রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিশ্বজুড়ে নান্দনিক বিমানবন্দর

বিশ্বজুড়ে নান্দনিক বিমানবন্দর

ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর

কৃষ্ণ সাগরের কাছাকাছি, ইস্তাম্বুল থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর। বিশ্লেষকদের মতে, তুরস্কের এই বিমানবন্দরটি দুটি বিশ্বের প্রবেশদ্বার। প্রায় ৯০ লাখ যাত্রী ধারণক্ষমতাসহ বিশ্বের বৃহত্তম টার্মিনাল ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর। প্রাচ্য এবং ইউরোপের ঐতিহ্যের মিশেলে করা হয়েছে বৃহত্তম এই বিমানবন্দরটির নকশা। যার সঙ্গে সূক্ষ্মভাবে যুক্ত করা হয়েছে ইস্তাম্বুলের সমৃদ্ধশীল স্থাপত্য ইতিহাস। চার ধাপে চলছে বিশ্বের নান্দনিক এই বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ। বছরে প্রায় ১৫ কোটি যাত্রীর পরিষেবার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে এর নির্মাণ প্রক্রিয়া। একই সঙ্গে এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিউটি ফ্রি শপিং কমপ্লেক্সেও; যার আয়তন প্রায় ৫৩ হাজার বর্গমিটার। তুরস্কের জনবহুল শহর ইস্তাম্বুলের নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। দেশটির এভিয়েশন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, একসঙ্গে ৫০০টি বিমান অবস্থান করতে পারবে এই বিমানবন্দরে। তবে এই বিশাল যাত্রীসেবার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক বছর। কারণ এর বাস্তব রূপ নেবে ২০২৯ সালে। ফলে তখন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলে বিমানবন্দরটি আরও শক্তিশালী রূপ নেবে। তবে বর্তমানে বছরে প্রায় ৯ কোটি যাত্রীর সেবা প্রদান করে ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর কতৃপক্ষ। সম্প্রতি বিশ্বের সেরা বিমানবন্দরের স্বীকৃতি পেয়েছে এটি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচলবিষয়ক সাময়িকী গ্লোবাল ট্র্যাভেলারের পাঠকদের জরিপে এই স্বীকৃতি পেয়েছে। পাশাপাশি আরও কয়েকটি সূচকে শীর্ষে অবস্থান করছে এই বিমানবন্দর। তন্মধ্যে বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দরের তালিকায় এর অবস্থান সপ্তম। যদিও ২০১৯ সালে এই তালিকায় বিমানবন্দরটির অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। এর বাইরেও এটি বিশ্বের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন একটি বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দরে খাদ্য ও পানীয় পরিষেবার মান, কেনাকাটা এবং করবিহীন কেনাকাটার জন্য শীর্ষে রয়েছে। বিমানবন্দরে মাত্র একটি টার্মিনাল হলেও এর অভ্যন্তরে রয়েছে ক্যাফে, রেস্তোরাঁ এবং বার। আছে শুল্কমুক্ত শপিং জোনও। আরও আছে ২৫ হাজার গাড়ি ধারণক্ষমতার ভূগর্ভস্থ পার্কিং স্পেস, হোটেল এবং বেশ কয়েকটি কনফারেন্স হল।

 

