জুয়ার অর্থ লেনদেনকারী অ্যাকাউন্টের তালিকা তৈরি হচ্ছে। সেই সঙ্গে যেসব পোর্টালে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে সেগুলো বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিভিন্ন ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপস এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে জুয়ার কার্যক্রম। এতে বিদেশে অর্থ পাচারসহ হুমকির মুখে তরুণ সমাজ। তাই অনলাইনে জুয়া, বেটিং এবং পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধে করণীয় বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মোবাইল অপারেটর এবং মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে নিয়ে গতকাল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ সহকারী বলেন, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্ট ইউনিট ও বিটিআরসির সহায়তায় এ বছর মে মাস থেকে ৪ হাজার ৮২০টি মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী অ্যাকাউন্ট (এমএফএস) এবং ১ হাজার ৩৩১টি পোর্টাল বন্ধ করা হয়েছে।
একটি সাইট বন্ধ করলে অপরাধীরা একাধিক সাইট তৈরি করে এবং এমএফএস অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার পর তারা অ্যাপস বেইজড পদ্ধতিতে জুয়া চালু করে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি মোবাইল অপারেটরদের প্যাকেট কোরে পপ আপ ব্লক বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানকে অ্যাকটিভ ক্রলার ব্যবহার করে জুয়া ও বেটিং বন্ধ করতে হবে। নভেম্বরে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) চালু করা হবে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী (অব.) বলেন, এনইআইআর চালু হলে মোবাইলে বিদ্যমান সিম পরিবর্তন করে পরবর্তী সিম চালু করতে নিবন্ধন প্রয়োজন হবে, ফলে এর মাধ্যমে অপরাধ কমে আসবে। অন্যদিকে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান তাদের অ্যাপসে পুনঃপুন ভেরিফিকেশন চালুর মাধ্যমেও প্রতারণা কমিয়ে আনা যাবে।
মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা জানান, জুয়ার সাইটগুলো অনেক সিকিউরড ও বিভিন্ন নামে হওয়ায় মাল্টিলেয়ারে কাজ করতে হবে। এজন্য বিটিআরসি, নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
ইতোমধ্যে ৫৮ হাজার এমএফএস নম্বর বন্ধ করা হয়েছে উল্লেখ করে ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্ট ইউনিটের প্রতিনিধিরা জানান, বিএফআইউ কর্তৃক বিভিন্ন এমএফএস-ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যাদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাদের ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এনআইডি ও সিম ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে এমএফএস অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের জন্য বিটিআরসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বিত একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন তারা।
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের প্রতিনিধি জানান, এনটিএমসির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারকে তথ্য দিয়ে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১২৩টা জুয়ার অ্যাপস বন্ধসহ এ-সংক্রান্ত অসংখ্য ওয়েব লিংক/ইউআরএল ব্লক করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনের ধারা ব্যবহারের পরামর্শ দেন তারা।
ডিজিএফআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মোবাইল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই ব্লাকলিস্ট পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন যাতে কালো তালিকাভুক্ত সিম চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাওয়ার থেকে সংশ্লিষ্ট অপারেটরের নিকট সংকেত চলে আসে। এনএসআইয়ের প্রতিনিধিরা সভায় অবগত করেন যে, দেশীয় চক্রের পাশাপাশি দুবাই ও মালয়েশিয়ার থেকেও একটি চক্র যুক্ত হয়ে অনলাইনে অপরাধ করে যাচ্ছে। তারা মেয়েদের বিদেশে নিয়ে কলসেন্টার চালু করে জুয়া ও বেটিংয়ের প্রচারণা চালায়। মোবাইল ও আইএসপি অপারেটরদের কনটেন্ট শনাক্তের সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তারা।
সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ২ মাসে অনলাইনে বেটিংয়ে জড়িত ২ হাজারের বেশি সিম শনাক্ত, বেটিংয়ের কাজে ব্যবহৃত ৬০০ সাইট ও ৫০টি অ্যাপস চিহ্নিত করা হয়েছে।