সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

করোনা পরবর্তী বিশ্বমিডিয়া

আ ব দু ল কা দে র

করোনা পরবর্তী বিশ্বমিডিয়া

দেশে দেশে সংকটের মধ্যে পথচলায় অভ্যস্ত সংবাদমাধ্যম। কখনো অর্থনীতি, কখনো বা রাজনীতি, কখনো বা দুর্যোগ পরিস্থিতি, সবই গণমাধ্যমের জন্য চ্যালেঞ্জ। কিন্তু করোনা মহামারি পরিস্থিতি বিশ্ব সংবাদমাধ্যমগুলোকে যে সংকটে ফেলেছে তা নজিরবিহীন। দুই বছর পর সেই পরিস্থিতি সামলে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বমিডিয়া...

 

গতি ফিরেছে নিউইয়র্ক টাইমসে

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। স্থানীয়দের কাছে এটি কেবল ‘টাইমস’ নামেই পরিচিত। বিশ্বজুড়ে রয়েছে পত্রিকাটির পাঠক। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর থেকে প্রকাশিত দৈনিক এটি। ১৮৫১ সালে হেনরি জার্ভিস রেমন্ড এবং জর্জ জোন্স গণমাধ্যমটির প্রতিষ্ঠাতা। প্রাথমিকভাবে সে সময় রেমন্ড ও জোন্স অ্যান্ড কোম্পানি দ্বারা পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল। বর্তমানে গণমাধ্যমটির মালিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস কোম্পানি। কোম্পানিটি আরও ১৫টি সংবাদপত্র প্রকাশ করে, যাদের মধ্যে ‘ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন’ ও ‘বস্টন গ্লোব’ অন্যতম। প্রকাশক আর্থার অক্স সুলৎসবার্গারের হাত ধরে গোটা বিশ্ব পরিস্থিতিও সংবাদের মাধ্যমে তুলে ধরে গণমাধ্যমটি। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ মেট্রোপলিটন পত্রিকা।

তবে এটি দেশটির গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমগুলোর একটি। কিন্তু ২০২০ সালের করোনাভাইরাস মহামারি বদলে দিয়েছিল বিশ্ব পরিস্থিতি। সেই ধকল সামলে খবর প্রকাশ করেছিল স্বনামধন্য গণমাধ্যমটি। বিশ্বের অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের মতো কঠিন সময় পার করেছে নিউইয়র্ক টাইমসও। তবে দুই বছর পর বদলেছে সেই পরিস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্রে করোনার বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় পুরনো দৃশ্যপটে ফিরতে শুরু করেছে পত্রিকাটি। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ ছেড়ে পত্রিকা অফিসে বাড়তে থাকে গণমাধ্যমকর্মীদের আনাগোনা। বিশ্বের অন্যান্য গণমাধ্যমের মতো এই পত্রিকাটিও এখন ব্যাপক সক্রিয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের খবরাখবর সংগ্রহ ও প্রকাশে। শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমটি বর্তমানে ছাপানো পত্রিকার চেয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

 

বিশ্বের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ইয়োমিউরি শিমবুন

দ্য ইয়োমিউরি শিমবুন, জাপানি ভাষায় প্রকাশিত জনপ্রিয় দৈনিক। এটি কেবল জাপানে নয়, বিশ্বের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকগুলোর অন্যতম। সংবাদমাধ্যমটি টোকিও, ওসাকা, ফুকুকা ছাড়াও জাপানের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে প্রকাশিত হয়। গণমাধ্যমটির মালিক ইয়োমিউরি গ্রুপ। এর প্রধান কার্যালয় জাপানের ওটিমাচি, চিওদা, টোকিও শহরে অবস্থিত। এখন গণমাধ্যমটির প্রধান ইয়োচি ফুনাবাসি। ১৯২৪ সালে শোরিকি মাতসুতারো কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেওয়ার পর পত্রিকাটির মোড় ঘুরিয়ে ফেলেন চমকপ্রদ নিউজ কাভারেজ এবং পুরো পৃষ্ঠায় রেডিও অনুষ্ঠান গাইড যুক্ত করে। জাপানের তথ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ১ কোটির বেশি সংখ্যা ছাপিয়ে থাকে পত্রিকাটি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এর প্রকাশ সংখ্যা ১ কোটি ২১ হাজার কপি। পত্রিকাটি জাপানের অন্যতম অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষক। কিন্তু ২০২০ সালের করোনা মহামারি পাল্টে দিয়েছিল পত্রিকাটির প্রকাশ সংখ্যা। মহামারির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত কমতে থাকে এর প্রকাশ সংখ্যা। করোনার সর্বশেষ ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন বিধি-নিষেধ শিথিল হওয়ায় পত্রিকাটির অফিসে বাড়তে থাকে গণমাধ্যমকর্মীদের যাতায়াত। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে প্রকাশ সংখ্যাও। ১৯৪৮ সালে পত্রিকাটি ইয়োমিউরি পুরস্কার ঘোষণা করে। দীর্ঘ এ পথচলায় আরও অনেক পত্রিকা প্রকাশ করছে এশিয়া নিউজ নেটওয়ার্কের সদস্য দ্য ইয়োমিউরি শিমবুন।

