতি। আশির দশকের গোড়ায় ছোট আকারে ক্রিকেটের চর্চা শুরু হয় ইতালিতে। এখন আইসিসির ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগ, বিশ্ব টি-টোয়েন্টির বাছাই পর্ব ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপসহ বেশ কিছু আয়োজনে খেলছে ইতালি।

 

 

কানাডিয়ান ফুটবল ক্লাবে

সামিত সোম

কানাডিয়ান ক্লাব মন্ট্রিয়াল ইম্প্যাক্টে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সামিত সোম চুক্তিবদ্ধ হয়ে অনেকেরই নজর কাড়েন। মিডফিল্ডের দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নেমে ফুটবলীয়  নৈপুণ্যে নিজের নামকে দিন দিন তুলে নিয়েছেন ভিন্ন উচ্চতায়। ১৯ বছর বয়সে মাঠে নেমে কাঁপিয়েছেন বিশ্ব ক্রীড়া মঞ্চ। মেজর লিগ সকারের ড্রাফটে সামিত সোমের নামের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে বাংলাদেশের নামও। এর আগে খেলে এসেছেন কানাডার বিভিন্ন স্তরের ফুটবলে। তখনই ফুটবল বিশেষজ্ঞদের চোখে পড়েন তিনি। মেজর লিগে নাম লেখানোর আগে খেলেছেন কানাডার স্কুল পর্যায়ে। ২০১৪ সালে কানাডার অনূর্ধ্ব-১৮ দলে ডাক পান তিনি। এরপর কানাডার অনূর্ধ্ব-২০ দলের অধিনায়ক হিসেবে তুলেছেন নিজের নাম। কানাডার হয়ে অভিষেক ম্যাচেই জয় ছিনিয়ে নিয়ে প্রশংসা কুড়ান।

সর্বশেষ খবর