হিথ্রো এয়ারপোর্ট

লন্ডনে অবস্থিত হিথ্রো বিমানবন্দর। এটি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর। যা বিশ্বের অন্যতম বিলাসবহুল এবং জনপ্রিয় বিমানবন্দর। যাত্রী পরিষেবায় এটি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর। এর টার্মিনাল-৫ একাই বছরে ৬ কোটির বেশি যাত্রীদের সেবা প্রদান করে থাকে। এভিয়েশন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ২০১৯ সালের মতো চলতি বছরেও একই স্থানে অবস্থান করছে হিথ্রো বিমানবন্দর। এটি ইউরোপেরও ব্যস্ততম বিমানবন্দর। বিএমআই ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও ভার্জিন আটলান্টিক এয়ারওয়েজ হিথ্রোকে প্রধান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে। লন্ডনের কেন্দ্র থেকে হিথ্রো মাত্র ১২ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে অবস্থিত। এর পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত দুটি সমান্তরাল রানওয়ে ও পাঁচটি টার্মিনাল আছে। যা মোট ১২২৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এটি হিথ্রো এয়ারপোর্ট হোল্ডিংসের মালিকানায় পরিচালিত হয়। প্রায় ৯০টি এয়ারলাইনস হিথ্রোয় চলাচল করে। এসব এয়ারলাইনস বিশ্বের ১৭০টি শহরকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। বছরে প্রায় ৮ কোটির বেশি যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে। বিমানবন্দর কমপ্লেক্সে বাচ্চাদের জন্য খেলার আলাদা স্থান রয়েছে। আছে বিশেষজ্ঞ লাউঞ্জ, গেম জোন, শিশুদের ঘুমানোর কক্ষ এবং বিনোদনের অনেক স্লাইড। সাশ্রয়ী মূল্যে গিফট শপ থেকে উপহার ও ম্যাগাজিন কিনতে পারবেন। এর রেস্তোরাঁগুলোয় পছন্দমতো খাবার পাওয়া যাবে। বিমানবন্দর থেকে খুব সহজে ভাড়ায়চালিত ক্যাব ও ট্যাক্সি পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। এমনকি পছন্দমতো হোটেলে বুকিং দিতে চাইলে তাও মিলে যাবে এখান থেকেই। বিমানবন্দরের স্পেশাল অ্যাপ সার্ভিস আপনাকে প্রয়োজনীয় লোকেশানের সন্ধান দেবে।

 

চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

সম্ভবত সিঙ্গাপুর এশিয়ার ছোট্ট দেশগুলোর মধ্যে একটি এবং এর এয়ারপোর্টগুলোও অন্যান্য দেশের চেয়ে আলাদা নয়। যদিও সিঙ্গাপুরে এমন এক শহুরে রাজ্য রয়েছে; যা তার প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে এমন একটি মেগা সিটি আছে, যা সবুজে আচ্ছাদিত এবং এই শহরেই রয়েছে একটি বিমানবন্দর। এর নাম চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যা বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি আধুনিক মেগা সিটির মতো; যেখানে যাত্রীদের জন্য রয়েছে ভ্রমণ সুবিধা, নান্দনিক প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে শপিং মল এবং রেস্তোরাঁ। এর প্রধান আকর্ষণ- অভ্যন্তরীণ জলপ্রপাত দ্য রেইন ভরটেক্স, সিসেদো বন উপত্যকা বা অভ্যন্তরীণ বাগান এবং ক্যানোপি পার্ক যা এক বিনোদনমূলক ওয়ান্ডারল্যান্ড। এটি শুধু একটি অ্যাডভেঞ্চারই প্রদান করে না, বিশ্বের বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে অত্যাশ্চর্যও বটে। এককথায় ছবির মতো সাজানো-গোছানো একটি বিমানবন্দর। এটি বিলাসবহুল তো বটেই, যাত্রীসেবা প্রদানেও সেরা। ২০১৯ সালে ব্যস্ত বিমানবন্দরের তালিকায় তৃতীয় হয়েছিল; চলতি বছরেও বিমনবন্দরটি একই তালিকায় একই স্থান দখল করে আছে। স্কাইট্র্যাক্সের তালিকায় আন্তর্জাতিক বিমান রুট হিসেবে এটি বিশ্বসেরা বিমানবন্দরের খেতাব অর্জন করেছে। এমনকি এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ট্রানজিট পয়েন্টও। সপ্তাহে এখান থেকে কমপক্ষে ২০০ ঠিকানায় উড়ে যায় বিমান। প্রায় ৫ হাজার বিমান নামে এই বিমানবন্দরে। অন্তত ৮০টি আন্তর্জাতিক এভিয়েশন কোম্পানি এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করে। যাত্রীদের জন্য এখানে রয়েছে সিনেমা থিয়েটার, মাল্টিমিডিয়া এন্টারটেইনমেন্ট হল এবং স্পা সেন্টারসহ আরামদায়ক বিশ্রামাগার।

 