 

আগের অবস্থানে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে প্রকাশিত অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। স্বণামধন্য পত্রিকাটির এশিয়ান ও ইউরোপীয় সংস্করণও প্রকাশ হয়। এটি ইংরেজি ভাষাভিত্তিক আন্তর্জাতিক পত্রিকা। ২০০৭ সালের তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী পত্রিকাটির সার্কুলেশন প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ। এ ছাড়াও গণমাধ্যমটির অনলাইন মাধ্যমে সাবস্ক্রাইব সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ ৩১ হাজার। গণমাধ্যমটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক খবরাদি ও কার্যক্রমগুলো প্রকাশের জন্য সমাদৃত। ২০০৩ সালের আগ পর্যন্ত এটি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা। তবে পরবর্তীতে ইউএসএ টুডে পত্রিকার কাছে এটি তার প্রথম স্থান হারায়। করোনা মহামারির কারণে পত্রিকাটি ভীষণ সংকটে পড়ে। তবে অনলাইন সংস্করণ গণমাধ্যমটির জৌলুসতা ধরে রেখেছিল। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় এর সার্কুলেশনও বাড়তে থাকে কয়েক গুণ। আউট ব্যুরো অব সার্কুলেশনের মতে, পত্রিকাটিতে প্রতিদিন প্রায় ২৪ লাখ কপি প্রকাশিত হতো। করোনা-পরবর্তীতে প্রিন্ট মিডিয়াটি ফিরে পায় তার পুরনো রূপ।

 

বিক্রি বেড়েছে ডেইলি মিররের

যুক্তরাজ্যের ঐতিহ্যবাহী ট্যাবলয়েড ডেইলি মিরর। ১৯০৩ সালে ব্রিটিশ জাতীয় দৈনিক ট্যাবলয়েডটির যাত্রা শুরু। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড দৈনিকটির মূল মালিক ছিল রিচ পিএলসি। ১৯৯৭ থেকে ২০০২ পর্যন্ত পত্রিকাটির মাস্টহেড কিংবা ট্যাগ লাইন ছিল দ্য মিরর। নিত্য নতুন সংবাদ ও রম্যরসে ভরপুর বিনোদন জগতের পাঠকদের নজর কাড়ে ম্যাগাজিনটি। ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ সংবাদমাধ্যমটির প্রকাশিত সংখ্যা ছিল প্রায় ৭ লাখ ১৭ হাজার। পরের বছরই সেই সংখ্যাটা নেমে দাড়ায় ৫ লাখ ৮৭ হাজারে। তবে দৈনিকটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগে ২০২০ সালের করোনা মহামারিকালে। একই মালিকানাধীন ট্যাবলয়েড ডেইলি মিরর, ডেইলি এক্সপ্রেস ও ডেইলি স্টার (ইউকে) পত্রিকা থেকে সাড়ে ৫০০ কর্মী ছঁাঁটাই করেছিল কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, গত করোনা মহামারিকালে তাদের বিক্রি মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় আয় প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়। তবে ব্যয় সংকোচন করে ধাক্কা সামলে নিয়েছিল সংবাদমাধ্যমটি। যুক্তরাজ্যে করোনা পরিস্থিতি শিথিল হওয়ায় পত্রিকাটি আগের রূপ ফিরে পায়। বাড়তে থাকে এর প্রচার সংখ্যাও।

 

