বুধবার, ২৭ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

মরা কপোতাক্ষ দখলের মহোৎসব

মরা কপোতাক্ষ দখলের মহোৎসব

কপোতাক্ষ নদ ভৈরব নদীর একটি শাখা নদী। প্রকৃতপক্ষে কপোতাক্ষের উৎপত্তি মাথাভাঙ্গা নদী থেকে। এ উৎপত্তি স্থলে মাথাভাঙ্গার একটি বিরাট বাঁক ছিল। নদীর পথ সংক্ষিপ্ত করার জন্য একটি খাল খনন করে মাথাভাঙ্গার মূল স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন করা হলে মাথাভাঙ্গার সঙ্গে কপোতাক্ষের সংযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং পরবর্তী সময়ে ভৈরব থেকে মূল স্রোতধারা পেয়ে থাকে। তালা উপজেলার কাছে উঁচু পাড় দেখে অনুমান করা হয় যে, এখানে নদী একসময় ৭৫০ মিটার প্রশস্ত ছিল; বর্তমানে প্রায় ১৭০ মিটার। চাঁদখালীর কাছে নদীটি প্রায় ৩০০ মিটার চওড়া। নদীটি প্রায় শুকিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড গঙ্গা থেকে পানি পাম্প করে এ নদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করে এলাকায় জলসেচের ব্যবস্থা করেছে। এ প্রকল্পের নাম গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প। কপোতাক্ষের পানি যশোর জেলাতেও কোথাও কোথাও পাম্প করে সেচের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। কপোতাক্ষ নদ এবং এর শাখা-প্রশাখা দিয়ে কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনার প্রায় ৩,৩১৫ বর্গ কিমি এলাকার জল নিষ্কাশিত হয়। নদীটি খুলনা জেলার প্রায় সর্বত্রই নাব্য এবং লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা আছে। নদীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৬০ কিমি।

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত এক সময়ের খরস্রোতা কপোতাক্ষ নদ আজ মৃতপ্রায়। বিশেষ করে এর উজানের অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। পানি প্রবাহ না থাকায় শুরু হয়েছে নদের জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা। নদীর জায়গায় গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসন, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। চলছে চাষাবাদ ও ঘের তৈরি করে মাছ চাষ। দীর্ঘদিন ধরে এরকম চলে আসলেও প্রশাসনের এদিকে কোনো নজর নেই।

কপোতাক্ষ নদ সাতটি জেলার ২০টি উপজেলা, ১০টি পৌরসভা ও ৯৫টি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে চৌগাছার তাহেরপুর থেকে ছুটিপুর পর্যন্ত নদের দৈর্ঘ্য ২৩ কিলোমিটার। নদীর চৌগাছা উপজেলার নারায়ণপুর, পেটভরা, টেঙ্গুরপুর, কঙশারিপুর, দিঘরসিংহা, মাশিলা, কদমতলা, কাবিলপুর এলাকায় নদের জায়গা দখল করে চাষাবাদ, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি-ঘর পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে। অনেক স্থানে বহুতল ভবনও নির্মাণও করা হয়েছে। চৌগাছা বাজারের পাশে ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় সবার চোখের সামনেই চলছে নদের জায়গা দখলের মহোৎসব।

চৌগাছার বাসিন্দা শাহানুর আলম বলেন, প্রভাবশালীদের দখলে এখন কপোতাক্ষ নদ। দখলকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন কিছুই করতে পারছে না। এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে অচিরেই নদটি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। নদ পাড়ের জেলে অমল কুমার বলেন, 'নদী আর নদী নেই। এই নদীতে সরকারিভাবে প্রতিবছর মাছ অবমুক্ত করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক ছায়ায় থাকা প্রভাবশালীরা নদীতে পাটা দিয়ে মাছ চাষ করে। গরিব জেলেরা এ মাছ আহরণ করতে পারে না।

এসব দেখার কেউ নেই।' চৌগাছার এবিসিডি কলেজের ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক টিপু সুলতান বলেন, কপোতাক্ষের পানি প্রবাহ নেই বললেই চলে। দিনে দিনে নদটি মরার উপক্রম হয়েছে। উজানের পানি প্রবাহ না থাকায় একদিকে নদটির তলদেশ ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে চলছে দখলের প্রতিযোগিতা। এভাবে চলতে থাকলে অল্পদিনেই নদের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে। আর সেটি হলে এ অঞ্চলের মানুষ ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ জন্য নদটি খনন করা এবং অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

সাইফুল ইসলাম, যশোর

 

সর্বশেষ খবর