বেইজিং ড্যাক্সিং এয়ারপোর্ট

২০১৯ সালে বেইজিং তাদের নতুন বিমানবন্দর বেইজিং ড্যাক্সিং এয়ারপোর্ট চালু করেছে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম একক টার্মিনাল বিমানবন্দর। এটি চীনের অত্যাশ্চর্য স্থাপত্য এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মিশ্রণে নির্মিত। এই বিমানবন্দরটি প্রায় ১০ লাখ বর্গ মিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত, যা প্রায় ৯৭টি ফুটবল মাঠের সমান। এটি বিশ্বের ব্যয়বহুল বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম। বেইজিং ড্যাক্সিং প্রতি বছর ৭৫ লাখের বেশি যাত্রী পরিষেবায় সক্ষম, যেখানে প্রায় সাতটি বিশালাকার রানওয়ে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৪০ সালের মধ্যে এটি বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দরে পরিণত হবে। এর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যাত্রীদের চেক-ইন প্রক্রিয়াটিকে ৩০ মিনিটে নামিয়ে এনেছে। স্টারফিশ-আকৃতির নকশায় নির্মিত বিমানবন্দরে যাত্রীদের কখনোই গেট থেকে আট মিনিটের বেশি হেঁটে যেতে হয় না। এটি বেইজিংয়ের কেন্দ্র থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার এবং তিয়ানআনমেন স্কয়ার থেকে ৫৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অনেক শপ এবং রেস্তোরাঁ যাত্রীদের পরিষেবায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকে।

 

প্যারিস সিডিজি এয়ারপোর্ট

চার্লস দে গল বিমানবন্দরটি তিনটি টার্মিনাল ভবন নিয়ে গঠিত। এটি ফ্রান্সের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। স্থানীয়রা একে রসি এয়ারপোর্ট কিংবা প্যারিস সিডিজি নামে চেনেন। প্যারিস সিডিজি বিশ্বের ব্যস্ততম ১০ বিমানবন্দরের তালিকায় অবস্থান করছে। ২০১৯ সালে ব্যস্ত বিমানবন্দরের তালিকায় এর অবস্থান ছিল ষষ্ঠ; চলতি বছরেও চার্লস দে গল কর্তৃপক্ষ যাত্রী পরিষেবার মাধ্যমে একই অবস্থান ধরে রেখেছে। প্রতিদিন প্রায় ২ লাখের বেশি যাত্রী এবং বছরে প্রায় ৫৭ কোটি যাত্রী তাদের যাতায়াতে এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেন। বিমানবন্দরটি ফ্রান্সের এয়ার এভিয়েশনের প্রধান কেন্দ্র। প্যারিস অ্যারোপোর্ট ব্র্যান্ডের অধীনে এটি পরিচালিত হয়। যাত্রী পরিষেবা বিবেচনায় সিডিজি কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরের চতুর্থ টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এই বিমানবন্দরে চমৎকার যাত্রী পরিষেবার পাশাপাশি রয়েছে বৃহত্তম শপিং সেন্টার এবং বিনোদনের সুব্যবস্থা। আছে বিনামূল্যে ওয়াইফাই, লাগেজ-বোর্ডিং পরিষেবা, রেস্তোরাঁ, ডিউটি ফ্রি শপিং জোন এবং গাড়ি পার্কিংসহ আরও নানা পরিষেবা।

 

দোহার হামাদ বিমানবন্দর

এ যেন মরুভূমির বুকে এক সাংস্কৃতিক মরূদ্যান। দোহা শহরের হামাদ বিমানবন্দরজুড়ে প্রদর্শিত বিস্তৃত শিল্পের নানা সংগ্রহ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে সমাদৃত। যাত্রীরা বিমানবন্দরে প্রবেশের পর এমন এক পরিবেশে আবদ্ধ থাকেন, যা তাদের শিল্পপূর্ণ অভিজ্ঞতা প্রদান করে। স্থাপত্যগতভাবে এটি বিশ্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এয়ারপোর্ট টার্মিনাল কমপ্লেক্স। কেবল স্থাপত্য এবং শিল্পে নয়, যাত্রীসেবা প্রদানেও এগিয়ে রয়েছে হামাদ এয়ারপোর্ট। এটি কেনাকাটা, বিলাসবহুল যাত্রীসেবা এবং খাবারের জন্য বিখ্যাত। এটি একেবারেই নতুন, ঝকঝকে-তকতকে এয়ারপোর্ট। উন্নত যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তার পাশাপাশি, অল্প সময়ে ইমিগ্রেশন, লাগেজ ইন-আউটের জন্যও এর খ্যাতি রয়েছে। এটি বিশ্বের ফাইভস্টার এয়ারপোর্টগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতিবছর প্রায় ৫০ কোটি যাত্রী এই কমপ্লেক্স ব্যবহার করে থাকেন। এখানে রয়েছে বিনোদন কক্ষ, বিশ্রাম কক্ষ, শিশুদের খেলার জায়গাসহ বহু যাত্রীসুবিধা। এর অভ্যন্তরে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক এবং ফিটনেস সেন্টার।

 