কঠিন সময় পেরিয়ে আনন্দবাজার

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা আনন্দবাজার। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত একটি শতাব্দী প্রাচীন ভারতীয় দৈনিক পত্রিকা এটি। কলকাতার এবিপি প্রাইভেট লিমিটেড পত্রিকাটির প্রকাশক। প্রকাশ-সংখ্যার ভিত্তিতে এটি ভারতের বাংলা ভাষায় বহুল প্রচারিত দৈনিক। ভারতীয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুসারে, ভারতের কলকাতা, নয়াদিল্লি, ভুবনেশ্বর, রাঁচি, শিলিগুড়িসহ বেশ কয়েকটি শহরে নিয়মিত প্রকাশিত হয় পত্রিকাটি। ইন্ডিয়ান রিডারশিপ সার্ভে অনুসারে, পত্রিকাটি ১৫৬ লাখ মানুষ পাঠ করেন। প্রচার সংখ্যায় পত্রিকাটি দৈনিক ১০ লাখেরও অধিক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। করোনা মহামারিকালে কঠিন সময় পার করে গণমাধ্যমটি। এর প্রধান সম্পাদক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় পদত্যাগ করেন মহামারিকালে। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন বার্তা সম্পাদক ঈষানী দত্ত রায়। জানা গেছে, কর্মী ছাঁটাইয়ের জের ধরে পদত্যাগ করেন পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক। তবে করোনা পরিস্থিতি শিথিল হওয়ায় ধীরে ধীরে পুরনো জৌলুসতায় ফিরতে থাকে আনন্দবাজার পত্রিকা। সার্কুলেশন, অনলাইন সাবস্ক্রাইবার সবই বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

 

করোনার ধাক্কা সামলেছে আলজাজিরা 

আরব বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। জেএসসি হলো আলজাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক মালিকানাধীন। কাতার সরকারভিত্তিক জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরা। কাতারের দোহা সদর দফতর থেকে সম্প্রচারিত একটি সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল এটি। প্রাথমিকভাবে এটি আরবি ভাষায় চালু হলেও বর্তমানে এটি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল হিসেবে প্রচার হচ্ছে। জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমটি একাধিক ভাষায় ইন্টারনেট ও টিভি চ্যানেলসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নেটওয়ার্কে প্রসারিত হচ্ছে। আলজাজিরা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশের জন্য এটি ভীষণ জনপ্রিয়। ২০১৭ সালে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসরীয় সরকার কাতারের কূটনৈতিক সংকটের সময় কাতার সরকারের কাছে সংবাদমাধ্যমটি বন্ধের দাবি জানিয়েছিল। করোনার ধাক্কা লাগে আরব বিশ্বের গণমাধ্যমটিতে। করোনায় সাময়িক সমস্যায় পড়েছিল সংস্থাটি। তবে সংবাদ মাধ্যমটির ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগেনি। ধনী রাষ্ট্রের সরকার কর্তৃক পরিচালিত হওয়ায় দ্রুত সংকট কাটিয়ে ওঠে সংবাদমাধ্যমটি।

 

ঘুরে দাঁড়িয়েছে সিয়াটল টাইমস

দ্য সিয়াটল টাইমস, যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় আফ্রো-আমেরিকান সংবাদমাধ্যম। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। ১৮৯১ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রথম পত্রিকাটি প্রকাশ হয়। ১৮৯৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্লেথেন পরিবার জনপ্রিয় পত্রিকাটির পরিচালনার দায়িত্বে আছে। পত্রিকাটির কাগজের ৫০.৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে ব্লেথেন পরিবার। বাকি ৪৯.৫ শতাংশ কাগজের মালিক ম্যাকক্ল্যাচি কোম্পানি। সিয়াটল টাইমসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল সিয়াটল পোস্ট-ইন্টেলিজেন্সার পত্রিকা। দুর্ভাগ্যবশত সিয়াটল পোস্ট-ইন্টেলিজেন্সার ২০০৯ সালে বন্ধ হয়ে যায়। ওয়াশিংটন রাজ্য এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের যে কোনো সংবাদপত্রের মধ্যে সিয়াটল টাইমস সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদমাধ্যম। ২০২০ সালের করোনা মহামারি জনপ্রিয় পত্রিকাটিতে ব্যাপক আঘাত হানে। মহামারিকালে পত্রিকাটির বিজ্ঞাপন কমে যায় অন্তত ৫০ শতাংশ। যদিও বর্তমান পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভিন্ন। জনজীবন স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যেতে থাকে সিয়াটল টাইমসও। নিয়মিত পত্রিকাটির বিজ্ঞাপন ও প্রচার সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

 

মিসরে ব্যাপক জনপ্রিয় আল আহরাম

আল আহরাম সর্বাধিক প্রচারিত মিসরীয় দৈনিক পত্রিকা। সংবাদমাধ্যমটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো পত্রিকা হিসেবে সমাদৃত। আল আহরাম আরবি রচনার রীতির একটি প্রভাবশালী উৎস হিসেবে ব্যাপকভাবে বিবেচিত। পত্রিকাটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৮৭৫ সালে। এর প্রকাশক আল আহরাম পাবলিশিং হাউস। জানা গেছে, ১৮৭৫ সালে লেবাননের দুই ভাই বেশারা তাকিয়া ও সালিম তাকিয়া আল আহরাম প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫২ সালের অভ্যুত্থানের পর জামাল আবদেল নাসের পত্রিকাটিকে জাতীয়করণ করেন। মিসরীয় তথ্য অনুসারে, দৈনিক ১০ লাখ সংখ্যা প্রকাশিত হয় পত্রিকাটিতে। মিসরে প্রকাশিত মূল সংস্করণ ছাড়াও, কাগজটি আরও দুটি আরবি-ভাষা সংস্করণ প্রকাশ করে। যার মধ্যে একটির পাঠক আরব বিশ্বের এবং অন্যটির আন্তর্জাতিক পাঠক। জনপ্রিয় পত্রিকাটি ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় সংবাদ সংস্করণও প্রকাশ করে থাকে। করোনা মহামারির প্রভাব পড়ে আল আহরাম পত্রিকাতেও। যদিও আল আহরাম কর্তৃপক্ষ সেই সংকট কাটিয়ে উঠেছে। তবে তা সম্ভব হয়েছিল আপৎকালীন ফান্ডের কারণে। বিজ্ঞাপনের ক্ষতি পুষিয়ে আবারও পুরনো সার্কুলেশনে ফিরে এসেছে সংবাদমাধ্যমটি। প্রচার সংখ্যা ও সত্য সংবাদ পরিবেশনে মিসরের সাধারণ মানুষের কাছে এটি ব্যাপক সমাদৃত।

 

সংকট কাটিয়ে এগিয়ে যায় এবিসি

অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (এবিসি) হলো অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংবাদমাধ্যম। এটি মূলত অস্ট্রেলিয়ান সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। এর পরিচালনা পর্ষদও দেশটির সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। জনপ্রিয় গণমাধ্যমটি অস্ট্রেলিয়ার সর্বজনীন মালিকানাধীন সংস্থা। যা রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন এবং সম্পূর্ণরূপে জবাবদিহিতামূলক সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান। ১৯৩২ সালে এবিসি ফেডারেল পার্লামেন্টের একটি আইন দ্বারা অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কমিশন (এবিসি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর এটি পরিচালিত হয় ১৯৮৩ সালের অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী। ২০২০ সালে করোনা মহামারির প্রভাব পড়ে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমেও। গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, মহামারিকালে অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (এবিসি) প্রায় আড়াই শ কর্মী ছাঁটাই করেছিল। এর আগে ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার কনজারভেটিভ সরকার তিন বছরের ইনডেক্সেশন ফ্রিজ ঘোষণা করেছিল। ফলে করোনা পরিস্থিতিতে সংকট আরও বৃহৎ আকার ধারণ করেছিল। যদিও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকায় বদলে যায় গণমাধ্যমটির আর্থিক অবস্থা।

 

স্বরূপে ফেরার প্রচেষ্টায় বিবিসি

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম সংস্থা ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)। পৃথিবীর প্রথম জাতীয় সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমটি ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিবিসির সদর দফতর হলো ‘ব্রডকাস্টিং হাউস’। এটি যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে অবস্থিত। ইংরেজি ভাষাভিত্তিক গণমাধ্যমটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভাষায় সংবাদ পরিবেশন করে থাকে। তবে ১৯৪১ সাল থেকে বিবিসি বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করে। সংস্থাটির অনলাইন ভার্সনও ভীষণ জনপ্রিয়। করোনার থাবা থেকে বাঁচতে পারেনি বিখ্যাত গণমাধ্যমটি।  মহামারিকালে কয়েক শ কর্মীকে ছাঁটাই করার ঘোষণা দেয়। করোপোরেশন জানায়, এতে ৮ কোটি পাউন্ড বা ৮৮০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। করোনাকালীন সংকট কাটিয়ে জনপ্রিয় গণমাধ্যমটি আবার ফিরছে পুরনো রূপে। বর্তমান বিশ্বে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি মুহূর্তের খবরাখবর প্রকাশ করছে গণমাধ্যমটি। সরাসরি সম্প্রচারেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমটি বর্তমানে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে আরও বেশি সক্রিয় এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

 