সুইজারল্যান্ডের জুরিখ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট

স্থাপত্য উপাদান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিলেমিশে এক নির্মল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে জুরিখ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। এখানে কেবল নকশার শৈল্পিকতা প্রদর্শন হয় না; এর ভিতরে-বাইরের শিল্পস্থাপনা ও ভাস্কর্যে সংগ্রহ, যাত্রীদের এক সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা প্রদান করে; যা দেশটির সমৃদ্ধ শৈল্পিক ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলে। এটি জুরিখের ডাউনটন থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর। এটি সুইস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের প্রাথমিক কেন্দ্র। সাধারণ যাত্রীসেবার পাশাপাশি ভিআইপি যাত্রীসেবায়ও এর সুনাম রয়েছে। প্রতিবছর ২৫ কোটি যাত্রী বহির্বিশ্বে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই বিমানবন্দর হাব ব্যবহার করে থাকেন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সাধারণত দুই ধাপে এই বিমানবন্দরের নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলেছেন। এক. এয়ারসাইড সেন্টার (শপিং ও ডাইনিং হাব), দুই. অবজারভেশন ডেক (নির্মল ও মনোরম পরিবেশ)। জুরিখ বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে রয়েছে সুইস জাদুঘর। এই বিমানবন্দরের লাগেজ সার্ভিস অসাধারণ। পানাহার, প্রসাধন, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়, হোটেল রিজারভেশনসহ শিশুদের খেলার জায়গা রয়েছে বিস্তৃত। মিলবে মিনি থিয়েটারও। ইন্টারনেটসহ যাত্রীসেবার অনেক আয়োজনই আছে এখানে। মোদ্দা কথা, এই বিমানবন্দরে আছে প্রায় ৪০টি বার, রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফে। আছে ৬০টি ইন-টার্মিনাল স্টোর, ঝরনা এবং বিউটি সেলুন। এই বিমানবন্দরে ট্রানজিট নেওয়া যাত্রীদের দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মিলবে নানা সেবা।

 

মিউনিখ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, জার্মানি

জার্মানির ছোট্ট শহর মিউনিখ থেকে মাত্র ২৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত মিউনিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি জার্মানির দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। তবে ইউরোপের ব্যস্ত বিমানবন্দরের তালিকায় এর অবস্থান সপ্তম। যাত্রীসেবা প্রদানেও এটি সেরার তালিকায় ওপরের সারিতে রয়েছে। পাশাপাশি এটি লুফথানসা জার্মান এয়ারলাইনসের দ্বিতীয় কেন্দ্র। বছরে প্রায় ৩৮ কোটি মানুষ বহির্ভ্রমণে এই কমপ্লেক্সটি ব্যবহার করেন। এর চমৎকার দিক হলো- এই বিমানবন্দরের সঙ্গে গোটা শহরের যোগাযোগ রয়েছে। চারদিকে ছুটে যাওয়া যায় সহজেই। স্থাপত্যশৈলীতেও এটি যাত্রীদের চমকে দিতে পারে সহজেই। রঙিন কাচে মোড়ানো এয়ারপোর্টটি এতটাই বিশাল যে, হাতে সময় থাকলে এটি ঘুরে-বেড়ানোর জন্য আলাদা ট্যুর প্যাকেজ নেওয়া যায়। এটি ফাস্ট ফুড ও ড্রিংকের চমৎকার স্থান। সস্তা বলে যাত্রীরাও এখানে দুই হাত ভরে কেনাকাটা করেন। ১৫০টি বড় শপ, ৫০টি রেস্টুরেন্টে বসে আয়েশ করে খাওয়াদাওয়া সেরে নেওয়া যায়। এই বিমানবন্দরকে অনেকে ছোট একটি শহর বলেই মানেন। এটি শহরের কেন্দ্রের মতোই; যা ভ্রমণকারী এবং দর্শনার্থীদের সব ধরনের সুবিধা প্রদান করে থাকে। ফার্মেসি থেকে শুরু করে জিম সেন্টার, চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, সার্ফিং, সিনেমা থিয়েটার, মিনি পার্ক, গলফ কোর্স... কী নেই এতে। সার্ভিস সেন্টারের ছড়াছড়ি এখানে। লন্ড্রি বা ফ্যাক্স- সব পাবেন হাতের কাছেই। মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ডলার ভাঙিয়ে নিন, চলে যান টেরেসে।

 