সংবাদে সমাদৃত লন্ডনভিত্তিক রয়টার্স

লন্ডনভিত্তিক আরও একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। ১৮৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সংবাদমাধ্যমটি। টেলিভিশন বা স্যাটেলাইট চ্যানেলের পাশাপাশি গণমাধ্যমটি অনলাইনেও ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়। এর সদর দফতর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে অবস্থিত। এটি থমসন রয়টার্সের একটি বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান। সারা বিশ্বে ২০০টি স্থানে এর দফতর রয়েছে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত রয়টার্স সংবাদ সংস্থা স্বাধীন কোম্পানি রয়টার্স গ্রুপ পিএলসির অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পুঁজিবাজারের তথ্য প্রদান করে। ২০০৮ সালে থমসন করপোরেশন রয়টার্স গ্রুপকে কিনে নেওয়ার পর রয়টার্স সংবাদ সংস্থা থমসন রয়টার্সের অংশ হয় এবং মিডিয়া বিভাগ সৃষ্টি করে। রয়টার্স ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, ইতালীয়, স্পেনীয়, পর্তুগিজ, রুশ, উর্দু, আরবি, জাপানি, কোরীয় ও চীনা ভাষায় সংবাদ পরিবেশন করে। কারোনাকালে নিত্য নতুন সংবাদ পরিবেশনে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে রয়টার্স। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের বিস্তারিত প্রতিবেদনও তুলে ধরছে গণমাধ্যমটি। করোনার ধাক্কা ও আর্থিক ধকল সামলে আবার স্বরূপে ফিরেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

সংকট কাটিয়েছে কানাডিয়ান প্রেস

দ্য কানাডিয়ান প্রেস, সংক্ষেপে সিপি। এটি লা প্রেস কানাডিয়ান নামেও খ্যাত। কানাডার এই জাতীয় বার্তা সংস্থার সদর দফতর টরন্টোতে। ১৯১৭ সালে অলাভজনক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। ২৫০ জন সংবাদকর্মী নিয়ে কানাডিয়ান প্রেসের ব্যুরো কার্যক্রম বিস্তৃত। ১৯৯৬ সালে কানাডিয়ান প্রেস ব্রেকিং নিউজ সার্ভিস চালু করে। কানাডিয়ান প্রেস একই সঙ্গে ফটো-সাংবাদিকদের মাধ্যমে বৃহত্তম আর্কাইভ গড়ে তুলেছে। কানাডায় এটিই ছিল প্রথম অনলাইন আর্কাইভ। বর্তমানে এতে ছবির সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। প্রতিদিন এই আর্কাইভে যুক্ত হয় ১০০ ডিজিটাল সংবাদচিত্র যা সংবাদপত্র, টেলিভিশন, বই এবং ম্যাগাজিনে ব্যবহৃত। কানাডিয়ান গণমাধ্যমটিও করোনার থাবায় পড়ে। সমগ্র বিশ্ব যখন করোনাভাইরাসে কাবু, তখন অন্যান্য গণমাধ্যমের মতো এখানেও কর্মী ছাঁটাই করে সিপি কর্তৃপক্ষ। তবে ধীরে ধীরে করোনা পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। বদলাতে থাকে গণমাধ্যমটির পরিস্থিতিও। বিজ্ঞাপন আর প্রচারে এগিয়ে যায় গণমাধ্যমটি। পেছনে ফেলে আসে করোনা মহামারির সংকট। নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ ও পরিবেশনে এটি কানাডার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম।

 

বদলে যায় আটলান্টিক ম্যাগাজিন

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরনো ম্যাগাজিন দ্য আটলান্টিক। প্রায় ১৬৩ বছরের পুরনো সংবাদমাধ্যম এটি। দীর্ঘ এই পথচলা ও সাধারণের পছন্দের সংবাদমাধ্যমটি করোনা মহামারিতেও টিকে ছিল। জানা গেছে, মহামারিকালে প্রচার সংখ্যা অনেকাংশ কমে যায়। আর্থিকভাবে ভীষণ সংকটে পড়ে ‘দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিন’। বিজ্ঞাপন কমে যেতে থাকে সংস্থাটির। ফলে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় কর্মী ছাঁটাইয়ের। আপৎকালীন সময় ৬৮ কর্মী ছাঁটাই করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন এসেছে। করোনা বিধি-নিষেধ শিথিল হওয়ায় বদলে যায় প্রেক্ষাপট। আবার ঘুরে দাঁড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। আবারও গণমাধ্যমকর্মীদের আনাগোনায় জমজমাট হয়ে ওঠে ম্যাগাজিন সদর দফতর। যদিও আগের অবস্থানে ফিরে যেতে আরও সময় লাগবে। প্রাথমিক সংকট কাটিয়ে উঠেছে তারা। তবে শুধু এটিই নয়, ভাইস, বাজফিডসহ অনেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম আর্থিক সংকটে পড়ে কর্মী ছঁাঁটাই, বেতন কমানো ও বিনা বেতনে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়ার পথ বেছে নিয়েছিল। তবে সংবাদমাধ্যমগুলো আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

সর্বশেষ খবর