সিউল ইনচিওন বিমানবন্দর

দক্ষিণ কোরিয়ার শহর ইনচিওন অত্যাধুনিক পরিবহন-পরিষেবার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তাই এই শহরের ইনচিওন বিমাবন্দরটি যেমন আধুনিক তেমনি চিত্তাকর্ষকও। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির টার্মিনালজুড়ে প্রদর্শিত রয়েছে সমসাময়িক শিল্পের সংগ্রহ। বলা হয়, কোরিয়ান এই বিমানবন্দরটি শিল্পপ্রেমীদের স্বর্গ, যেখানে সমসাময়িক শিল্পের বিস্তৃত সংগ্রহ রয়েছে। যা যাত্রীদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে এক নতুন মাত্রা প্রদান করেছে। এসব সংগ্রহ এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছে, যা নান্দনিকভাবে আনন্দদায়ক এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম বিমানবন্দর, পাশাপাশি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দরও। এটি ২০২০ সালে বিশ্বের সেরা ট্রানজিট বিমানবন্দর এবং এর একটি টার্মিনাল (টার্মিনাল-২) সেরার খেতাব কুড়িয়েছে। যাত্রীসেবার তালিকায় এটি চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। ওয়ার্ল্ড এয়ারপোর্ট অ্যাওয়ার্ডে এয়ারপোর্ট অব দ্য ইয়ার অর্জন করা দক্ষিণ কোরীয় প্রাক্তন বিমানবন্দর এটি। আরামদায়ক এবং বিলাসিতার জন্য ইনচিওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অতুলনীয়। যাত্রীদের জন্য এখানে রয়েছে স্লিপিং রুম। আইস স্কেটিং রিংক এবং ছোটখাটো গলফ কোর্স। স্পা সেন্টারে রয়েছে শরীর ম্যাসাজের সুবিধা। বিমানবন্দরের ভিতরে বিশাল পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন গাছের সারির মাঝে বসে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য চেয়ার রয়েছে। কোরিয়ান সংস্কৃতির জাদুঘরের পাশাপাশি কেনাকাটার জন্য রয়েছে বিশাল ডিউটি ফ্রি শপিং মল।

 

মারাকেচ মেনারা বিমানবন্দর

মারাকেচ মেনারা- মরক্কোর মারাকেচ-সাফি অঞ্চলের রাজধানী শহরের একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি উত্তর আফ্রিকার অন্যতম প্রবেশদ্বার; যা ইউরোপকে উত্তর আফ্রিকার সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এবং অনেক আরব দেশের ফ্লাইট পরিচালনা করে। জানা গেছে, ২০২৪ সালে এটি উত্তর আমেরিকা থেকে ফ্লাইট গ্রহণ করবে। মারাকেচ শহরের কেন্দ্র থেকে এটি মাত্র সাত কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। বিমানবন্দরটিতে মাত্র দুটি টার্মিনাল রয়েছে; যা একই কমপ্লেক্সে অবস্থিত। এটি মরক্কোবাসীর উজ্জ্বল সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করে। মারাকেচ বিমানবন্দরটির স্থাপত্যগুলো ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শৈল্পিক নকশা ও সাংস্কৃতির দারুণ নিদর্শন। আধুনিকতা ও মরক্কোর ঐতিহ্যের অনন্য মিশ্রণ- উত্তর আফ্রিকার এই মারাকেচ মেনারা বিমানবন্দর। যার প্রতিটি স্থাপনায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে উত্তর আফ্রিকাসহ আরবের সংস্কৃতি। সাধারণত দুইভাবে মারাকেচ বিমানবন্দরের নান্দনিক সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। এক. ঐতিহ্যবাহী মরোক্কান সংস্কৃতি; দুই. হস্তশিল্প (হস্তনির্মিত কারুকাজ সংবলিত পণ্য)। বিমানবন্দরটি বছরে প্রায় ৫০ লাখের বেশি যাত্রীসেবা প্রদান করে। ২০১৯ সালে ৬৩ লাখ যাত্রীসেবা প্রদান করেছে। এর একই কমপ্লেক্সে আছে এটিএম, মুদ্রা বিনিময় অফিস, সিম কার্ড বিক্রয় পয়েন্ট, শুল্কমুক্ত শপিং, লাগেজ ট্রলি, বার-রেস্তোরাঁ, প্রার্থনা কক্ষ, ইনডোর পার্কিং, বিনামূল্যে ওয়াইফাই ইত্যাদি।

সর্বশেষ খবর